// জসীমউদ্দীন ইতি
বর্তমান জরীপ অনুযায়ী প্রাথমিক স্তরে শতভাগ শিশু ভর্তি হয় কিন্তু মাধ্যমিক স্তরে ভর্তি হওয়ার আগেই কিছু সংখ্যক ঝরে যায় আবার মাধ্যমিক স্তরে অধ্যয়নকালীন অনেকেই ঝরে যায় ফলে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে অনেকেই পদার্পণ করতে পারে না। শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ কল্পে সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, সে সাথে ইউনিসেফ সম্প্রতি একাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে কিন্তু তারপরও আশানুরুপ ফল পাওয়া যাচ্ছেনা।
শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার পিছনে রয়েছে নানাবিধ কারণ। পারিবারিক অস্বচ্ছলতা, অভিভাবকের অসচেতনতা, শিক্ষা শেষে হতাশা, বাল্য বিবাহ প্রভৃতি। সরকারি জরীপ যাই বলুক না কেন এখনো এদেশের উল্লেখযোগ্য্য সংখ্যক পরিবার দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করছে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে অনেক দরিদ্র্য পরিবারে বাবা মারা গেছে কিংবা অসুস্থ্য হয়ে পড়ে আছে। আবার অনেক পরিবারে বাবা মাকে ডিফোর্স দিয়েছে। এমতাবস্থায় এধরণের পরিবারের শিশু সন্তানগুলি মায়ের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে কিন্তু মায়েরও অর্থ উপার্জনের কোন পথ নেই।
বাধ্য হয়ে মা ঝি-এর কাজ করেন কিংবা ছোট-খাটো ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েন আবার অনেকে মাঠে দিন মজুরীর কাজও করেন। সরকার থেকে এসব পরিবার যতটুকু সহযোগিতা পান তা নিত্যান্তই অপ্রতুল বিধায় বাধ্য হয়েই মা সন্তানদেরকেও লেখা-পড়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে কাজে লাগিয়ে দেন। শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার অন্যতম একটি কারণ অভিভাবকের অসচেতনতা। অনেক অভিবাবক আছেন যারা ইচ্ছে করলেই সন্তানদেরকে শিক্ষিত করে তুলতে পারেন কিন্তু শিক্ষা সম্পর্কে নিজের অজ্ঞতার কারণে শিক্ষা তাদের কাছে মূল্যহীন। তারা ভাবেন লেখা-পড়া শিখে কি হবে তার চেয়ে সন্তানদের কাজে লাগিয়ে দিলে আর্থিক উন্নতি হবে।
শিক্ষা শেষে হতাশা অর্থাৎ কর্মের অভাব অনেকের মনেই মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। আমাদের দেশে কর্মের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। অনেক পরিবারের সন্তানেরা শিক্ষা অর্জন করে কর্মের অভাবে হতাশাগ্রস্থ। যে পরিমাণ কর্মক্ষেত্র রয়েছে তাতে খুব সামান্য সংখ্যক শিক্ষিত বেকারের কর্ম সংস্থান হয়। বাদবাকী একটি বড় অংশ হতাশাগ্রস্থ হয়ে অনেকেই অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত হচ্ছে। কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার অপ্রতুলতা কিংবা নামকাওয়াস্তে কারিগরি শিক্ষা বেকারত্ব হ্রাসে তেমন কোন ভূমিকা রাখতে পারছেনা। এসব বিষয় বিবেচনা করে অনেক পরিবার সন্তানদের শিক্ষা থেকে বিচ্ছিন্ন করে বিভিন্ন কাজে লাগিয়ে দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নতিও করছেন। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষা শেষে চাকুরীও পাচ্ছে না আবার পারিবারিক কাজেও লজ্জা পাচ্ছে। এহেন পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতেই মূলতঃ অনেক অভিভাবক সন্তানদের আগে থেকেই পারিবারিক কাজের সাথে জড়িয়ে ফেলছেন।
নারী শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার পিছনে উপরোল্লিখিত কারণগুলি ছাড়াও একটি বড় কারণ হচ্ছে বাল্যবিবাহ। সরকার বাল্যবিবাহরোধে আইন করলেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হচ্ছেনা। আর বাল্যবিবাহের পিছনে রয়েছে অনেকগুলি কারণ যা আইন করে বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে আমি মনে করি। দরিদ্র্য পরিবারে একজন মেয়ে যে কত বড় যন্ত্রণার তা ভুক্তভোগীরাই জানেন। প্রথমতঃ ইভটিজিং মেয়েদের ক্ষেত্রে একটি বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইভটিজিং-এর বিরুদ্ধে কঠোর আইন থাকা সত্বেও এ ব্যাধি যেন কোনক্রমেই কমছে না। আর মেয়েটি যদি দরিদ্র্য পরিবারের হয় তাহলে তো কোন কথাই নেই। ধনীর ঘরের ছেলেরা প্রস্তাব দেয় প্রেমের তারপর যা হবার তাই হয়।
মাধ্যমিক স্তরের মেয়েরা সাধারণতঃ এ ভুলটি বেশি করে থাকে। যন্ত্রণা পোহাতে হয় অসহায় পিতা-মাতাকে। দ্বিতীয়তঃ যৌতুকের মত ঘৃণ্য বিষয়টি আইন থাকা সত্বেও ৯৯ ভাগই চলমান রয়েছে। একজন গরীব পিতা মেয়ের যৌতুক মেটানোর জন্য স্বর্বশান্ত হয়ে যান। উপরন্তু মেয়ের বয়স ১৪-১৫ বছর হলে বর পক্ষের মেয়েটির জন্য বেশ চাহিদা থাকে কিন্তু উক্ত মেয়েটির বয়স যখন বাড়তে থাকে তখন চাহিদাও কমতে থাকে।