বট পাকুরের নব্বই বছরের বিবাহিত জীবন

// ইকবাল কবীর রনজু, চাটমোহর (পাবনা)

একটি বট ও একটি পাকুর গাছ বিবাহিত জীবনের প্রায় নব্বই বছর পার বরছে। দীর্ঘ বৈবাহিক জীবনে এ বট ও পাকুর গাছ একে অপরের সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে কালের স্বাক্ষী হয়ে। পাবনার চাটমোহরের নিমাইচড়া ইউনিয়নের চিনাভাতকুর গ্রামের  হলদারপাড়ার দূর্গা মন্দিরের সামনে প্রায় একশত বিশ বছর বয়সী বট ও পাকুর গাছ দুটির অবস্থান। প্রায় দশ কাঠা জমি জুড়ে থাকা এ বট পাকুর গাছের বিয়ের গল্প যুগে যুগে বংশানুক্রমে এ এলাকার মানুষের মুখে মুখে প্রচারিত হয়ে আসছে।

চাটমোহর পৌর সদর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার উত্তরে চিনাভাতকুর গ্রামটির অবস্থান। চাটমোহর-মান্নান নগর সড়কের পূর্ব পাশে অবস্থিত এ গ্রামটির জনসংখ্যা প্রায় তিন হাজার। অধিকাংশ মানুষ মুসলিম হলেও এ গ্রামে প্রায় ছয় থেকে সত’শ সনাতন ধর্মাবলম্বী (হিন্দু) বাস করেন; যাদের অধিকাংশই জেলে।

চিনাভাতকুর গ্রামের শংকর হলদার (৭০) জানান, “আমার বাবা ক্ষিতিস হলদারের বড় ভাই ছিলেন সতীস হলদার। সতীস হলদারের স্ত্রী ছিলেন খুকী বালা। আমার জেঠা সতীস হলদার এবং জেঠীমা খুকী বালা ছিলেন নিঃসন্তান। জেঠা-জেঠীর কাছে শুনেছি এখন থেকে প্রায় একশত বিশ বছর আগে তারা গ্রামের দূর্গা মন্দিরের সামনে একটি বট ও একটি পাকুর গাছ লাগিয়েছিলেন। তারা গাছ দুটিকে সন্তানের মতো ভালবাসতেন। বট-পাকুর গাছ দুটির বয়স যখন ত্রিশ বছর তখন আমার জেঠা এবং জেঠী মহা ধুম ধাম করে ঢাক ঢোল বাদ্রযন্ত্র বাজিয়ে, এলাকার কয়েক গ্রামের মানুষকে নিমন্ত্রণ করে হিন্দু শাস্ত্র মোতাবেক বিয়ে দেন।”

পবন হলদার (৪৩) জানান, চিনাভাতকুর গ্রামে প্রায় নব্বই বছর আগে এ বট পাকুর গাছের বিয়ের কথা কালক্রমে মানুষের মুখে মুখে প্রচারিত হয়ে আসছে। সতীস হলদার ও খুকী বালা এ বট পাকুর গাছকে নিজেদের সন্তান মনে করে বিয়ে দিয়েছিলেন। দূর দূরান্তের মানুষ মনোবাসনা পূরণে এ গাছে পুজো দেন। পৌষ সংক্রান্তিতে বট-পাকুর তলায় হলদার সম্প্রদায়ের মানুষ কুমিড় পুজো করেন। দূর্গা মন্দিরে সাড়ম্বরে পালিত হয় দূর্গা পূজা। পাড়ার মানুষ বট-পাকুর তলায় অবসর সময় কাটান।

বাসুদেব হলদার (৬৬) জানান, সতীস হলদার ও খুকীবালা যখন এ বট পাকুর গাছের বিয়ে দেন তখন ২২ গ্রামের মানুষকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। গত আশির দশকে সতীস হলদার ও খুকীবালার মৃত্যু হয়। আগে কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে এ বট পাকুর গাছের উঁচু মাথা দেখা যেত। বয়স বাড়ার সাথে সাথে গাছ দুটির উচ্চতা কমলেও এখনও একে অপরের সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে দাড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য জহির উদ্দিন জানান, ছোটবেলা খেকে এ বটগাছটিকে আমরা খুকীর বটগাছ বলে জানি। আমার দাদীসহ এলাকার মুরুব্বীদের মুখে শুনেছি সতীস হলদার ও খুকী বালা এ বট পাকুর গাছকে নিজেদের সন্তান মনে করে বিয়ে দিয়েছিলেন।

নিমাইচড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরজাহান বেগম মুক্তি জানান, এ বট পাকুর গাছের বিয়ের কথা শুনেছি। ছোট বেলা থেকেই বৃহৎ আকারের গাছ দুটি দেখে আসছি। বয়সের ভারে দিনে দিনে এখন কিছুটা ছোট হয়ে আসছে।