// হযরত বেল্লাল, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধিঃ
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় দুর্বৃত্তদের এলোপাথারি চুরিকাঘাতের পর হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়ায় ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি জাহিদুল ইসলামের (৩৬) মৃত্যু হয়েছে। রোববার রাত ১১টার দিকে উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের সুন্দরগঞ্জ-বামনডাঙ্গা সড়কের শাখা মারা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। জাহিদুল ইসলাম সোনারায় ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি ও পশ্চিম বৈদ্যনাথ গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আবুল হোসেনের ছেলে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে চার জনকে আটক করেছে পুলিশ। ওই এলাকায় ঘটনার পর থেকে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার মোতায়েন করা হয়েছে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাহিদুল সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিএনপি-জামাতের মুসা, ছামু, খাদেমুল , ইলিয়াছসহ ৪ হতে ৫ জন তাকে ছুরিকাঘাত করেছে। কেন করেছে, বললে জানান, আমি আওয়ামীলীগ করি আর ওরা বিএনপি – জামাত করে সে জন্য। ইতিমধ্যে এই বক্তব্য ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
সোমবার গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল, পুলিশ সুপার মো. কামাল হোসেন, র্যাব-১৩ এর কোম্পানি কমান্ডার মোস্তাফিজুর রহমান, উপজেলা নিবার্হী অফিসার মো. তরিকুল ইসলাম, সহকারি কমিশনার ভুমি মো. মাসুদুর রহমান, জেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি সৈয়দ মাসুদা খাজা, উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মিসেস আফরুজা বারী, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম সরকার লেবু, থানার ওসি কে এম আজমিরুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এনিয়ে সোমবার সকালে উপজেলার ছাইতানতলা বাজারে আওয়ামীলীগ, যুবলীগসহ সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। নিহত জাহিদুলের লাশ ময়না তদন্তের জন্য এখনও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, জাহিদুলের দুই স্ত্রী এবং তিন সন্তানের জনক। বর্তমানে তার পিতা-মাতা জীবিত রয়েছে। জাহিদুলের বাড়িতে চলছে কান্নার মাতন।
পুলিশ ও স্থানীয়দের নিকট থেকে জানা গেছে, রাত ১১ টার দিকে জাহিদুল এবং কবির মিয়া মোটরসাইকেল যোগে বামনডাঙ্গা থেকে বাড়ি ফিরছিল। ঘটনাস্থলে পৌচ্ছা মাত্রই ৬ হতে ৭ জন দুর্বৃত্ত রশি দিয়ে তাদের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে এলোপাথারি চুরিকাঘাত এবং মারপিঠ শুরু করে। এক পর্যায় জাহিদুলের হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়। দুর্বৃত্তরা জাহিদুলের সাথে থাকা কবিরকে মারপিঠ করে মাটিতে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে এসে তাদেরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। জাহিদুলের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত আনুমানিক ৩ টার দিকে জাহিদুল মারা যায়। কবির চিকিৎসাধিন অবস্থায় রয়েছে।
জাহিদুলের বাবা আবুল হোসেন বলেন, জাহিদুলের সাথে এলাকায় কারও ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাসিরা তাকে হত্যা করেছে। তিনি অতিদ্রুত অপরাধিদের গ্রেপ্তারের জোর দাবি জানান।
সোনারায় ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা সৈয়দ বদিরুল আহসান সেলিম জানান, জাহিদুলের সাথে স্থানীয় বিএনপি ও জামাতের নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক শত্রুতা ছিল দীর্ঘদিন হতে। সে কারণে হয়তো দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করেছে।
উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মিজানুর রহমান লিটু বলেন, জাহিদুল সোনারায় ইউনিয়নের একজন যুবলীগের সক্রিয় ও সাহসী নেতা ছিল। সে কারণে বিএনপি ও জামাতের নেতাকর্মীরা রাতের অন্ধকারে হাত-পায়ের রগ কেটে দিয়ে তাকে হত্যা করেছে। তিনি অবিলম্বে সন্ত্রাসিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নেয়ার জোর দাবি জানান।
উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম সরকার লেবু বলেন, যে বিএনপি ও জামাতের সন্ত্রাসিরা সুন্দরগঞ্জে চার পুলিশ সদস্যকে পিঠিয়ে হত্যা করেছে, সেই বিএনপি এবং জামাতের সন্ত্রাসিরা পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক জাহিদুলের হাত-পায়ের রগ কেটে দিয়ে তাকে হত্যা করেছে। তিনি দ্রুত ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নেয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন। এর প্রতিবাদে সোমবার বিক্ষোভ-মিছিল ও সমাবেশ করেছে উপজেলা আওয়ামীলীগ।
থানার ওসি কে এম আজমিরুজ্জামান জানান, ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে চার জনকে আটক করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে আটককৃতদের নাম প্রকাশ করছেনা পুলিশ। এলাকার পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত রয়েছে।
গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মো. কামাল হোসেন জানান, প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে হত্যা কান্ডটি সংঘটিত হয়েছে। আটককৃতদের জিজ্ঞাবাদ চলছে, অল্প সময়ের মধ্যে ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে। এই মহুত্বে এর বাইরে আর কিছু বলার নেই।
জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল বলেন, এটি অত্যন্ত নেক্কারজনক এবং হৃদয় বিদারক ঘটনা। অল্প সময়ের মধ্যে প্রকৃত অপরাধিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের ব্যবস্থা করা হবে।