ফিরে দেখা-করোনা কালের জীবন ধারা–৮

–এবাদত আলী —

সারা দেশের ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত ত্রাণ কমিটি গঠন করতে আওয়ামী লীগের সহযোগি সংগঠনগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিভাগ ও জেলা পর্যায় থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত এই কমিটি বিস্তৃত থাকবে। তারা প্রকৃত দুর্দশাগ্রস্তদের চিহ্নিত করে তালিকা তৈরি করবে। যাতে যথাযথ মানুষেরা ত্রাণ পান। তিনি ১৫ এপ্রিল-২০২০ তারিখ সন্ধ্যায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থানরত নেতা কর্মিদের এ নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন,ত্রাণ কমিটি ত্রাণ বিতরণের জন্য স্বেচ্ছাসেবক সরবরাহ করবে। আর কমিটি যে তালিকা দেবে প্রশাসন তা যাচাই এর মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করবে।
দেশের করোনাভাইরাস মোকাবিলা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ৩১ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। করোনাভাইরাসের কোন উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। এতে লুকোচুরির কিছু নেই। ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) সাধারণভাবে সবার পরার দরকার নেই। চিকিৎসা-সংশ্লিষ্ট সবার জন্য পিপিই নিশ্চিত করতে হবে। যারা হোম কোয়ারেন্টিনে বা আইসোলেশনে আছেন তাদের প্রতি মানবিক আচরণ করতে হবে। তিনি ৩১ দফায় ব্যক্ত করেছেন যে, ত্রাণ কাজে কোন ধরনের দুর্নীতি সহ্য করা হবেনা।
প্রধানমন্ত্রীর সকল বাক্য সংশ্লিষ্ট সকলে সুবোধ বালকের মত অক্ষরে অক্ষরে যে পালন করছে তা বোধ হয় জোর দিয়ে বলা যায়না। একশ্রেণির জনপ্রতিনিধি, নেতা বা পাতি নেতা আছে যারা দেশে কোন দুর্ভিক্ষ বা মহামারি দেখা দিলে গরিবের মাঝে বিতরণের ত্রাণকে গনিমতের মাল মনে করে থাকে। করোনাভাইরাস মহামারিতে ইতোমধেই সে কম্মটি অনেকেই সেরে ফেলেছে। ত্রাণের মাল শোবার ঘরের খাটের নিচে, গরুর গোয়ালে, পরিত্যক্ত গোডাউনে এমনকি পুকুরের পানিতে মওজুদ করে রেখে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর হাতে ধরা খেয়েছে। কেউ কেউ বলেছে এটা বিরোধি পক্ষের ষড়যন্ত্র কিংবা তাকে অহেতুক ফাঁসানোর জন্য চক্রান্ত। ধরা পড়ার পর অনেকেই দেনদরবার করে অপরাধিকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টাও করেছে, এমন দু একজন এমপি মহোদয় আসামির পক্ষে সুপারিশের জন্য কোর্ট পর্যন্ত ও ধর্ণা দিয়েছেন। কিন্তু কাজ হয়নি। কথায় বলে চোরের স্বাক্ষী গাঁইট কাটা। তা না হলে গরিবের হক মেরে খাওয়ার পক্ষে তাদের সুপারিশ কেন?
