ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতাঃ
বাংলাদেশের কয়েকটি গণমাধ্যমে, বিশেষত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত নির্মীণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং ভারতের কুদানকুলাম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের তুলনামূলক ব্যয় সংক্রান্ত বিষয়ের ব্যাখ্যা দিয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রিয় পারমাণবিক সংস্থা রসাটম। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রসাটম প্রেরীত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় ব্যয় সংক্রান্ত প্রকাশিত খবর আমাদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। বিষয়টি জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে বলে আমরা মনে করি এবং এর প্রেক্ষিতে এজাতীয় বিভ্রান্তি দূরীকরণে আমাদের বক্তব্য নিম্নে উপস্থাপন করা হলো :
“বানিজ্যিক গোপনীয়তার স্বার্থে রসাটম এবং তার পার্টনাররা পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ব্যয় সংক্রান্ত বিষয়টি কখনোই প্রকাশ করে না। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মান ব্যয়ের সঙ্গে কুদানকুলাম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মান ব্যয় তুলনা করাটা সঠিক বলে আমরা মনে করি না।
কুদানকুলাম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মান সম্পন্ন হবার পর যথাক্রমে ২০১৩ ও ২০১৬ সালে ভারতের জাতীয় গ্রীডের সঙ্গে যুক্ত হয়। উন্নত অবকাঠামো সমৃদ্ধ একই সাইটে দ্বিতীয় ধাপে বর্তমানে তৃতীয় ও চতুর্থ ইউনিট নির্মানাধীন রয়েছে। অন্যদিকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ছিল একটি ‘গ্রীনফিল্ড প্রকল্প’ যেখানে পুরো অবকাঠামো শূন্য থেকে নির্মাণ করতে হয়েছে।
বাংলাদেশে আমরা দুটি পরমাণু বিদ্যুৎ ইউনিট ইপিসি (ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রোকিউরমেন্ট, কন্সট্রাকশন) ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করছি, যার মধ্যে নির্মান ও ইন্সটলেশন ছাড়াও কমিশনিং ব্যয় (প্রকল্প ব্যয়ের প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ) অন্তর্ভূক্ত। অন্যদিকে, ভারতীয় প্রকল্প ইপি চুক্তি ভিত্তিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে, যার অর্থ হলো নির্মান ও কমিশনিং ব্যয়ের দায়িত্ব গ্রাহকের। নির্মান ও কমিশনিং ব্যয় ভারত দ্বারা নির্ধারিত যা রসাটমের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির মধ্যে অন্তর্ভূক্ত নয়।
ভারতীয় প্রকল্প সাইট এবং সেখানকার আবহাওয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রকল্প সাইট ও আবহাওয়ার মধ্যে বিশাল তারতম্য রয়েছ। অধিকন্তু, উভয় দেশে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর প্রাপ্যতা যেমন দক্ষ স্থানীয় শ্রমিক, বালি, পাথর ও ধাতব সামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দূরত্বের ক্ষেত্রেও ভিন্নতা রয়েছে।
সাইটে মাটির বিষয়টি বিশেষভাবে তাতপর্যপূর্ণ। কুদানকুলাম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ নির্মানের প্রথম পর্যায়ে পুরো সাইটের জরিপ করা হয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ ইউনিটের নির্মানের সময় শুধুমাত্র অতিরিক্ত কিছু বিষয় জানার জন্য স্বল্প মাত্রায় জরিপ চালানোর প্রয়োজন হয়েছিল। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, কুদানকুলাম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি মূলত অত্যন্ত শক্ত মাটি বা রক এর ওপর নির্মিত। অন্যদিকে, নদী তীরবর্তী স্থানে রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে মাটির স্ট্যাবিলাইজেশনের প্রয়োজন পড়ে যা অত্যন্ত ম্যাটেরিয়াল ও লেবার ইন্টেনসিভ একটি কাজ।
রূপপুর প্রকল্প বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ স্থাপনা। তাই এর নির্মানের জন্য অতিরিক্ত গবেষণা ও জরিপ (বিনিয়োগ বিবেচনা, পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন ইত্যাদি) এবং প্রাথমিক প্রযুক্তিগত কার্যক্রম (উদাহরণ স্বরূপ, শ্রমিকদের ক্যাম্প ইত্যাদি) পরিচালনা আবশ্যক ছিল। ভারতীয় প্রকল্পের ক্ষেত্রে এই কাজগুলো প্রথম ইউনিটগুলো নির্মানের সময় করা হয়েছিল।
ভারতে প্রথম ইউনিটগুলো নির্মানের সময় লজিস্টিক্স স্কীম, ট্রান্সপোর্ট হাব (প্রয়োজনীয় রড, সংরক্ষণ স্থান ও এলাকা) তৈরি ও ব্যবস্থাপনা কর হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই কাজগুলো এখনো চলমান।
ভারতে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের ফ্রথম ধাপে ব্লু-কলার প্রকৌশলীদের প্রশিক্ষণ অন্তর্ভূক্ত ছিল। বাংলাদেশের সঙ্গে বর্তমান চুক্তির অধীনে এই সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
ভারতীয় প্রকল্পের ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকরণ এবং ডিজাইন প্রনয়নে লোকালাইজেশনের অনুপাত ক্রমান্বয়ে এক ধাপ থেকে অন্য ধাপে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাশিয়া ইতিমধ্যে পাম্পিং যন্ত্রপাতি ও পাইপলাইন ফিটিংস প্রস্তুতকারী বৃহৎ ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করেছে যার ফলে দূর দূরান্ত থেকে পরিবহণ ব্যয় এবং এবং রাশিয়া থেকে যন্ত্রপাতি সরবরাহে ব্যয় হ্রাসের মাধ্যমে প্রকল্পের ব্যয় অনেকাংশেই সাশ্রয় করা সম্ভব হয়েছে।
সার্বিকভাবে বলতে গেলে উভয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ইকুইপমেন্ট ব্যয় একই তবে, কন্সট্রাকশন এবং ইন্সটলেশন ব্যয় উভয় দেশের সাথে সম্পাদিত চুক্তি মূল্যের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে”।