// নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরে গুরুদাসপুরে স্ত্রীর সাথে দাম্পত্যে দ্বন্দের মামলায় জেলে যাওয়ায় দুঃখে বন্দি আরেক বন্ধুকে দুই বছর আগে শ্বশুরদের সাথে মিলে স্ত্রীর পরকিয়া প্রেমিককে হত্যার পরে লাশ গুমের গল্প শোনানোর পরেই চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় মো. আল হাবিব সরকার (২৫) এবং মো. আশরাফুল ইসলামকে (৪৮) গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
খুনের এ তথ্য ফাসের পরেই গতকাল শুক্রবার নিহতের মা গুরুদাসপুর থানায় বাদি হয়ে তিন জনের নাম এবং দুই জন অজ্ঞাত উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার ভিক্তিতে শনিবার(২ মার্চ) সকালে সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার গোলচত্তর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মো. আশরাফুল ইসলাম আটক করা হয় বলে জানান, র্যাব-৫ নাটোর ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার, সন্জয় কুমার সরকার।
জানা যায়, স্ত্রী মোছা. তানজিলা বেগমের ২০২২ সালের নভেম্বর দায়ের করা দাম্পত্য কলহের মামলায় মো. আল হাবিব সরকারের জামিন হলেও স্ত্রীর পরিকিয়া প্রেমিক নিহত মফিজুল ইসলামকে হত্যা মামলায় আবার গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং বাকি আসামীদেরও গ্রেপ্তারে চেষ্টা অব্যহত রয়েছে বলে জানান সন্জয় কুমার সরকার।
নিহত মো. মফিজুল ইসলাম গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় খলিফাপাড়া এলাকার মো. আজাত মোল্লা ও মোছা. মাইনুর বেগম দম্পতির ছেলে।
গ্রেপ্তার মো. আল হাবিব সরকার (২৫) সিরাজগঞ্জের তাড়াশের তালোম কাচারিপাড়া এলাকার মো. ওজারত আলীর ছেলে এবং হাবিব সরকারের মামা শ্বশুড় মো. আশরাফুল ইসলাম (৪৮) গুরুদুসপুরের খামাড়নাচকৈড় এলাকার মো. আব্দুস সামাদের ছেলে।
সন্জয় কুমার সরকার বলেন, ২০২৩ সালে নভেম্বরে আসামী আল হাবিব সরকার সাথে স্ত্রীর তানজিলা বেগমের দাম্পত্য জীবনে অশান্তি শুরু হলে তানজিলা স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে জেলে যায় হাবিব। জেল হাজতে আসামী আল হাবিব সরকারের সাথে গুরুদুসপুরের খলিফাপাড়ার মো. মোজাফর মুন্সির ছেলে আরেক বন্দি মো. জাকির মুন্সির সাথে পরিচয়ের পরে বন্ধুত্ব হয়। এরপর জাকির মুন্সিকে আসামী আল হাবিব সরকার স্ত্রীর পরিকিয়া ও পরকিয়া প্রেমিককে হত্যার পরে লাশ গুমের কথা বলে। হাবিবের স্ত্রী তানজিলা ও মফিজুল চাচকৈড় খলিফাপাড়ায় এক বিস্কুট ফ্যাক্টরীতে কাজের সময় প্রেমের সম্পর্ক জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হলে হাবিবের শ্বশুর আসামী আবু তাহের খলিফা ওরফে তারা খলিফা (৫৫) তানজিলার প্রেমিক মফিজুল ইসলামকে মোবাইল ফোনে খুন করার হুমকি দেয়।
২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল রাত ১১ টার দিকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তানজিলাকে চাপ দিয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মফিজুলকে তার শ্বশুর বাড়িতে ডেকে নিয়ে আসামী মো. আশরাফুল ইসলামসহ অন্যান্য আসামীদের মিলে তার মুখে কচটেপ দিয়ে বাড়ীতে আটকে রাখে। আসামীরা মফিজুলকে মাটিতে ফেলে দিলে আবু তাহের খলিফা মফিজুল ইসলামের পা দিয়ে মাটির সাথে চেপে ধরে। তখন আশরাফুল মফিজুলের বুকের উপর পা তুলে ধারালো শাবল দিয়ে বুকে আঘাত করলে শাবল মফিজুলের বুকের ভিতর ঢুকে যায় এবং ঘটনাস্থলেই মফিজুল ইসলামের মৃত্যু হয়। এরপর আসামীরা মফিজুল ইসলামের মৃতদেহ একটি প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে বাড়ীর পাশের মাদ্রাসার সেফটি ট্যাংকির পাশে মাটিতে পুতে রাখে।
এদিকে জাকির মুন্সি গত সপ্তাহে জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে বিষয়টি মৃত মফিজুল ইসলামের মা সহ এলাকার অন্যান্য লোকজনের কাছে বলে দেয়। এ ঘটনায় মৃত মফিজুল ইসলামের মা বাদী গুরুদাসপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন বলে জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।
এবিষয়ে গুরুদাসপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজ্জল হোসেন বলেন, আগামীকাল বিধি অনুযায়ী ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে হত্যার পরে গুমকৃত মফিজুল ইসলামের (২৫) লাশ গুরুদাসপুরের পুরানপাড়া মাদ্রাসার পানির সেফটি ট্যাংকির পাশ থেকে উদ্ধার করা হবে।#