সঞ্জু রায়, বগুড়া:
বিএনপির রাজনীতির আতুড়ঘর হিসেবে বিবেচনা করা হয় জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি বগুড়াকে। ক্ষমতার বাইরে থেকে দীর্ঘ বছরের রাজনৈতিক লড়াই ও সংগ্রামের সবকিছুর অনুপ্রেরণাও ছিলো বগুড়া। মামলা, হামলাকে বরণ করেও আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে অটল ছিলো বগুড়া জেলা বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের শত শত ত্যাগী নেতাকর্মী। এরই মাঝে গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনে পতন হয়েছে শেখ হাসিনার সরকারের যার মধ্য দিয়ে আবারো মাঠ পর্যায়ে সরব হয়ে উঠেছে বিএনপির রাজনীতির মাঠ। দলের যখন সুদিন ফিরছে তখন দুঃসময়ের ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন করতে ভোলেননি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শুরুতেই নিজ জেলা বগুড়ায় তারেক রহমানের নির্দেশনায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির তিন অঙ্গ সংগঠন জাতীয়বাদী যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবকদলের মেয়াদোত্তীর্ন কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠন ঘোষণা করা হয়েছে যেখানে প্রাধান্য পেয়েছে তরুণ ও ত্যাগী নেতাকর্মীরা। আর এতেই নতুন করে ইতিবাচক চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে বগুড়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে।
আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দিয়ে বগুড়া জেলা যুবদলে সভাপতি হিসেবে সদ্য সাবেক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সদস্য সচিব আবু হাসান কে। যারা দুজনেই তৃণমূলের ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে এ পর্যন্ত এসেছেন। মামলা, হামলা, জেল, জুলুম সহ্য করেও প্রতিকূল সময়ে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় ছিলেন তারা। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া আবু হাসান এর আগে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন শাহ সুলতান কলেজ ও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হিসেবে। প্রতিকূল সময়ে পালন করেছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিবের দায়িত্বও। বিগত সময়ের সকল আন্দোলনে তার নেতৃত্বে এক ঝাঁক তরুণ নেতাকর্মী সর্বদাই সক্রিয় ছিল রাজনীতির মাঠে। সকল প্রকার হরতাল, অবরোধ কিংবা বিক্ষোভ কর্মসূচি বাস্তবায়নেও রাজপথে আবু হাসান এর নেতৃত্ব ছিল প্রশংসনীয় যে কারণে বারংবার পুলিশি নির্যাতনসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদেরও হামলার শিকার হয়েছেন আবু হাসান। এছাড়াও প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও বিএনপির অঙ্গ সংগঠনে থেকেও মিডিয়ার সাথে একটি ইতিবাচক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন তরুণ এই নেতা যার কারণে জনগণের দোরগোড়ায় বিএনপি’র বার্তাগুলো পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রেও ভূমিকা ছিল তার।
এদিকে একই দিন ঘোষণা দেয়া হয় শহর যুবদলের কমিটিও যেখানে সভাপতি হিসেবে আহসান হাবিব এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আদিল শাহরিয়ার গোর্কিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে সরকার মুকুলকে সভাপতি, রাকিবুল ইসলাম শুভকে সাধারণ সম্পাদক এবং সাইদুল ইসলামকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল বগুড়া জেলা কমিটি পুনর্গঠন করে দেওয়া হয়েছে। যাদের মাঝে শুভ সদ্য ভেঙে যাওয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক ও সাইদুল ইসলাম জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এছাড়াও বহুল প্রতীক্ষিত জেলা ও শহর ছাত্রদলেরও কমিটি ঘোষণা করে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাতিল করে ছাত্রনেতা হাবিুবর রহমান সন্ধানকে সভাপতি এবং এম আর হাসান পলাশকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। এছাড়াও শহর ছাত্রদলের সভাপতি হিসেবে এস এম রাঙ্গা ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আতিকুর