// নাটোর প্রতিনিধি
দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মায়াবী চেহারার কিশোর শরিফুল ইসলাম। সমবয়সীরা যখন পড়াশুনায় ব্যস্ত, তখন সে বিছনায় শুয়ে রোগ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। কখনও মাথার পেছনে ব্যাথা, কখনও বুক ধড়ফড়ানীতে অস্থির হয়ে উঠে শরিফুল। গাল-মুখ ফুলে যাচ্ছে। ফ্যাকাসে হয়ে গেছে চোখসহ গায়ের রঙ। সারাদিন বিছানায় শুয়ে-শুয়েই দিন কাটছে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত শরিফুল ইসলামের।
বেকারী পণ্যের ফেরিওয়ালা বাবা ধারদেনা করে একমাত্র ছেলের বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষা করানোর পর চিকিৎসক বলেছেন তাকে কেমোথেরাপী দেয়াসহ উন্নত চিকিৎসা করাতে হবে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা করাতে না পারলে ধীরে ধীরে মৃত্যুর কাছে হার মানতে হবে তাকে। অসহায় বাবা-মা টাকার অভাবে ছেলেকে যথাযথ চিকিৎসাও করাতে পারছেন না। এতে এক প্রকার বিনা চিকিৎসায় ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে নাটোরের বড়াইগ্রামের রয়না গ্রামের মানিক হোসেনের ছেলে শরিফুল ইসলাম।
ছেলের এমন পরিণতিতে অঝোরে কাঁদছেন মা শরীফা খাতুন। আর নিজের অসহায়ত্বের কাছে হার মেনে লুকিয়ে কাঁদেন বাবা। ছেলের চিকিৎসার খরচের জন্য জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সমাজের বিত্তবানদের কাছে বারবার ঘুরেও তেমন সাড়া পাননি তিনি।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, বড়াইগ্রাম পৌরসভার রয়না গ্রামে দুই কাঠা জমির ওপর কোনোমতে টিন শেড ঘরে দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে বসবাস মানিক-শরীফা দম্পতির। পাশের বেকারী থেকে বিস্কুট-পাউরুটি কিনে ফেরি করে বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করে কোনোমতে সংসার চালান মানিক। শরিফুলও সংসারের ব্যয় মেটাতে পড়াশুনার পাশাপাশি স্কুল ছুটির পর বাবার মত বেকারীর পণ্য সরবরাহ করতো। হঠাৎ করেই গত ২০ ফেব্রুয়ারী শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে শরিফুল।
প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে পরীক্ষা নিরীক্ষায় তার ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ে। এ সময় রোগটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে জানিয়ে চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে বলেন। তারা এটাও জানান যে, তার উন্নত চিকিৎসার জন্য কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা ব্যায় হবে। চিকিৎসকের এমন কথা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে দরিদ্র এই পরিবারটির।
টাকার অভাবে উপায়ান্ত না পেয়ে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন তারা। ফেরি করে যা উপার্জন করেন সেই টাকা দিয়ে টেনেটুনে সংসার চললেও ছেলের চিকিৎসা খরচ জোগানোর সামর্থ্য নেই তাদের। কিন্তু সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তিনদিন আগে তাকে পুনরায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও অর্থাভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
কান্নাজড়িত কন্ঠে মা শরীফা খাতুন বলেন, চোখের সামনে আমার সোনামানিক রোগে ধুঁকে মরে যাবে সেটা ভাবতেই পারছি না। আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে ছেলের জীবন ভিক্ষা চাই। আপনারা দয়া করে আমার বুকের ধনকে বাঁচাতে সাহায্য করুন। সমাজের দানশীল ব্যক্তিরা তাকে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক বড়াইগ্রাম শাখার ১১২০০০১০৩৯৪৭৭ নং সঞ্চয়ী হিসাবে অথবা সোনালী ব্যাংক বড়াইগ্রাম শাখার ৪৯০৩১০১০২৫৭৩৮ নং সঞ্চয়ী হিসাবে এবং ০১৭৭০০৭৯২৮৬ নম্বর বিকাশ একাউন্টে আর্থিক সহযোগিতা করতে পারবেন বলে তিনি জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, শিশুটির ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে পরিবারটিকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিভাবে সহযোগিতা করা যায় সেটাও দেখা হবে।