কামরুল হাসান, টাঙ্গাইল পতিনিধি :::
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মগড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক মিনহাজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে। যদিও শিক্ষাবোর্ড থেকে তিন বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ২ হাজার ১৪০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও দ্বিগুণ হারে টাকা আদায় করায় ভোগান্তিতে পড়েছে দরিদ্র শিক্ষার্থী ও তার অভিবাবকগন।
অবশ্য সহকারি প্রধান শিক্ষক মিনহাজ উদ্দিন বলেছেন,ছাত্রীদের ভালো ফলের জন্য বিশেষ পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ জন্য শিক্ষার্থী প্রতি ফরম পূরণের সময় শিক্ষাবোর্ড নির্ধারিত টাকার অতিরিক্ত ২৫’শ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মগড়া ইউনিয়নে অবস্থিত মগড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ফরমপূরণ করেছে মোট ১০৪ জন শিক্ষার্থী। এবছর এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কত টাকা নেওয়া যাবে সেটি নির্ধারণ করে দিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ।এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য বোর্ড ফি ১ হাজার ৬২৫ টাকা ও কেন্দ্র ৫১৫ টাকাসহ মোট ২ হাজার ১৪০ টাকা। ব্যবসায় শিক্ষা এবং মানবিক শিক্ষা বিভাগের প্রতি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বোর্ড ফি ১ হাজার ৫৩৫ টাকা ও কেন্দ্র ফি ৪৮৫ টাকাসহ মোট ২ হাজার ২০ টাকা হারে নির্ধারণ করে গত ১৭ অক্টোবর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে ফরম পূরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে কোনোভাবেই অতিরিক্ত কোনো ফি নেওয়া যাবে না উল্লেখ করা হলেও মগড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে ৪ হাজার ৭০০ টাকা করে রশিদ ছাড়াই নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে একাধিক শিক্ষার্থী ও অভিবাবকগন।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থীর অভিবাবক জানায় ‘এখন ডবল টাকা ৫ হাজার ৩০০ টাকা দিয়ে এসএসসি ফরম পূরণ করতে হয়েছে। মেয়ে বাড়ি গিয়ে জানিয়েছে, এ টাকা না দিলে নাকি ফরম পূরণ করতে দেওয়া হবে না। কি করমু তাই ডাবল টাকা দিয়ে ফরমপূরণ করতে বাধ্য হয়েছি। এভাবে কী সন্তাদের লেখাপড়া করানো সম্ভব?’ তারা আরও জানায়, ফরমপুরণের সময় দুই বছরের বেতন ৬০০ ও ৩ মাসের কোচিং ফি ২৫০০ টাকা আগে পরিশোধ করতে হয়েছে তারপর ফরমপুরণের টাকা নিছে।
মো.রফিকুল ইসলাম নামের এক পরীক্ষার্থীর অভিবাবক জানান, আমার সাথে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির ছোট ভাইয়ের সাথে সখ্যতা থাকায় ৩ হাজার ১শত টাকা দিয়ে মেয়ের ফরমপুরণ করেছি। তিনি আরও জানান, আমাদের এলাকায় বেশিরভাগ লোক কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। তাদের জন্য ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা দিয়ে ফরমপুরণ করা কষ্টের ব্যপার।
সরেজমিনে দেখা যায়, স্কুলের নবম শ্রেনীর দুই ছাত্রীকে দিয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক মিনহাজ উদ্দিন তার নিজের রুম পরিস্কার করাচ্ছেন। বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের স্কুলে গত দুই বছর যাবত আয়া নেই। তাই ছাত্রীদের দিয়ে বিদ্যালয়ের মাঠ ও বিভিন্ন ক্লাসরুম এবং অফিস পরিস্কার করাই। বিদ্যালয়ের একাধিক সুত্র জানায়, প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম গত কয়েক বছর যাবত শাররীকভাবে অসুস্থ থাকায় সহকারি প্রধান শিক্ষক মিনহাজ উদ্দিন ও কেরানী আমীর হোসেন মিলে বিদ্যালয়ে নানা অনিয়ম ও শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে খারাপ আচরন করে আসছে। তারা দুজনেই স্থানীয় হওয়ায় বিদ্যালয়ে অন্য শিক্ষকরা প্রতিবাদ করতে সাহস পায়না।
মগড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. মেনহাজ উদ্দিন জানান,ছাত্রীদের ভালো ফলের জন্য বিশেষ পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ জন্য শিক্ষার্থী প্রতি ফরম পূরণের সময় শিক্ষাবোর্ড নির্ধারিত টাকার অতিরিক্ত ২৫’শ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান,সরকার নির্ধারিত টাকার বাহিরে অতিরিক্ত টাকা শুধু আমরা নিচ্ছি না,অনেক বিদ্যালয়ে নিচ্ছে।
জেলা শিক্ষা অফিসার রেবেকা সুলতানা জানান, বিষয়টি সম্পর্কে সুস্পষ্ট তথ্য প্রমান পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) হাসান-বিন মুহাম্মাদ আলী জানান, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দ্রুত আইনগত প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।