লাল লিপস্টিকে প্রতিবাদ

// নারীদের প্রিয় প্রসাধনীগুলোর মধ্যে লিপস্টিক অন্যতম, যা তাদের সৌন্দর্য-চর্চার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে যুগের পর যুগ ধরে জনপ্রিয়। নানা প্রসাধনী আসা-যাওয়ার পরও লিপস্টিক তার স্বকীয় অবস্থান ধরে রেখেছে। এর মধ্যে লাল লিপস্টিক নারীদের কাছে বিশেষভাবে সমাদৃত। ইতিহাসেও লাল লিপস্টিকের বিশেষ গুরুত্ব দেখা যায়। যেমন, প্রাচীন মিসরের রানি ক্লিওপেট্রা লাল রঙে তার ঠোঁট সাজাতেন।

১৯১২ সালে নিউইয়র্ক সিটির ফিফ্থ এভিনিউয়ে ভোটাধিকারের দাবিতে নারীদের একটি মিছিল চলাকালে, এলিজাবেথ আর্ডেন নামের এক প্রসাধনী বিশেষজ্ঞ লাল লিপস্টিককে প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেন। আর্ডেন নারীদের সমর্থনে তার নিজস্ব স্যালুনের সামনে দাঁড়িয়ে মিছিলে অংশগ্রহণকারী নারীদের ঠোঁটে লাল লিপস্টিক লাগিয়ে দেন এবং লিপস্টিক উপহার দেন। তার তৈরি ‘রেড ডোর রেড’ লিপস্টিকটি পরবর্তীকালে নারীদের জন্য আশা, শক্তি, ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক হয়ে ওঠে। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯২০ সালে মার্কিন নারীরা ভোটাধিকার অর্জন করেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও লাল লিপস্টিক নারীদের স্বদেশপ্রেম এবং মনোবল চাঙা করার প্রতীক হয়ে ওঠে। লাল লিপস্টিককে ঘৃণা করতেন হিটলার, ফলে এটি মিত্রবাহিনীর দেশে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।

২০০৫ সালে ক্যানসারজয়ী নারী পরিচালক জেরালিন লুকাস তার বই ‘হোয়াই আই ওর লিপস্টিক টু মাই ম্যাসেকটমি’-তে লাল লিপস্টিককে সাহসী নারীদের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বর্তমানে লাল লিপস্টিক প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে ব্যবহার করা হয়, যেমন ২০১৫ সালে মেসিডোনিয়ায় সরকারবিরোধী আন্দোলনে এবং ২০১৮ সালে নিকারাগুয়ায় গ্রেপ্তারদের মুক্তির দাবিতে।

২০১৯ সালে চিলির যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদে নারীরা রাস্তায় নেমে তাদের ঠোঁটে লাল লিপস্টিক মেখে প্রতিবাদ জানান। র‍্যাচেল ফেল্ডার তার বই ‘রেড লিপস্টিক: অ্যান অডি টু আ বিউটি আইকন’-এ বলেন, লাল লিপস্টিক শুধু আত্মবিশ্বাসই বাড়ায় না, এটি একটি শক্তিশালী সাংস্কৃতিক অস্ত্র হিসেবেও বিবেচিত হয়। ‘দ্য লিপস্টিক এফেক্ট’ নামে একটি অর্থনৈতিক তত্ত্বও আছে, যা মনকে চাঙা করতে লিপস্টিকের ভূমিকা ব্যাখ্যা করে। যেমন, ২০০১ সালে নাইন-ইলেভেন হামলার পর আমেরিকায় লিপস্টিকের বিক্রি বেড়ে গিয়েছিল।

মার্কিন নারীবাদী ব্লগার কেটি ভেলভেট বলেন, লাল লিপস্টিক মাখলেই আমি সেই সব নারীদের কথা মনে করি, যারা একদিন ফিফ্থ এভিনিউয়ে দাঁড়িয়ে ভোটাধিকারের দাবি করেছিলেন, যারা কর্তৃত্ববাদী সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন, এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিজয়ের পথে এগিয়ে গিয়েছিলেন।