// বিশেষ প্রতিবেদক
প্রকৃতির চিরাচরিত নিয়মানুযায়ী বিদায় নিল ঋতুরাজ বসন্ত কাল। ঋতু পরিক্রমায় ফাল্গুন ও চৈত্র মাস নিয়ে গঠিত বসন্ত ঋতুতে প্রকৃিত সেজেছিল যেন নতুন রূপে। বাংলার ঝোঁপ ঝাড়, মাঠ প্রান্তর অথবা রাস্তার দুপাশে ফোটা বুনো ভাট ফুল বা বনজুঁই যেমন নজর কেড়েছে সবার তেমনি বসন্তের অন্যান্য ফুলও দোলা দিয়ে গেল আমাদের তৃষ্ণার্ত হৃদয়কে।
বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বসন্তে অধিক ফুলের সমাহার দেখে বিস্মিত হয়ে সেই কবে লিখে গেছেন আহা! “আজি এ বসন্তে কত ফুল ফোটে কত পাখি গায়”। আবার বসন্তকে স্বল্প স্থায়ী মনে করে লিখে গেছেন, “কেনরে এতই যাবার ত্বরা- বসন্ত তোর হয়েছে কি ভোর গানের ভরা”। লেখার এত বছর পরে ও এ লেখা আমাদের প্রাণ ছুয়ে দেয়।
দেশের বিভিন্ন এলাকার কাঁচা পাকা সড়কের পাশে, রেল পথের দুধারে, বাড়ির পাশর্^বর্তী ঝোঁপ ঝাড়, আনাচে কানাচে ভর মৌসুমে ফুটে থাকা ভাট ফুলসহ অন্যান্য বসন্তের ফুল দেখে মুগ্ধ হয়েছেন প্রকৃতি প্রেমীরা।
বহু বছর ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অযতœ আর অবহেলায় বেড়ে ওঠা ঝোপাকৃতি গুল্ম জাতীয় গাছের নাম জানা অজানা অনেক ফুলই আমাদের নজর কেড়েছে। এসব ফুলের সৈন্দর্য মুগ্ধ করেছে আমাদের। বসন্তের বন বাদারের ফুল, গাছের কচি সবুজ পাতা, কোকিলের কুহু তান আমাদের হৃদয় মনকে করে প্রফুল্ল।
প্রতি বছর বসন্ত আসে। বিদায় নেয়। বসন্তের ফুলের দেখা, নতুন নরম কচি পাতার পরশ পেতে আমাদের অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে হয় আরেক বসন্তের।
আবার বসন্তের বনের রূপে মুগ্ধ হয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার “ এলো বনান্তে পাগল বসন্ত, বনে বনে মনে মনে রং সে ছড়ায় রে, চঞ্চল তরুন দিগন্ত” লেখায় প্রকাশ করেছেন মুগ্ধতা। আবার “বসন্ত আজ আসলো ধরায় ফুল ফুটেছে বনে শীতের হাওয়া পালিয়ে বেড়ায় ফাল্গুনী মোর মন বনে” মন মননে বসন্ত যে এক বিরাট দাগ কাটে এসব লেখা তার প্রমান দেয়। বসন্তকে বিদায় জানাতে যে কষ্ট হয় একথার প্রমান মেলে “ বৈকালী সুরে গাও চৈতালী গান বসন্ত হয় অবসান নহŸতে বাজে সকরুণ মূলতান এমন লেখায়।
বসন্ত বাতাসে সই গো বসন্ত বাতাসে বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে। বন্ধুর বাড়ির ফুল বাগান নানান রঙের ফুল ফুলের গন্ধে মন আনন্দে ভ্রমর হয় আকুল বাউল স¤্রাট শাহ আব্দুল করিমের এ গান আমাদের চিত্তকে মিশিয়ে দেয় বসন্তের সাথে।
বসন্তের রূপ রস রঙে মুগ্ধ হয়ে গীতি কবি ও সাহিত্যিক ইকবাল কবীর রনজু তার গীতি কবিতায় বসন্তকে আর ক’টা দিন অপেক্ষা করতে আহবান করেছেন। তিনি লিখেছেন, ফুল ফুটিয়ে বসন্ত তোর যাবার কেনো তাড়া/ মায়ের আচল পূর্ণ যখন মায়ের আচল ভরা/ মন ভরে তোর রূপ দেখে মুগ্ধতা চোখে চোখে/ যাসনে এতো ত্বরা করে আর কটা দিন দাড়া \ নজর কাড়ে নতুন পাতা বন বাঁদাড়ে শাখে শাখে/ পলাশ শিমুল ভাট মহুয়া আনন্দে যে মাতিয়ে রাখে/ আগুন জ্বলে মাদার বনে আবেগ জাগায় মনে মনে/ অশোক চাপা ঘোড়া নিম যে করে আত্মহারা \
কবি সাহিত্যিকরা তাদের লেখায় বসন্তকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চাইলেও আমাদের ঘুমন্ত মনকে জাগ্রত করে, আমাদের ছুয়ে দিয়ে চলে গেল বসন্ত। বসন্তকে ফিরে পেতে আমাদেও অপেক্ষা করতে হবে আরেক বসন্তের।