চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি
পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের ছোট শালিখা মহল্লার এস এম রেজাউল করিম পাশার একমাত্র ছেলে সাফিউর রহমান (১৯) চাঁদপুর ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি (আইএমটি)’র মেরিন টেকনোলজি বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। কিছুদিন পরই মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে দেশের বাইরে যাবার কথা ছিল তার। এরই মধ্যে শুরু হয় বৈষম্য বিরোধী কোটা আন্দোলন। গত ১৪ জুলাই চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে কোটা বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন সাফিউর। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৫ জুলাই ভোররাতে ঢাকার একটি হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন সাফিউর। সাফিউরের পিতার দাবী কোটা বিরোধী আন্দোলন করায় সাফিউরকে পরিকল্পিত ভাবে পয়জনিং করে মেরে ফেলা হয়েছে। একমাত্র ছেলেকে হারানো পিতা এ হত্যাকান্ডের সঠিক তদন্ত ও বিচার দাবী করেছেন। প্রায় বাকরুদ্ধ মা।
সাফিউরের পিতা রেজাউল করিম পাশা জানান, গত ১৪ জুলাই চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে কোটা বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয় তার ছেলে সাফি। আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কারণে একইদিন সন্ধ্যায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা চাঁদপুর ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি (আইএমটি)র শিক্ষার্থী রাসেলসহ অন্যান্যদেরকে তুলে আনতে ক্যাম্পাসে যায়। এ সময় শেষ বর্ষের ছাত্র সাফিউর রহমানসহ তার সহপাঠীরা তাদের বাধা দেন। তখন দুইপক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও মারামারি হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে চলে যায় নেতাকর্মীরা।
এরপর ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে তারা প্রায় ২শ’ শিক্ষার্থী ভেতরে অবস্থান করে। ১৫ জুলাই বেলা ১১টার দিকে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাফিউরকে জানানো হয় ওইদিন রাতে তাদের ক্যাম্পাসের হলে আক্রমণ করবে ছাত্রলীগ। তখন ওইদিন দুপুর ২টার দিকে সব হলে তালা দিয়ে ছাত্ররা কয়েকটি গ্রæপে ভাগ হয়ে সড়ক পথে ফরিদপুর, বরিশাল, নোয়াখালী, কুমিল্লা সহ বিভিন্ন জেলায় চলে যায়।
সাফিউর রহমান আশ্রয় নেয় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায়। পরে সেখানকার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে সমন্বয় করে নোয়াখালী চৌরাস্তা মোড়ে ও বেগমগঞ্জ উপজেলা শহরে ১৮ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন সময় কোটাবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। ২১ জুলাই রাতে জ্বর শুরু হয় তার। ২৪ জুলাই সাফিউর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন এবং ঐ দিনই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সেখানে চিকিৎসা না দিয়ে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, ভর্তি হওয়ার পর তাকে একটা ইনজেকশন দেওয়া হয় এবং মুখে বড়ি খাওয়ানো হয়। এরপর বিভিন্ন পরীক্ষা নীরিক্ষার নামে বারডেম হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই সময় আমার ছেলের শয্যার আশেপাশে অপিরিচত লোকের আনাগোনা দেখা যায়। তারা বিভিন্নভাবে আমাকে এবং আমার ছেলেকে নানা প্রশ্ন করে। আমাদেও পরিচয় জানার চেষ্টা করে। হাসপাতালে থাকাবস্থায় ২৪ জুলাই দুপুরে আমরা একসাথে দুপুরের খাবার খাই। মায়ের সাথে দুপুর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বিভিন্ন সময় কথা বলে সাফিউর।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাফিউর এর মুখে ফেনা ওঠা শুরু হয়। লালা বের হতে থাকে। কর্তব্যরত চিকিৎসককে জানালে তিনি মুখে খাবার একটি ট্যাবলেট দেন এবং বুকের সাথে জড়িয়ে রেখে মুখের লালা পরিস্কার করে দিতে বলেন। ছেলেটার সাথে হাসপাতালের বিছানায় বসে গল্প করেছি। খাবার খেয়েছি। মনে হয় নাই সে খুব বেশি অসুস্থ্য। মুখ দিয়ে লালা বের হওয়া শুরু হলে ডাক্তার ডেকেও চিকিৎসা মেলেনি। ২৫ জুলাই ভোররাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে শাফীউর। ভোর ৬টার দিকে ছেলের মরদেহ নিয়ে হাসপাতাল থেকে অনেকটা পালিয়ে আসতে হয় এক বাবাকে। তা না হলে ছেলের লাশ না পাওয়ার শঙ্কা ছিল।
সাফিউরের বাবা রেজাউল করিম পাশা বলেন, সাফিউরের (সাফির) মৃত্যুসনদে লেখা হয়েছে শ্বাসনালীর সংক্রমণে তার মৃত্যু হয়েছে। যা কখনই সম্ভব