// ওসমান গনি, বেড়া (পাবনা) প্রতিনিধি ঃ
মুসলিম উম্মার দ্বিতীয় প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি, এরই মধ্যে পাবনার বেড়া উপজেলায় জমজমাট হয়ে উঠেছে কোরবানি পশুর হাট। উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় এ বছর কোরবানির পশু প্রস্তুতের খরচ উঠবে না বলে খামারিরা হতাশা প্রকাশ করেছেন।
পাবনার বেড়া উপজেলার সিঅ্যান্ডবি ( চতুরহাট) হাট উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বৃহত্তর পশু হাট হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। উত্তর বঙ্গের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে কোরবানির জন্য গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল আসতে শুরু করেছে। সপ্তাহে শনি এবং মঙ্গলবার হাটবার হলেও গবাদি পশুর জন্য সমৃদ্ধ হাট মঙ্গলবার। চতুর হাট ছাড়াও নাকালিয়া , কাশিনাথপুর, নগরবাড়ি, কোরবানি ঈদ উপলক্ষে স্থায়ী – অস্থায়ী ভাবে পশুর হাট বসেছে । হাটগুলো ক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত থাকলেও কাক্সিক্ষত দাম না পাওয়ায় খামারি ক্ষোভ এবং হতাশা প্রকাশ করেছেন। অধিকাংশ ক্রেতাই পশু আগে কিনে বাড়িতে নিয়ে রাখা ঝামেলা মনে করেন তাই ঈদের এক দুইদিন আগে কিনবেন বলে জানান। এদিকে স্থানীয় গরুর হাট গুলোতে গতবারের চেয়ে এবার চাহিদা কম থাকায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় প্রতিদিনই রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন গরুর হাটে নৌকা ও ট্রাক যোগে বেপারি এবং খামারিরা গরু নিয়ে যাচ্ছেন।
মঙ্গলবার সিঅ্যান্ডবি চতুরহাটে সরজমিনে কথা হয় গরু কিনতে আসা নলভাঙ্গা গ্রামের আজগর আলীর সাথে তিনি বলেন , ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে ষাঁড় গরু কিনেছি মাংস আনুমানিক ৬ মণ হবে। তবে গতবারের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে এবছর কোরবানির পশুর দাম কম দেখা যাচ্ছে। একই হাটের গরুর বেপারি সোলাইমান জানান , মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা সবসময় বেশি। তাই খামারিদের থেকে এ বছর মাঝারি সাইজের গরু একটু দামে কিনতে হয়েছে, বড় গরুর তুলনায় মাঝারি সাইজের গরুর দামও একটু বেশি । ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে কোরবানির পশুর হাটে ভীড় তত বাড়ছে, শেষ মুহূর্তে উপজেলার পশুর হাট গুলোতে আরো বেশি ক্রেতা সমাগম হবে বলে বিক্রেতারা আশাবাদী। তবে চাহিদার তুলনায় প্রায় ২৫ হাজার গবাদি পশু প্রস্তুত রয়েছে, তাছাড়া ভারত এবং মিয়ানমার থেকে গরু আমদানি হলে ছোট বড় সকল খামারিরা লোকসানের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল।
এদিকে, ডিজিটাল তথ্য প্রযুক্তি ছোঁয়ায় আরও একধাপ এগিয়ে জমে উঠেছে পশুর হাট। অনেকেই স্মার্ট ফোনে ইমো, স্কাইপিসহ বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে ভিডিও কলে দেশ- বিদেশে বাড়িতে থাকা স্বজনদের গরু দেখাচ্ছেন এবং তারা ভিডিও কলে গরু দেখে দেখে পছন্দ করছেন কোনটা কিনবেন। এ ছাড়াও অনেকেই গরুর ছবি তুলে হোয়াটর্সএ্যাপের মাধ্যমে তাদের স্বজনদের শেয়ার করছেন।
উপজেলার চরাঞ্চলের কৃষক ও ক্ষুদ্র খামারি সাত্তার বেপারি জানান, দীর্ঘদিন ধরে গরু লালন-পালন করেছি লাভের আশায়, কিন্তু এ বছর গরুর দাম তুলনামূলক ভাবে কম । বেপারিরা লোকসানের ভয়ে হাট এবং গ্রাম থেকে অন্যান্য বছরের মতন কোরবানির পশু কিনছেন না। যদি ভারতীয় গরু বাজারে না আসে তাহলে আমাদের দেশীয় গরুর ন্যায্য মূল্য পাবো বলে আশা প্রকাশ করেন।
বেড়া উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো. মিজানুর রহমান জানান, প্রতিটি গরুর হাটেই ফ্রি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে, এছাড়াও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আয়োজনে কোরবানির পশু জবাই ও বর্জ্য অপসারণের বিষয় নিয়ে ইমাম ও কসাইদের একদিনের প্রশিক্ষণ ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে। এ উপজেলায় ৩ হাজার ৩ শ’ ৫০ জন খামারি, কোরবানির জন্য ৮৮ হাজার ৭ শ ‘ ৬৫ টি গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া প্রস্তুত করেছে। চাহিদার তুলনায় প্রায় ২৫ হাজার বেশি রয়েছে বলে এ প্রতিবেদককে তিনি জানান।#