// নাজিম হাসান,রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি:
সদ্য জন্ম নেওয়া দুটি কন্যা সন্তান চোখ ফোটার আগেই মাকে হারালো। মৃত্যু মুখে পতিত অভাগা ওই প্রসূতির আরো দুটি কন্যা সন্তার রয়েছে। কে তাদের আহার জোগাবে। পিতা দরিদ্র কাঠ মিস্ত্রী কী পারবে এই চার কন্যা লালন পালন করতে। এমনি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে এলাকার সচেতন মানুষের মনে। হৃদয় বিদারক এই ঘটনাটি ক্লিনিক মালিকের সাথে মাত্র ৫০ হাজার টাকায় দফারফা হওয়ায় আরো মর্মাহত হয়েছেন রোগির স্বজন ও এলাকাবাসী। রোগির স্বজনরা জানান, উপজেলার মাড়িয়া ইউপি’র ছোট সাকোয়া গ্রামের দারিদ্র কাঠ মিস্ত্রী মাসুদ রানার স্ত্রী রফেলা বেগমের(৩৬) এর প্রসব যন্ত্রনা শুরু হলে বুধবার সকাল ১০ টার দিকে তাকে ভবানীগঞ্জের ফারজানা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ক্লিনিক মালিক মাহাবুর কয়েকদিন আগে থেকেই ওই প্রসূতিকে তার ক্লিনিকে ভর্তি করার জন্য তৎপরতা শুরু করে। ওই দিন তারা রোগিকে নিয়ে রাজশাহী যেতে চাইলে তাদেরকে জোর করে ওই ফারজানা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ওই দিন বিকাল ৩ টায় রফেলাকে সিজার অপারেশনের মাধ্যমে দুটি কন্যা সন্তার ভুমিষ্ট হয়। এর পর ভয়ানক রক্তক্ষরন শুরু হয় রফেলার এবং তার জ্ঞান আর ফিরে আসেনা। এর পর রাত ৯ টার দিকে রোগির অবস্থা আরো সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। অবস্থা বেগতিক দেখে ক্লিনিক মালিক মাহাবুর ও তার লোকজনেরা রোগি ও তার স্বজনকে জোর করে ক্লিনিক থেকে বের করে দেয়। পরে রাত ১০ টার দিকে ক্লিনিক সংলগ্ন রাস্তার উপর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন প্রসূতি।
এই অবস্থায় দুটি সদ্যজাত কন্যা সন্তান নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েন স্বামী মাসুদ রানা ও তার পরিবার। তাদের অভিযোগ , ওই সময় বৃষ্টি পড়ছিল। ক্লিনিক মালিক আমাদের জোর করে রাস্তায় বের করে দিলে সেখানেই আমার স্ত্রী মারা যায়। পরে আমরা ৯৯৯ ফোন করলে তারাও আমাদের হতাশ করে। এ সময় বাগমারা থানায় ফোন দিলে তারাও অপারোগতা প্রকাশ করে। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত আমরা সেখাইে অপেক্ষা করি। এদিকে ক্লিনিক মালিক গা ঢাকা দেয়। পরে স্থানীয়রা মিলে ও পাশ্ববর্তী ক্লিনিক মালিকদের সহায়তায় বিষয়টি মাত্র ৫০ হাজার টাকায় মিমাংসা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্লিনিক মালিকের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বাগমারা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, ওই ঘটনায় এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ,এফ,এম আবু সুফিয়ান বলেন, ঘটনাটি খুবই বেদনাদায়ক। বিষয়টি নিয়ে আমরা খোজ খবর নিচ্ছি। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কোন গাফলতি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।
উল্লেখ্য,রাজশাহীর বাগমারা উপজেলারতাহেরপুর,ভবানীগঞ্জ,মোহনগঞ্জ,শিকদারী, ও হাটগাঙ্গোপাড়াসহ আনাচে কানাচে গড়ে উঠা অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক শ্রোণির পুঁজিবাদীরা এলাকার সাধারন আয়ের মানুষের অসুস্থতাকে নিয়ে ব্যবসা করে চলেছে দিনের পর দিন তারা। এখানে ভালো চিকিৎসক,নার্স ও টেকনোলজিস্ট ছাড়াই ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে দেয়া হচ্ছে চিকিৎসা। ফলে সেখানে চিকিৎসা নিতে এসে প্রতারিত হচ্ছেন অনেকেই। তারা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক)হাসপাতালের নাম করা ভালো ভালো চিকিৎসকদের নাম ভাংগিয়ে গ্রামের সরল সাদা লোকজনদেরকে ভুয়া ডাক্তার ও রামেক হাসপাতালের ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে প্রতারক মুলক চিকিৎসা করানো হচেছ। যার ফলে রামেক হাসপাতালের ছাত্র-ছাত্রীরা নামিদামি মোবাইল ফোন কিনে সেখানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সার্চ দিয়ে রোগির জন্য ওষধ লেখে জনপ্রতি ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা হাতিয়ে নিতছেন। এদিকে,রেজিস্টেশন,চিকিৎসক,নার্স ও টেকনোলজিস্ট ছাড়াই অলিগলিতে গড়ে ওঠা এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসার নামে চলছে প্রতারণা ব্যবসা করে ক্লিনিক মালিকেরা অল্পদিনে কোটিপতি বুনিয়ে যাচেছ। অভিযোগ রয়েছে, ক্লিনিকগুলো লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও যথাযথ অপারেশন থিয়েটার ছাড়াই অহরহ সিজার করে যাচ্ছে। এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছেন বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ও সিভিল সার্জন কার্যালয় সুত্রে জানাযায়, নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি ক্লিনিকে ১০ বেডের জন্য ৩ জন চিকিৎসক (সকাল-বিকেল ও রাতে প্রতি শিফট-এর ১ জন করে ৬ জন ডিপোমাধারী নার্স, ৩ জন ওয়ার্ড বয় ও ৩ জন আয়া থাকার কথা। কিন্তু ক্লিনিক গুলোতে ডিপোমাধারী নার্স ও ওয়ার্ড বয় থাকার দুরের কথা সেখানে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কোনো নার্স বা ওয়ার্ড বয় নেই। এদিকে,সরজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, লাইসেন্স ঠিক রাখার জন্য কাগজে-কলমে এ তালিকা ঠিক থাকলেও বাস্তবে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই তা নেই। অধিকাংশ ক্লিনিকেই নেই কোনো রেজিস্টার্ড চিকিৎসক। তবে দু একটি ক্লিনিকে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকরা নিজেই মালিক সেজে বসে রয়েছে।#