রুকুনুজ্জামান, পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন, প্রথম ইউনিটি ১২৫ মেগাওয়াট হলেও উৎপাদন কম।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টা ৩২ মিনিট থেকে ১ নম্বর ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা হয়েছে। ওই ইউনিটটি ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন হলেও, সেটি থেকে ৬০-৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। যা জাতীয় গ্রিডে যোগ করা হচ্ছে। এটি চালু রাখতে ৮০০-৯০০ মেট্রিকটন কয়লা প্রয়োজন হয়।
বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ২ নম্বর ইউনিট বন্ধ রয়েছে। ৯ সেপ্টেম্বর ইলেকট্রো হাইড্রোলিক ওয়েল পাম্প নষ্ট হওয়ায় ৩ নম্বর ইউনিটটি বন্ধ হয়ে যায়। ১ নম্বর ইউনিটটি বহুদিনের পুরোনো। গত ৬ সেপ্টেম্বর রাতে সংস্কার কাজের জন্য সেটিও বন্ধ করা হয়েছিল। মেরামত শেষে আজ রাত ৮টা ৩২ মিনিট থেকে ১ নম্বর ইউনিটটি চালু করা হয়েছে। ওই ইউনিটটি ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন হলেও তা থেকে প্রতিদিন ৬০-৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। যা জাতীয় গ্রিডে যোগ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে, তারা ১৫ দিন সময় চেয়েছে। চীন থেকে মেশিন এলেই ৩ নম্বর ইউনিটও চালু করা সম্ভব হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিট হলেও বেশির ভাগ সময়ই দুটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। বাকি একটি বন্ধ থাকে। ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে কেন্দ্রের ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ২ নম্বর ইউনিট বন্ধ রয়েছে। যা থেকে উৎপাদন হতো ৬৫-৭০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে গত জুলাইয়ের শেষ দিকে বন্ধ হয়ে যায় ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ৩ নম্বর ইউনিটের উৎপাদন। যা থেকে ১৯০-২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এরপর শুধুমাত্র ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ১ নম্বর ইউনিট থেকেই বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছিল, যা থেকে ৬০-৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়।
এদিকে ১ মাস ৬ দিন বন্ধ থাকার পর গত ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৩য় ইউনিটটির উৎপাদন শুরু হয়। যা দুই দিন পরেই ৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ওয়েল পাম্প নষ্ট হওয়ার কারণে আবারও উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এতে পুরোপুরি বন্ধ হয় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন। তৃতীয় ইউনিট চালুর দিন (৬ সেপ্টেম্বর) ১ নম্বর ইউনিটটি সংস্কারকাজের জন্য বন্ধ করা হয়। ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে কোনো বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছিল না। এতে করে উত্তরের ৮ জেলা লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে।
জানা গেছে, ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন কার্যক্রম করে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হারবিন ইন্টারন্যাশনাল। পাঁচ বছরের চুক্তি মোতাবেক আগামী বছর তাঁদের মেয়াদ শেষ হবে। চুক্তি মোতাবেক, কেন্দ্রটির উৎপাদন সচল রাখতে ছোট ধরনের মেরামত ও যন্ত্রাংশ সরবরাহের কথা থাকলেও তার কিছুই করেনি চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যে কারণেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে বারবার ত্রুটি দেখা দিলেও সঠিকভাবে মেরামত করা সম্ভব হয়নি। সেই কারণেই বিদ্যুৎ উৎপাদন কাজ ব্যাহত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির সরবরাহকৃত কয়লার ওপর নির্ভর করে এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। বর্তমানে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কোল ইয়ার্ডে কয়লা মজুত রয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে দৈনিক কয়লা সরবরাহ করা হয় প্রায় ৩ থেকে সাড়ে তিন হাজার মেট্রিক টন। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির তিনটি ইউনিট চালু রেখে স্বাভাবিক উৎপাদনের জন্য দৈনিক প্রায় ৪ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন। তবে তিনটি ইউনিট একই সঙ্গে কখনই চালানো হয়নি। #