//নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিল চলন শহীদ সামসুজ্জোহা সরকারি কলেজের ছয় শিক্ষক চাহিদা মতো উৎকোচ না দেয়ায় সাতমাস ধরে তাদের বেতন বন্ধ রাখার অভিযোগ উঠেছে কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেছেন। আবেদনে ভুক্তভুগি শিক্ষকরা বলেন, ২০১৬সালে বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা ডিগ্রি কলেজটি সরকারি করনের পর ২০১৯সাল থেকে কর্মরতরা সরকারি বেতন ভাতা পাওয়া শুরু করেন। বিষয় অধিভুক্তি না থাকায় অনার্সের সাতজন শিক্ষক তখন বেতন পাননি। পরবর্তিতে গত বছরের ২৭জুলাই সরকারি প্রজ্ঞাপন দিয়ে তাদের বেতনের আওতায় আনা হয়। এর মধ্যে গণিতের প্রভাষক প্রসান্ত কুমার কুন্ডুর বেতন যথা সময়ে চালু করলেও বাংলার প্রভাষক মো: শাহীন আলম, মনোবিজ্ঞানের প্রভাষক আব্দুল্লাহ আল মাওদুদ ও মো: শামসুল আলম এবং ভূগোলের প্রভাষক মোহাম্মদ আলী জাফর, মো: আনোয়ার হোসেন ও জি এম কামরুজ্জামানের বেতন প্রায় সাত মাস অতিবাহিত হলেও অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো: একরামুল হক চালু করেননি। আয়ন ব্যয়ন কর্মকর্তা (ডি ডি ও) হিসেবে অধ্যক্ষ তাদের বেতনের চাহিদা উপজেলা হিসাব রক্ষন অফিসে পাঠাননি। বিষয়টি নিয়ে এসব শিক্ষকরা অধ্যক্ষের সাথে বার বার কথা বললে তিনি কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলা বিভাগের প্রধান মো: আব্দুর রশিদের মাধ্যমে উৎকোচ দাবী করেন। উৎকোচের জামানত হিসেবে এসব শিক্ষকেরা প্রত্যেকে এক লাখ টাকার একটি করে চেক জমা দেন। তাতেও সন্তোষ্ট হননি অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো: একরামুল হক। তিনি আরো বেশি পরিমানে উৎকোচ প্রদানের দাবী করেন। এই দাবী না মানায় আজও তাদের বেতন চালু হয়নি। ১২ বছর আগে অনার্সের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া এসব শিক্ষকেরা এতদিন বেতন না পেলেও সরকারি করণ হওয়ায় ভালো জীবনের প্রত্যাশা করেছিলেন। অধ্যক্ষ বেতন চালু না করায় পরিবার নিয়ে তারা এখন অর্থাভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ফলে ভুক্তভুগি শিক্ষকদের মধ্যে চারজন লিখিত ভাবে বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে গত রোববার শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেছেন। এর আগে কলেজের অনার্সের অপর দুই শিক্ষক হাফিজুর রহমান ও মো: মোক্তাদিরুল ইসলামের নিকটও অধ্যক্ষ উৎকোচ দাবী করেন। উৎকোচ না দেয়ায় অধ্যক্ষ দুই মাস তাদের বেতন বন্ধ করে রাখেন। পরে এই দুই শিক্ষক কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো: আব্দুর রশিদের মাধ্যমে কলেজের জন্য একজন আইপিএস ও অপরজন সাউন্ড সিস্টেম কিনে দিলে তাদের বেতন চালু করা হয়। আবেদনে আরো বলা হয়, অধ্যক্ষ সরকারি পরিপত্র অনুসরন না করে নিজে একটি আভ্যন্তরিন নীতিমালা তৈরী করে কলেজের সকল পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করেন। অতিরিক্ত ভর্তি ফি ও রেজিষ্ট্রেশন ফি ও আদায় করে পরে ইচ্ছে মতো ব্যয় বন্টন করেন। বিনা টেন্ডারে কলেজের গাছ কেটে বিক্রি করে দেন। ২০২২সালের ১৬মার্চ যোগ দেয়া এই অধ্যক্ষ আগের কর্মস্থল রাজশাহীর শহীদ এ এইচ এম কামরুজ্জামান সরকারি কলেজে থাকার সময় জঙ্গী সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হওয়ায় সেখান থেকে বিতারিত হন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
এ সব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বুধবার দুপুরে কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলা বিভাগের প্রধান মো: আব্দুর রশিদ বলেন, অধ্যক্ষ কোন উৎকোচ দাবী করেননি। কলেজের অনার্সের অপর দুই শিক্ষক হাফিজুর রহমান ও মো: মোক্তাদিরুল ইসলাম স্বেচ্ছায় আইপিএস ও সাউন্ড সিস্টেম কিনে দিয়েছেন। উৎকোচ দাবীর বিষয়ে এসব শিক্ষকদের সাথে তার (আব্দুর রশিদ) একটি অডিও রের্কডে পরিস্কারভাবে উৎকোচ দাবীর কথা থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা অডিওর খন্ডিত অংশমাত্র।
অপরদিকে বিল চলন শহীদ সামসুজ্জোহা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো: একরামুল হক বলেছেন, তার বিরুদ্ধে করা সকল অভিযোগ ভুয়াঁ ও অসত্য। তিনি কখনো কোন টাকা দাবী করেননি। অভিযোগের তদন্ত হলে নির্দোষ প্রমাণিত হবেন বলে তিনি মনে করেন। এসব শিক্ষকদের বেতনের জন্য তিনি চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন, যেকোন দিনই তাদের বেতন চলে আসতে পারে বলে তিনি জানান।