// ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতাঃ
অপহরণ করে মুক্তিপণের টাকা আদায়ের জন্যই ঈশ্বরদীতে তপু হোসেনকে (১৪) অপহরণ ও পরে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে। মঙ্গলবার (২৫ জুন) দুপুরে পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সি প্রেসব্রিফিং করে এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি আর জানান, আসামী জয়নাল আবেদিন জয় (২০) আতাইকুলা থানার আরও একটি হত্যা মামলার প্রধান আসামী এবং মাদকাসক্ত। মাদক ও হত্যা মামলার টাকার জন্যই তপুকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। চাঞ্চল্যকর কিশোর তপু হত্যা মামলায় ইতোমধ্যেই হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত ২ জন জয়নাল আবেদিন জয় (২০) ও ঈশা খলিফা (১৯)কে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আসামী জয় ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সোমবার (২৫ জুন রাতে বিজ্ঞ আদালতে ফৌ: কা: বিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেছে। অপহরন ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি চাকু ও মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়েছে বলে জানান তিনি।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণে বলা হয়, ১৫ জুন দুপুর দেড়টার দিকে ঈশ্বরদীর মশুড়িয়া কলেজ পাড়াস্থ কিশোর তপু (১৪) নিজ বাড়ি হতে বাহির হয়ে নিখোঁজ হয়। অপহরনকারী কিশোর তপুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিয়ে তপুর বাবাকে ফোন করে তপুকে অপহরন করেছে বলে জানিয়ে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপন বাবদ দাবি করে। অন্যথায় তপুকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। এরপর তপুর বাবা ছেলের জীবনের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অপহরনকারীর প্রদানকৃত বিকাশ নম্বরে ৭ হাজার একশত পঞ্চাশ টাকা প্রেরন করেন। বিশ মিনিটের মধ্যেই ছেলেকে ফেরৎ দিতে চাইলেও অপহরনকারীরা সময় ক্ষেপন করতে থাকে। ওইদিন ছেলেকে ফেরত না পেয়ে তপুর মা পরদিন ১৬ জুন বাদী হয়ে থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা এবং গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে মূল আসামীদের সনাক্ত করা হলেও ভিকটিমকে পাওয়া যাচ্ছিল না। গত ২২ জুন দুপুর আড়াইটার দিকে মশুড়িয়াপাড়াস্থ অরন্য ছাত্রাবাসের তৃতীয় তলায় সন্দিগ্ধ আসামী জয় এর কক্ষ হতে উৎকট গন্ধ আসতে থাকে। বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় ভিকটিম তপুর বাবা ও মাকে খবর দেয়া হয়। এছাড়াও মেসের মালিকসহ আশেপাশের স্থানীয়দের উপস্থিতিতে সন্দেহভাজন আসামী জয় এর কক্ষটির তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে । এসময় একটি টিনের ট্যাংকের মধ্যে অর্ধগলিত রক্তাক্ত লাশ দেখতে পাওয়া যায়। ভিকটিম তপুর বাবা ও মা লাশটি তাদের হারানো সন্তান তপুর বলে সনাক্ত করেন।
তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে ঈশ্বরদী থানা ও ঈশ্বরদী ফাঁড়ির অফিসার ফোর্সের সমন্বয়ে একটি চৌকস টিম পাবনা জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পাবনা সদরের ঢাকা বাসস্ট্যান্ড এলাকা হতে প্রধান সন্দেহভাজন আসামী জয়নাল আবেদীন জয়কে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তপু হত্যাকান্ডের কথা জয় স্বীকার করলে অপহরনকাজে ব্যবহৃত ভিকটিম তপুর মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। পরে হত্যাকান্ডে জড়িত আরেক আসামী ঈসা খালাশিকে গ্রেফতার করা হয়। হত্যাকান্ডে জড়িত আরও ১ জন আসামী পলাতক রয়েছে। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ধারালো চাকুটিও উদ্ধার হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আসামী জয়নাল আবেদীন জয় ও পলাতক আসামী সোহেল ঈশ্বরদী কলেজের পেছনে জনৈক টিপু এর অরন্য ছাত্রাবাসের ৩য় তলায় পাশাপাশি থাকতো। আসামী ঈসা খালাশি ওই ছাত্রাবাসের নিচে ভাড়া থাকত। ভিকটিম তপুর বাড়ী অরন্য ছাত্রাবাসের পাশেই । তপুসহ আসামীরা একে অপরের পূর্ব পরিচিত হওয়ায় অরন্য ছাত্রাবাসে যাতায়াত করত। তারা স্থানীয় হাসুর দোকনের সামনে ফ্রি-ফায়ার গেম খেলত, আড্ডা দিত ও ধুমপান করত। আসামী জয় ইতোপূর্বে আতাইকুলা থানার একটি হত্যা মামলার আসামী হওয়ায় মামলার খরচ চালানো, ছাত্রাবাসের খরচ বাবদ বেশ কিছু টাকা ঋণগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি মাদক সেবনের জন্য টাকার প্রয়োজনে অপর আসামী সোহেল ও ঈসার সাথে ঘটনার ২০/২৫ দিন আগে ছাত্রাবাসে বসে যে কোন একজনকে জিম্মি করে টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মাফিক তারা অপহরণ ও জিম্মি করার কাজে ফোন ব্যবহারের জন্য ঘটনার ৭/৮ দিন আগে ওই ছাত্রাবাসের মনির নামের একজন ছাত্রের ফোন চুরি করে। ঘটনার দিন ১৫ জুন আসামীরা পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক আসামী জয় চুরি করা ফোন থেকে ভিকটিম তপুকে অরন্য ছাত্রাবাসের ৩০৫ নম্বর কক্ষে ডেকে নেয়। এরপর আসামী সোহেল ও ঈসা ওই রুমে প্রবেশ করে সকলে মিলে তপুকে জিম্মি করে। তপু আতঙ্কে চিৎকার শুরু করলে আসামী ঈসা কক্ষে থাকা একটি ধারালো চাকু দিয়ে আঘাত করে এবং অন্যান্য আসামীরা তাকে ধরে রাখে। তপুর মৃত্যু নিশ্চিত হলে তারা জয়ের বেল্ট দিয়ে হাত বেধে একটি ট্যাঙ্কে ভরে রাখে। পরবর্তীতে আসামী জয় ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিয়ে ভিকটিমের বাবার ফোনে ফোন দিয়ে মুক্তিপন দাবী করে।
প্রেসব্রিফিং এ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মাসুদ আলম, ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।