// বিশ্ব মুসলিমের জন্য সপ্তাহের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ দিন শুক্রবার। কোরআন এবং হাদিসে এই দিনের বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা কোরআনে কারিমে এই দিনের নামাজ পড়ার ঘোষণা দেন। পড়লে কী লাভ সেটাও বলে দিয়েছেন। আবার না পড়লে কী ক্ষতি তারও উল্লেখ আছে।
মুসলমানদের মধ্যে এমন অসংখ্য মানুষ আছেন, যারা নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন না। তবে শুক্রবারের জুমার নামাজে অনুপস্থিত থাকেন না কখনো। আবার এমন অনেকে আছেন, যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ তো পড়েনই না, শুক্রবার জুমার নামাজেও তারা হাজির হন না।
কিন্তু নামাজের প্রতি এই অবহেলা আর উদাসীনতা যে ভয়ানক ক্ষতির কারণ হতে পারে একজন মুসলমানের জন্য, তা আমরা কখনো চিন্তাও করি না। জুমার নামাজ পড়া সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা এভাবে ঘোষণা দেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ
হে মুমিনগণ! জুমার দিন যখন নামাজের আহ্বান জানানো হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে (মসজিদে) এগিয়ে যাও এবং বেচা-কেনা (দুনিয়াবি যাবতীয় কাজকর্ম ছেড়ে দাও। এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর; যদি তোমরা জানতে। (সুরা জুমা : আয়াত ৯)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন।’ (ইবনে মাজাহ ১০৯৮)
পরপর তিন জুমা না পড়লে যে ক্ষতি
হাদিসে পাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত পর পর তিন জুমা পরিত্যাগ করে, আল্লাহ তাআলা তার অন্তরে মোহর এঁটে দেন।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)। ‘এরপর তারা (জুমা ত্যাগকারীরা) আত্মভোলা হয়ে যাবে। অতঃপর সংশোধন লাভের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হয়ে যাবে।’ (মুসলিম)
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি পর পর তিনটি জুমা পরিত্যাগ করবে, সে ইসলামকে পেছনের দিকে নিক্ষেপ করল।’ (মুসলিম)।
এখন অনেকে মনে করতে পারে, অন্তরে মোহর এঁটে দিলে কী ক্ষতিই বা হবে! অনেক বড় ক্ষতি হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে আপনার পরিবার এবং সমাজ। মানুষের ভালো-মন্দের বোধ আসে অন্তর থেকে। সেই অন্তরে যদি মোহর আঁটা থাকে, তাহলে মানুষ ভালো-মন্দের বিচার করা ভুলে যায়।
যা খুশি, যেমন খুশি করতে থাকে। তারা পাপাচারে লিপ্ত হয়, খোদাভীতি দূর হয়ে যায়। পরিবারে, সমাজে তারা অন্যায় অনাচার করতে থাকে। বিবেক, অনুশোচনাবোধ হারিয়ে যায়। ফলে যেকোনো খারাপ কাজ করতে তাদের এতটুকু খারাপ লাগে না। তাকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার পরিবার এবং সমাজ। সঙ্গে অগণিত গোনাহ কামাই তো হয়ই।
হজরত আউস ইবনে আউস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করাবে (জুমার নামাজের পূর্বে স্ত্রী-সহবাস করে তাকেও গোসল করাবে) এবং নিজেও গোসল করবে অথবা উত্তমরূপে গোসল করবে। এরপর ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে আসবে, আসার সময় হেঁটে আসবে, কোনো বাহনে চড়বে না, ইমামের কাছাকাছি বসবে, এরপর দুটি খুতবা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং (খুতবার সময়) কোনো অনর্থক কাজকর্ম করবে না, সে মসজিদে আসার প্রতিটি পদক্ষেপে একবছর নফল রোজা ও একবছর নফল নামাজের সওয়াব পাবে।’ (আবু দাউদ ৩৪৫)
ফজিলতের পাশাপাশি জুমার নামাজ অনাদায়ে হাদিসে শাস্তির কথা বলা হয়েছে। কেউ পর পর তিন জুমা আদায় না করলে তার জন্য সতর্কবাণী উল্লেখ করেছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
যারা জুমা থেকে মুক্ত
তবে অপর এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, চার শ্রেণির লোক ছাড়া জুমার নামাজ ত্যাগ করা কবিরা গুনাহ। চার শ্রেণির লোক হলো- ক্রীতদাস, স্ত্রীলোক, অপ্রাপ্তবয়স্ক বালক, মুসাফির ও রোগাক্রান্ত ব্যক্তি। (আবু দাউদ)। আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুক (আমিন)।