১৯৭২ সালে সদ্য স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রনায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেসময় তৎকালিন চোর নেতাদের উদ্দেশ্যে দুঃখ করে বলেছিলেন, “ লোকে পায় সোনার খনি আর আমি পেয়েছি চোরের খনি। ” তিনি আরো বলেছিলেন আমার দেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষের জন্য পাওয়া আট কোটি কম্বল কিন্তু আমার কম্বল কই? তখন বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে প্রচুর পরিমানে রিলিফ আসতো। গরিব-দুখি মানুষদের আহারের জন্য বঙ্গবন্ধু সরকার সারা দেশে লঙ্গরখানা খুলে দিয়েছিলেন। তবে এবারে তা হবেনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা গরিব-দুখি মানুষের মাতা। তার আমলে রিলিফ চোরদের কিছুতেই রক্ষা নাই। প্রবাদ বাক্যে আছে বাঘে ছুঁইলে আঠারো ঘা। কিন্তু সাবধান শেখ হাসিনা ছুঁইলে ছত্রিশ ঘা। ইতো মধ্যেই অনেককেই হাজতবাস করতে হচ্ছে। এপর্যন্ত পদ হারাতে হয়েছে ৩৫ জন নেতাকে।
সরকারি পর্যায়ে অভাবি মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রি বিতরণের পাশাপাশি বাংলাদেশের অগণিত ধনি ব্যক্তি অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে সুশৃঙ্খলভাবে ত্রাণ বিতরণ করে চলেছে। একটি প্রতিষ্ঠান ও কতিপয় ব্যক্তির কথা না বল্লেই নয়। যেমন বাংলাদেশের বৃহৎ একটি প্রতিষ্ঠান “স্কয়ার”। এই প্রতিষ্ঠানের তরফ হতে হাজার হাজার অভাবি মানুষকে সুশৃঙ্খলভাবে ত্রাণসামগ্রি প্রদান করা হচ্ছে।
পাবনা জেলার বিভিন্ন উপজেলার মানুষের মাঝে পর্যায়ক্রমে তা বিতরণ করা হচ্ছে। পাবনা ৫ আসনের এমপি গোলাম ফারুক প্রিন্স, পাবনা সদর, চাটমোহর, আটঘরিয়াসহ অন্যান্য উপজেলা চেয়ারম্যান। পাবনার আটঘরিয়ার চাঁদভা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য চেয়ারমনগনও সুষ্ঠুভাবে ত্রাণসামগ্রি বিতরণ করছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে পাবনা ৪ আসনের (ঈশ^রদী-আটঘরিয়া) এমপি সাবেক ভুমিমন্ত্রী ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুর রহমান শরীফ ডিলু গত ২ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করায় আসনটি শুন্য ঘোষিত হয়। দেশের পরিস্থিতি ভালো হলে সেখানে জুন মাসের শেষে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা। উক্ত নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশি একাধিক ব্যক্তি গোপনে ও প্রকাশ্যে ঈশ^রদী ও আটঘরিয়ার দুঃস্থ মানুষজনের মাঝে ইতোমধ্যেই ত্রাণসমাগ্রি বিতরণ করে চলেছেন।
পাবনা প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য ও দুদকের সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু করোনাকালিন দুর্যোগে গত ২৬ এপ্রিল-২০২০ তারিখে পাবনা প্রেসক্লাবের সদস্যদের মাঝে তার পক্ষ থেকে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
করোনাভাইরাস মহামারিতে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের সহায়তায় ১০ হাজার টাকা দান করে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে শেরপুরের ভিক্ষুক নাজিমুদ্দিন। ঝিনাইগাতি উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গান্ধীগাঁও গ্রামের ইয়ার আলীর ছেলে নাজিমুদ্দিন (৮০) ভিক্ষা করে সংসার চালান। বসতঘর মেরামাত করার জন্য দুই বছর ধরে ভিক্ষা করে তিনি ১০ হাজার টাকা জমিয়েছিলেন। ঐ টাকা তিনি কোভিড-১৯ মহামারিতে ঘরবন্দি কর্মহীন মানুষের জন্য দান করেন। টাকাটা তিনি ইউএনও রুবেল মাহমুদের কাছে ত্রাণ তহবিলের জন্য দেন। ইউএনও বলেন, নাজিমুদ্দিনের টাকা দেওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। রাতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে নাজিমুদ্দিনকে ভিটামাটি ও পাকা বাড়ি করে দেওয়ার নির্দেশ আসে। নাজিমুদ্দিনকে খাস জমি বন্দোবস্তসহ বাড়ি করে দেওয়ার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে বলে ইউএনও জানিয়েছেন।
এতে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মহানুববতার বহিপ্রকাশ ঘটেছে বৈকি। জননেত্রি শেখ হাসিনার বেলায় এমন ভুরি ভুরি উদাহরন রয়েছে। তিনি যেমন কঠোর তেমনি কোমল হৃদয়ের মানুষ। কারো প্রতি তার কোন হিংসা-বিদ্বেষ নেই। তা না হলে বিরোধি দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে তিনি মুক্তি দিতেন না। ২০০৮ সালে বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাষ্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়। ১০ বছর পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে মামলার রায়ে তার ৫ বছরের কারাদন্ড হয়। তারপর হাইকোর্ট সেই সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদন্ড প্রদান করেন। বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ বিশ^বিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুক্তি লাভ করেন। দেশে করেনার মহাদুর্যোগের সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ( সময়কাল ০৩-০৫-২০২০)। (চলবে) (লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।
এবাদত আলী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সদস্য পাবনা প্রেসক্লাব