রহমান রিমনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। যাদের এক মাসের মধ্যে পুর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রত্যেক নেতাকর্মীরই যাচাই করা হয়েছে বিগত দিনের দলীয় কাজকর্ম, আন্দোলন সংগ্রাম, ত্যাগ, তিতিক্ষাসহ দলের প্রতি ভালবাসা। দীর্ঘ দিনের সরকার বিরোধী আন্দোলনের কারনে বিএনপির অঙ্গদলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। নির্যাতনের মুখে বা ভয়ে অনেকেই দলীয় কর্মসুচিতে অনুপস্থিত বা নিষ্ক্রিয় থাকলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাকর্মীরা রাজনীতির মাঠে বরাবরই ছিলেন সক্রিয়। পরিসংখ্যান বলছে ছাত্রদলের নেতৃত্বে আসা সন্ধান, পলাশ, রাঙ্গা আর রিমন যারা প্রত্যেকেই তারুণ্যের শক্তিতে প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে থেকেছেন সম্মুখ সারিতে। জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া সন্ধান আজিজুল হক কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের রাজনীতিকে করেছেন সক্রিয়। প্রতিটি আন্দোলন কিংবা রাজপথের লড়াইয়ে জেল জুলুমের ভয় না করে বেগবান করেছেন সকল কর্মসূচিকে।
ছাত্রদলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন সময় সময়ে নিজ দলেরই অনেক কর্মী নানাভাবে সন্ধানকে সমালোচিত করার চেষ্টা করলেও তার লড়াই, সংগ্রাম আর ত্যাগকে মূল্যায়িত করেছে দল। তার নেতৃত্বে ছাত্রদলের রাজনীতি ইতিবাচক গতিতে এগিয়ে চলবে প্রত্যাশা তাদের।
এই তিন অঙ্গসংগঠনের তৃণমূলের কর্মীরা বলছেন, তারেক রহমান দলের জন্যে নিবেদিত কর্মীকে সম্মান দিতে জানেন। যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলে যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারা প্রত্যেকেই দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ। যারা সুদীর্ঘ বছর মামলা হামলাকে সঙ্গী করে রাজপথে লড়াই করে যাচ্ছেন। তারা কখনো দলের সাথে বেইমানি করেনি আর এমন কর্মীদের মূল্যায়িত করাই খুশি তারা।
এদিকে নতুন করে বিএনপি’র তিন অঙ্গ সংগঠন পুনর্গঠনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় কৃষকদল ও বগুড়া জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাবেক সাংসদ মোশারফ হোসেন বলেন, ছাত্র জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত হতে পেরেছি যেখানে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মীরও অগ্রণী ভূমিকা ছিল। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক লড়াই, সংগ্রাম, ত্যাগ ও দলের প্রতি নিবেদিত থাকার মানসিকতাকে বিবেচনা করেই বগুড়ায় জেলা বিএনপি তিন অঙ্গ সংগঠনে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব গঠন করা হয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন এই নেতৃত্ব বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের হাতকে শক্তিশালী করবে। দল যে বিশ্বাস এবং ভরসা থেকে এই তিন অঙ্গসংগঠনে নেতৃবৃন্দদের দায়িত্ব দিয়েছেন তা তারা আদর্শের সাথে পালন করবে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন এই নেতা।
আর নতুন এই নেতৃত্বের বিষয়ে বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, চলতি মাসের শুরুতে জাতীয়তাবাদী যুবদল , ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের মেয়াদোত্তীর্ন কমিটি ভেঙে দেয়া হয়। এরপর বিগত দিনের কর্মকাণ্ড বিবেচনায় নিয়ে উল্লেখিত কমিটিগুলোতে বিভিন্ন মানদণ্ডে উত্তীর্নদের নেতৃত্বে আনা হয়েছে। দলকে সুসংগঠিত করাসহ ইতিবাচক ধারায় রাজনীতিকে এগিয়ে নিতে নেতৃবৃন্দরা ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। এছাড়াও জেলা বিএনপির এই কর্ণধার বলেন, বিএনপি এবং দেশনায়ক তারেক রহমান বরাবরই ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন করতে জানে। এখন প্রাথমিকভাবে এই তিন অঙ্গ সংগঠনে শুধুমাত্র সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়েছে যখন পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষিত হবে সেখানে মূল্যায়িত হবে অন্যান্য ত্যাগী নেতাকর্মীরাও।