// সঞ্জু রায়:
বছরঘুরে কৈশাশ থেকে দেবী দূর্গা এসেছিলেন মর্তে, বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে আজ মা বিদায় নিবেন। তবে মহালয়া থেকে শুরু হওয়া শারদ উৎসবের আমেজে এখনো মেতে আছে সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তবৃন্দরা ষষ্ঠী থেকে নবমী যেমন ছিলো জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন তেমনি আজ ঢাকের তালে সম্পন্ন হচ্ছে বিজয়া দশমীর আনুষ্ঠানিকতা।
তবে বিভাগীয় শহরে রাজশাহীতে শারদ উৎসবে এবার নজর কেড়েছে মালোপাড়ায় অবস্থিত শ্রী শ্রী লক্ষ্মী নারায়ণ দেব বিগ্রহ ঠাকুর মন্দিরের ব্যতিক্রম আয়োজন।
আলপনা অঙ্কিত ঐতিহ্যবাহী গ্রাম বাংলার ঘরের মাঝে ১৯৪৭ সালের দেশভাগ থেকে শুরু করে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সৃষ্টি ও বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের পরিচিত হওয়ার অগ্রযাত্রা যেন এক পর্দায় ফুটে উঠেছে।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের যে চারটি স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে মুজিববাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যেমন বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্ম নিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র। তাই মন্দিরের প্যাণ্ডেলের চারটি পিলারের নাম দেওয়া হয়েছে চারটি স্তম্ভের নামানুসারে। যার উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাস লিখিত এক ব্যানার।
ব্যানারের শুরুতে ১৯৪৭ সালের দেশভাগ, ৫২ র ভাষা আন্দোলন, ৫৪ র সাধারণ নির্বাচন, ৬৬ এর ছয় দফা, ৬৮ এর আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৬৯ এর গনঅঅভ্যুত্থান, ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধর ছবির পাশাপাশি সকলের বোঝার সুবিধার জন্য রয়েছে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা।
২০১৩ সালের গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিতকরণের জন্য দেশব্যাপী যে গনজাগরণ হয়েছিল তাও বর্ণীত রয়েছে একই ফ্রেমে। মন্দির ঘুরে আরো দেখা যায়, ২০২১ সালের দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ক্ষত যে এখনও সংখ্যালঘুদের মাঝে রয়েছে তা বোঝানোর জন্য এর প্রতিবাদও স্থান পেয়েছে একই ফ্রেমে।
সেট সাথে ব্যানারে ফুটে উঠেছে ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে স্ব-পরিবারে হত্যা ও জাতীয় চার নেতার কাপুরুষোচিত হত্যাকান্ডের নির্মম চিত্রও যার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে হানাদার বাহিনীর নির্মমতার প্রতিচ্ছবি।
মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক পাপন রায়ের সাথে বললে তিনি জানান, মা দুর্গাকে বরণ করতে তাদের ধর্মীয় আয়োজনে কোন ত্রুটি ছিলোনা। কিন্তু তাদের শুরু থেকেই ইচ্ছা ছিলো বর্তমান প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে এবার এই সৃজনশীল আয়োজন করা হয়েছে এবার ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নয়, দেশব্যাপী উন্নয়নের অংশ হিসেবে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রুপপুর পারমানবিক কেন্দ্র স্থান পেয়েছে তাদের মন্দিরের ফ্রেমের উন্নয়ন অংশে। এছাড়াও আমাদের মেয়েরাও যে আজ পিছিয়ে নেই তারাও যে বিশ্বকে জয় করতে পারে তা বোঝানোর জন্য সাফ চাম্পিয়ানে বাংলাদেশের মেয়েদের বিশ্বকাপ জয়ের ছবি যে তা স্মরণ করে দেয়। আর উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় শিক্ষানগরী রাজশাহী যে পিছিয়ে নেই তা বোঝানোর জন্য গ্রিন সিটি ক্লিন সিটি রাজশাহীর বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক ছবি স্থান পেয়েছে ফ্রেমের শেষ অংশে।
আর ফ্রেমের সবার উপরে বড় করে লিখা রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সাল ১৯৭১ যার প্রতিটা অঙ্ক যেন প্রকাশ করে এক তর্জনীর হুংকারে নয়মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে সাত জন বীরশ্রেষ্ঠ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের বিনিময়ে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ বাংলাদেশ। সবমিলিয়ে সকল উৎসবের মাঝেও যে দেশপ্রেম অন্তরে জাগ্রত রাখা যায় তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ এবারের লক্ষ্মী নারায়ণ দেব বিগ্রহ ঠাকুর মন্দিরের আয়োজন।