মুহাম্মদ আবু হেলাল, শেরপুর প্রতিনিধি : মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের নেতা প্রয়াত ভাষা সৈনিক আব্দুর রশীদের ৯৩ তম জন্মদিন আজ । আজীবন অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক চেতনা লালনকারী এই প্রয়াত রাজনীতিবিদের জন্মদিন উপলক্ষে পারিবারিক ভাবে শেরপুরে ২৫ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বিভিন্ন কর্মসুচি হাতে নেয়া হয়েছে । কর্মসুচির মধ্যে ছিল, শেরপুর শহরের শেখহাটি মহল্লার বাসভবন ভাষা সৈনিক আব্দুর রশীদ কুটিরে তার প্রতিকৃতিতে মাল্যদান, চাপাতলী পৌর কবরাস্থানে কবর জিয়ারত, কবরে পুষ্পস্তবক অর্পন.কোরআনখানি ও দোয়া মাহফিল।
আব্দুর রশীদ ১৯৩১ সালের ২৫ জানুয়ারি শেরপুর পৌর শহরের শেখহাটিতে এক সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী ভিক্টোরিয়া একাডেমীতে অধ্যয়নকালে তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এরপর ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট,৬২’র শিক্ষা কমিশন আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭০’র নির্বাচন,৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ অংশগ্রহণ করে অবদান রাখা ছাড়াও বিভিন্ন গণতান্ত্রিক,সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে গৌরব উজ্জ্বল ভুমিকা পালন করেন।
১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে নিহত হলে এর প্রতিবাদ করায় তৎকালীন সরকার তাকে ময়মনসিংহ জেলা কারাগারে ৯ মাস কারারুদ্ধ করে রাখেন। সাবেক ন্যাপ নেতা বঙ্গবন্ধুর বাকশালের শেরপুর জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশীদ তার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী,জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান,মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল(অবঃ) এমএজি ওসমানী ও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা বিপ্লবী রবি নিয়োগীসহ দেশ বরেন্দ্র বিভিন্ন রাজনীতিবিদদের সান্নিধ্য লাভ করেন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এই নেতা দীর্ঘ দিন স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার, আলবদর ও জামায়াত-শিবির এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করেছেন। বিশেষ করে শেরপুরের কুখ্যাত আল বদর জামায়াত নেতা ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে তিনি সর্বদাই প্রতিবাদী ভুমিকা পালন করেন এবং যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানকে সামাজিকভাবে বয়কট করে শেরপুরে এক অন্যন্য নজীর স্থাপন করেন।
জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি শেরপুর জেলা ঘাতক দালাল নিমর্‚ল কমিটির আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১৪ সালের ৫ জুন বার্ধক্যজনিত কারণে ৮৪ বছর বয়সে তার শেরপুর শহরের গৃদানারায়নপুরের নিজস্ব বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। তিনি দৈনিক যুগান্তরের শেরপুর জেলা প্রতিনিধি মো. আব্দুর রহিম বাদলের বাবা।