ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতাঃ
শেখ হাসিনার ট্রেনে গুলি করা মামলার রায়ে পাঁচ বছর আগে ২০১৯ সালের ৩ জুলাই ফাঁসি, যাবজ্জীবন ও ১০ বছর মেয়াদে কারাদন্ডের আদেশ দেয়া হয়। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত ২৭ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিজয়-৭১-এর (১১) আদালতের বিচারক এ এস এম আব্দুল মবিন ও বিচারক মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের যৌথ বেঞ্চ কারাবন্দি ঈশ্বরদী বিএনপি’র ৪৭ নেতাকর্মীর মধ্যে ৩০ জনকে জামিনের আদেশ দেন। এই আদেশের প্রেক্ষিতে সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজশাহী কারাগার থেকে ১৮ জন নেতা-কর্মী মুক্তিলাভ করেছেন। এরআগে রবিবার ( ৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় পাবনা কারগার থেকে ১২ জন নেতা-কর্মী মুক্তিলাভ করেন।
জেলা বিএনপি’র আহব্বায়ক ও চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবের নের্তৃত্বে সহস্রাধিক বিএনপি’র নেতা-কর্মী শোভাযাত্রা করে কারামুক্তদেরফুল দিয়ে বরণ করেন।
এসময় হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, যে ঘটনায় বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলা ও সাজা দেওয়া হয়েছিল পৃথিবীর ইতিহাসে এমন জঘণ্যতম সাজা কেউ দেয়নি। পৃথিবী যতদিন টিকে থাকবে এধরণের ঘটনায় এমন সাজা কেউ দিবে না। ঘটনার সময় ওই ট্রেনে আমি ছিলাম জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ওই ট্রেনে অবস্থানকারী তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রীর জীবনহানির মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। কেউই আহত হয়নি, এমনকি কারও গায়ে এক টুকরো কাঁচের আঘাত লাগেনি। মামরায় যাদের আসমী করে সাজা দেওয়া হয়েছিল, তাদের অনেকেই ওইদিন কি ঘটনা ঘটেছিল তা জানতো না। অথচ এই মামলার ফরমায়েশি রায়ে ৯ জনকে ফাঁসি, ২৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ১৩ জনকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়। পাঁচটি বছর ধরে জেলাখানায় এসব নেতা-কর্মী নির্যাতিত হওয়ার সাথে সাথে পরিবারগুলো চরম দূর্ভেগের মধ্যে দিন কাটিয়েছে। যেকারণে শেখ হাসিনার যেভাবে পতন হয়েছে, এমন ঘটনাও পৃথিবীর ইতিহাসে নেই। পতন না হলে আমরা এদের কারামুক্ত করতে পারতাম না। এজন্য তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আরও বলেন, তিনি প্রথম দিন থেকেই এই পরিবারগুলোকে সাহায্য-সহযোগীতার পাশাপাশি মামলা-মোকাদ্দমা দেখভাল করেছেন। যেকারণে হাইকোর্টে জামিন পেতে কারও একটি টাকাও খরচ করতে হয়নি।
সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট জামিল আক্তার এলাহী জানান, ত্রিশ বছর আগে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে হামলা ও গুলিবর্ষণের মামলায় ২০১৯ সালের ৩ জুলাই চাঞ্চল্যকর ও বহুল আলোচিত ফরমায়েশি রায় দেন পাবনার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-১-এর বিচারক রস্তম আলী। ফরমায়েশি রায়ে স্থানীয় বিএনপি’র মোট ৫২ জন নেতাকর্মীর মধ্যে বিচার চলাকালীন ৪ জন এবং রায়ের পর কারাগারে মারা গেছেন ৩ জন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২ জন জামিনে মুক্ত রয়েছেন। এদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ১০ বছর সাজাপ্রাপ্ত ১২ জন ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১৮ জনকে জামিন দেন আদালত। মামলা চলাকালীন ও কারাগারে বন্দি অবস্থায় মৃত্যু বরণকারীদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।