মন্ত্রের শক্তিতে মনভোলানোর ‘পাতা খেলা’

// হযরত বেল্লাল, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধিঃ 

 আজ থেকে ৩০ বছর আগে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী তুলারাশি নিয়ে পাতা খেলা, লাঠি খেলা, বানর খেলা, বাইসকোপ দেখানো, হা-ডু-ডু খেলাসহ নানাবিধ গ্রামীণ খেলার ব্যাপক আয়োজন ছিল গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়। কালের বিবর্তনে ওইসব গ্রামীণ খেলা হারিয়ে গেছে প্রায়। এখনো শীতকাল আসলেই বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবি প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন পরিত্যক্ত ধান ক্ষেতের খোলামাঠে আয়োজনের চেষ্টা করেন ওইসব গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলার।

সেই ধারাবাহিতকায় বৃহস্পতিবার বিকালে উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের সাতগিরি গ্রামের পরিত্যক্ত ধান ক্ষেতের খোলামাঠে অনুষ্ঠিত হয় তন্ত্রমন্ত্রের জোরে তুলারাশিকে ভাগিয়ে নেয়ার প্রতিযোগিতা পাতা খেলা। স্থানীয় যুবসমাজের আয়োজনে বিকাল চারটা হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এই পাতা খেলা। খেলায় হাজারও উৎসুক জনতার ভির যেন ছিল চোখে পড়ার মত। এতে বিভিন্ন এলাকার পাঁচটি তন্ত্র-মন্ত্রের তান্ত্রিকদল বা ফকিরের দল অংশ নেয়।

সরেজমিন দেখা গেছে, বিলাশ খোলামাঠের মাঝখানে লালফিতা ঝুলিয়ে কলাগাছ লাগানো হয়েছে। কলাগাছের গোড়ায় পাতারুপী তলারাশি মানুষকে রাখা হয়েছে। মাঠের চারপাশে সমান দুরত্বে আসন নিয়ে বসা তন্ত্র-মন্ত্রের তান্ত্রিকদল বা ফকিরের দল নিজ নিজ তন্ত্র-মন্ত্রের জোরে মাঠের মাঝখান থেকে পাতারুপী তুলারাশিকে তাদের দিকে টেনে আনার প্রতিযোগিতা চলে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যে দল পাতাকে তাদের আসনে নিয়ে আসে তারাই বিজয়ী হয়। 

খেলায় গাইবান্ধা সদর উপজেলার দাড়িয়াপুর কাবলির বাজার থেকে আসা আবু তাহের মিয়ার তান্ত্রিক দল প্রথম এবং একই উপজেলার হাশেম বাজার থেকে আসা সুমন মিয়ার তান্ত্রিক দল দ্বিতীয় হয়। 

আজ থেকে ২৫-৩০ বছর আগে পাতা খেলার ব্যাপক প্রচলন ছিল জানান, খেলা দেখতে আসা ৭০ বছরের বৃদ্ধা আকবর আলী। তার ভাষ্য খেলার মাঠে দ্বন্দ্বের কারণে এবং অনেক সময় পাতারুপী তুলারাশি মারাযেত সে কারণে এইসব খেলা এখন বন্ধ হয়ে গেছে। আজ প্রায় ৩০ বছর পর তিনি এই খেলা দেখতে আসছেন।  

নানী এবং দাদার নিকট থেকে শুনেছি পাতা খেলার কথা। কিন্তু কোনদিন দেখি নেই বললেন খেলা দেখতে আসা কলেজ ছাত্র নাহিদ মিয়া। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এইসব খেলা ধরে রাখা একান্ত প্রয়োজন। তা নাহলে শুধু ইতিহাস হয়ে থাকবে।

খোলা আয়োজক কমিটির তানযীমুল মিয়া জানান, বিলুপ্ত প্রায় গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী পাতা খেলাকে ফিরে আনার জন্য তাদের এই আয়োজন। এই আয়োজন করতে তাদের অনেক কষ্ট হয়েছে। প্রতিবছর এই আয়োজনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

পরে বিজয়ী ও বিজীতদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন বামনডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার , বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আব্দুল আজিজ, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাবেক সভাপতি মজনু হিরো, জাতীয় পাটির ইউনিয়ন সভাপতি রেজাউল আলম রেজা প্রমূখ।