পরকীয়া প্রেমের জেরে বগুড়ায়খুন হয়েছিলো নারী আনসার সদস্য

সঞ্জু রায়, বগুড়াঃ
পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গোপন রাখতে বগুড়ার শিবগঞ্জে পূজা মন্ডপের দায়িত্বে থাকা নারী আনসার সদস্য আশা দেবী মোহন্তকে শারীরিক সম্পর্কের পর হত্যা করেছিলো তারই সাবেক প্রেমিক। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা ও ঘটনাস্থলের পাশের সড়কের একটি কুকুরের গতিবিধি পর্যালোচনায় আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। ইতোমধ্যেই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে হত্যাকাণ্ডের খলনায়ক একমাত্র আসামী নয়ন।
বৃহস্পতিবার সকালে বগুড়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিং এ চাঞ্চল্যকর এই হত্যকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন পরবর্তী এই তথ্য জানান বগুড়া পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বিপিএম পিপিএম।
এদিকে ঘটনাস্থলের পাশের সড়কের এক সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায় ২৩ অক্টোবর দুর্গাপূজার নবমীর রাত ১০টা ৪৪ মিনিটে বগুড়া শিবগঞ্জে হত্যাকাণ্ডের শিকার নারী আনসার সদস্য আশা দেবীর বাড়ির পেছনের গলি থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসছে এক ব্যক্তি যার চোখে মুখে ছিলো ভয় ও দুশ্চিন্তার ছাপ।

ফুটেজে আশ্চর্যের বিষয় হলো অচেনা কেউ হলে তো সড়কে থাকা কুকুর টি চেঁচিয়ে উঠতো কিন্তু সন্দেহভাজন এই ব্যক্তির চলাফেরাতে বেশ শান্ত দেখায় কুকুরটিকে যাতে পুলিশ ক্লু পায় ঘাতক ব্যক্তিটি বাহিরের কেউ নন বরং ঐ এলাকারই। ঘটনার দিন থেকে শিবগঞ্জের ওসি আব্দুর রউফের নেতৃত্বে  চুলচেরা তদন্তের পর সনাক্ত করা হয় সিসিটিভি ফুটেজের সেই ব্যক্তিকে যিনি ছিলেন নিহতের সাবেক প্রেমিক প্রতিবেশী নয়ন ইসলাম। বুধবার দিবাগত রাতে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ও আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যাকাণ্ডে সংগঠিত করার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছে অভিযুক্ত নয়ন বলে জানান পুলিশ সুপার।
এসপি সুদীপ জানায়, প্রায় ৮/৯ মাস আগে থেকে আশা দেবীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে নয়ন ইসলামের। পরিবার বা এলাকার কেউ তাদের সম্পর্ক কেউ আঁচ করতে পারেনি। মাস তিনেক আগে নয়নের বিয়ে হলে আশা দেবীর সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি যেনো আর কখনই প্রকাশ্যে না আসে সেই উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত ভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটান অভিযুক্ত নয়ন। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৩ অক্টোবর রাতে আশা দেবী যখন তার ডিউটি থেকে বাসায় ফিরছিলো তখন পথিমধ্যে নয়ন তার পিছু নেয়। এমন সময় নয়ন বাড়ির প্রাচীর টপকে ভেতরে প্রবেশ করে আশা দেবীর ঘরে যায় এবং নয়নকে দেখে আশা দেবী প্রথমে রাগ করলেও তার সাথে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক করে। এরপর নয়ন মোবাইল চার্জারের ক্যাবল দিয়ে আশা দেবীর মুখের মধ্যে পেচিয়ে দিয়ে এবং পাশে থাকা ওড়না দিয়ে আশা দেবীর গলা পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই আলামত ও প্রমাণসহ চার্জশিট জমা দেবে পুলিশ। এর আগে, নবমীর রাতে বগুড়া বানাইল উত্তরপাড়া পূজা মণ্ডপে দায়িত্ব শেষে বাড়ি ফিরলে হত্যা করা হয় নারী আনসার দলনেত্রী আশা দেবীকে। মঙ্গলবার এ ঘটনায় নিহতের মা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন পরবর্তী বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এই প্রেস ব্রিফিং এ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) স্নিগ্ধ আখতার পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) আব্দুর রশিদ, শিবগঞ্জ থানার ওসি আব্দুর রউফ, মোকামতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আশিক ইকবালসহ জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।