// কামরুল হাসান, টাংগাইল পতিনিধিঃ বাংলাদেশের ঐতিহ্যে, লোকাচারে, জীবন ধারায় পাটির ব্যবহার ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ে অনুষ্ঠানে, বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অন্যতম উপাদান ছিলো পাটি। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের তপ্ত দুপুরে শীতলতা বয়ে আনে শীতল পাটি। কিন্তু কালিহাতী উপজেলায় কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী পাটি শিল্প। প্রায় ৪০ হাজার লোক পাটি শিল্পের সাথে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। বর্তমানে প্লাস্টিকের তৈরি পাটি বাজার জাত হওয়ার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে পাটি ও পাটি শিল্প। উপজেলার বাংড়া, সিলিমপুর, খিলদা, ধুনাইল, এলেঙ্গা, লাঙ্গলজোড়া, ঘূনি, সালেংকা, পাটিতাপাড়া, পিচুটিয়া, আউলটিয়া, মহিষজোড়া সহ আরও বেশকিছু গ্রামে দেখা যেত বেত ক্ষেত । এ ক্ষেতগুলো দেখতেও অনেক সুন্দর। কিন্তু অনেক পাটি শিল্পী পরিবার ভারতে পাড়ি জমিয়েছে। বর্তমানে উপজেলায় ২০ হাজারের মতো পাটি কারিগর আছে। ব্যবসা মন্দার কারণে বেশ কিছু পাটি কারিগর অন্য পেশা বেছে নিয়েছে। ফলে বেত ক্ষেতের জমিগুলোতে আবাদ হচ্ছে অন্য ফসল।
এ শিল্পে দেখা যায়, বেতের আবরণ ৪ শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। ওই ৪ অংশ দিয়ে ৪ ধরনের পাটি ও আনুসাঙ্গিক জিনিস তৈরি করে থাকেন। প্রথম ভাগ শীতল পাটি, ২য় ভাগ বুকা পাটি, ৩য় ভাগ ছাইলা ও ৪র্থ ভাগ দিয়ে আতি যা ধানের আটি, পানের বিড়া ও বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে থাকেন তারা। পাটিগুলো আশেপাশের চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয়। কালিহাতী পিচুটিয়া গ্রামের পাটি শিল্পী অমর ধর বলেন, এই পাটি বানিয়ে। হাটে-বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাতে হয়। আগের মতো বেচাকেনা নেই। এখন খুব কষ্ট করে চলতে হয়। অপরদিকে চাটিপাড়া গ্রামের পাটি শিল্পী স্বপন কুমার দে বেতের পাটি দিয়ে নানা ধরনের লেডিস ব্যাগ, লেডিস জুতা, ছেলেদের মানিব্যাগ, বেল্ট, ছেলেদের জুতাসহ অনেক ধরনের সামগ্রী তৈরী করে বাজারজাত করছেন। উপজেলা পাটি শিল্প সমিতির সভাপতি দিনেশ চন্দ্র দত্ত ও সাধারণ সম্পাদক হরে কৃষ্ণ পাল বলেন, সরকারিভাবে সহজ শর্তে ব্যাংক লোনের মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ করতে পারলেই এ পাটি শিল্প টিকিয়ে রাখা সম্ভব।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহাদাত হুসেইন বলেন, কালিহাতী উপজেলার এ ঐতিহ্যবাহী পাটি শিল্প টিকিয়ে রাখার জন্য যদি কোন পাটি শিল্পী, পাটি ব্যবসায়ী ও কোন উদ্যেক্তার আর্থিক সহায়তা ও ঋণের প্রয়োজন হয় তাহলে উপজেলা প্রশাসন থেকে সহায়তা করবেন।