গুরুদাসপুরে স্বামীর মধ্যযুগীয় নির্যাতনের শিকার সেই গৃহবধুকে মারা গেছেন


গুরুদাসপুর প্রতিনিধি : পারিবারিক কলহে স্বামী মেহেদী হাত পা বেঁধে স্ত্রী রেবেকার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে তাঁর শারীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যায়। ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ণ ইউনিটে পাঁচ দিন মৃত্যু যন্ত্রনা শেষে বুধবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে আট টার দিকে মৃত্যু হয় রেবেকার।

রেবেকা সুলতানা (৩৯) গুরুদাসপুর পৌর সদরের চাঁচকৈড় বাজারপাড়া মহল্লার নবির সরদারের মেয়ে। স্বামী মেহেদী হাসান (৩৫) উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের চলনালী কান্দিপাড়া গ্রামের জয়নাল হোসেনের ছেলে।

রেবেকার পরিবারের অভিযোগ বছর খানেক আগে আদালতের মাধ্যমে মেহেদী হাসানের সাথে রেবেকার বিয়ে হয়। পারিবারিক কলহ ও যৌতুকের দাবীতে প্রায়শঃ মেহেদী স্ত্রী রেবেকাকে শারিরীক মানষিকভাবে নির্যাতন করে আসছিলেন। এসব ঘটনায় মেহেদীর বিরুদ্ধে আদালতে দুটি মামলাও করেছেন রেবেকা। মূলত মামলা প্রত্যাহারের জন্য সম্প্রতি রেবেকা ও তাঁর মাকে চাপ দিচ্ছিলেন মেহেদী। কিন্তু মামলা প্রত্যাহার করতে রাজি ছিলেন না তাঁরা। একারণেই ক্ষুব্ধ হয়ে শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে রেবেকার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন স্বামী মেহেদী হাসান।

রেবেকার চিৎকারে প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে রাতেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় তাঁকে। সেখানে অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় রবিবার বিকেলে ঢাকার বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বছর দুয়েক আগে মেহেদী হাসানের সাথে রেবেকার বিয়ে হয়। মেহেদী রেবেকার দ্বিতীয় স্বামী। দ্বিতীয় বিয়েও রেবেকার জন্য সুখকর ছিলো না। বিয়ের পর থেকে প্রায়শই তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ হতো। স্বামীর নির্যাতনের মাত্রা বাড়ায় ছয় মাস আগে চাঁচকৈড়ে মায়ের বাড়িতে চলে আসেন রেবেকা। সবশেষ শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে স্বামী মেহেদী হাসান রেবেকাকে তার বাড়িতে ডেকে নেন। সেখানে যাওয়া মাত্রই মেহেদী, তানজিল এবং মেহেদীর মা মেহেরজান তার হাত-পা বেঁধে ফেলেন। এরপর মেহেদী প্রথমে সারা শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকা দেন। ব্লেড দিয়ে হাত পায়ের বিভিন্ন অংশ কেটে দেন। একপর্যায়ে কেরোসিন ঢেলে তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
রবিবার স্বামী মেহেদী হাসান (৩৫), দেবর তানজিল (৩০) ও শ্বাশুড়ী মেহেরজানকে (৫৫) অভিযুক্ত করে গুরুদাসপুর থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করেন রেবেকার মা লালবি বেগম। স্বামীর দেওয়া আগুনে রেবেকা পুড়ে মারা গেলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত আসামীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

দগ্ধ রেবেকা সুলতানা জানান,আগের সংসারের একটি পূত্র সন্তান রয়েছে তাঁর। সন্তানকে হত্যার ভয় দেখিয়ে স্বামী মেহেদী তাকে বাড়িতে ডেকে নেন। বাড়িতে গিয়ে তারা বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে মেহেদী হাতপা বেঁধে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এসময় তার চিৎকারে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। সেসময় তিনি স্বামীর বিচার দাবিও করেন।

ঘটনার পর থেকে রেবেকার স্বামী মেহেদী হাসান পলাতক থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আইনি প্রক্রিয়া মেনে নিহত রেবেকার লাশ আনার প্রস্তুতি চলছে। আসামিদের গ্রেপ্তারেও তারা অভিযান চালাচ্ছেন।

গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. উজ্জল হোসেন জানান, রেবেকার শরীরের আগুন দেওয়ার বিষয়টি তিনি অবগত। চিকিৎসার জন্য রেবেকাকে থানার পক্ষ থেকে সহায়তা করা হয়েছিলো। আসামি ধরতে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে।