পুনর্মিলন 

এনামুল হক টগর

জীবন এখন পঞ্চাশ পেরিয়ে দূর ওই বহুদূরে আরশের দিকে চলমান!

আমি হলাম সৃষ্টির সসীম পূর্বনাম শুক্রকীট জন্মের রূপান্তরে মানব জীবন!

আমার উপরে তিনি অসীম অনাদি অনন্ত অক্ষয় অব্যক্ত চিরজীবি!

অতীন্দ্রিয় অভিজ্ঞতায় তোমার ও আমার মধ্যে দূরত্ব নেই শ্বাশত চির-সজিব।

বাস্তবতার চেতনায় আজ মধ্য-রাতে নতুন স্বপ্ন দেখলাম তাৎপর্যপূর্ণ গৌরব।

মায়ের পবিত্র জঠর থেকে এই মাতৃভূমিতে প্রাণের দীর্ঘ বাসনা ইতিহাস আহ্বান-

প্রথম যে দিন আমি ভূমিষ্ঠ হয়েছিলাম এই মাটিতে সেই পুরাতন!

আজ এই মৃত্তিকা ও পৃথিবীকে আবার আলিঙ্গন করলাম পুনর্জাগরণ!

আমি স্বপ্নের গভীরে প্রিয় মাতৃভূমিকে আলিঙ্গন করলাম পুনর্জীবন!

সেই শৈশব সেই কৈশোর সেই জন্মের শিশুকাল প্রগতির পুনর্মিলন!

গায়ের ছোট নদী বড় নদী আঁকা বাঁকা কুল কুল ধ্বনি ঢেউয়ে ঢেউয়ে প্রতিধ্বনি।

মুক্ত হাওয়া দিগন্ত ফসলের মাঠ সোনালী শস্য দানা পুষ্প নন্দন।

পাঠশালায় লেখা পড়া শিক্ষকের শাসন পিতা মাতার আর্দশ শিক্ষা চেতনা।

গুল্লাছুট পলান টুক টুক কানামাছি সিবুড়ি খেলায় চঞ্চল জাগরণ,

অরণ্য প্রকৃতির বুকে চাঁদের জ্যোৎস্না চুমু দেয় কামিনী হাসনা হেনা।

প্রভাতের পাখিগুলো দূর আকাশে পাখা মেলে উড়ে যায় খাদ্যের আহরণ।

গায়ের কৃষাণ কৃষাণি ফসল ফলায় সাম্যের মাঠে সুষম বণ্টন।

প্রিয়তম পিতা প্রিয়তম মাতা প্রিয়তম জন্মভূমি প্রেমের বন্ধনে প্রিয় স্বজন।

দুঃখ কষ্টের গভীরে আমার সাথে অতীন্দ্রিয় আলিঙ্গন করলো বিদগ্ধ সর্বজন!

ইতিহাসে বাবার চাকরি জীবন মানসিক হাসপাতাল মুক্তিযুদ্ধ প্রথম সূর্যদোয় বিজয় ভূখণ্ড নতুন।

আমার দুচোখে আনন্দ অশ্রু ঝরলো নিঃসঙ্গ জীবন প্রকৃতির প্রেমে চন্দন।

হৃদয়ের গভীরে প্রেম ভালোবাসা করুন আর্তনাদ করলো বিষাদ ক্রন্দন।

অভাব অনাটন দরিদ্র ক্ষুধায় অসহায়রা চিৎকার করলো সিক্ত দুটি নয়ন।

নিথর পৃথিবী বিচূর্ণ সময় আমার সাথে প্রতিক্ষায় দাঁড়িয়ে রইলো অনাগত মরণ!

তৃ্ষ্ণার্ত হৃদয়ে অতন্দ্র দেশপ্রেমিক আমি সমাজকে আলিঙ্গন করলাম প্রেম পরিচয়।

ধীরে ধীরে বললাম যদি আমি আর কোন দিন ফিরে না আসি মাতৃভূমির চেতনায়,

তবে বুঝে নিও আমি ঘুমিয়ে পড়েছি আমি ঘুমিয়ে পড়েছি নিরব প্রশান্ত অবেলায়।

সময়ের প্রবাহে কৈশোর পেরিয়ে আমি এখন ধীরে ধীরে বহুদূর-

ভবিষ্যৎ যৌবনের দিকে হাঁটতে লাগলাম প্রগতিশীল সংস্কার-

ভালোবাসা লুকোচুরি হাডুডু গাদন মাছধরা পিকনিকে যাত্রা জীবন চঞ্চল।

বড়াল ইছামতি ধলেশ্বরী চিকনাই ভৈরব ও বুড়িগঙ্গার বুকে ভাসলাম নির্মাল।

বর্ষার বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে নদীর স্রোতে ভাটিয়ালি গান গাইলাম উজানে সরল।

নিশীথ রাতে কোকিলের গানে ঘুম ভেঙে গেলে প্রিয়াকে বিরহে খুঁজতাম গীতিময়।

তাল বাগান আম বাগান লিচু বাগান আতা বাগান পুষ্প ফলে শোভা সৌরভ উদয়।

শ্যামল মাঠে ঘুড়ি উড়াতাম লুটোপুটি সন্ধার আঁধারে বন্ধুদের সাথে খেজুর রস কারাকারি।

পালা গান যাত্রা গান বাউল ও একতারায় সাহিত্য আসরে কবিতা আবৃত্তি সুন্দর,

রাতের গভীরে জ্বল জ্বল জোনাকি দূরের হাটখোলা ষ্টেশন হুইসিল ধস ধস রেলগাড়ি।

টার্মিনাল মোটরগাড়ি রিকশা ভ্যান বাইক গাঁয়ের বধূ গরুর গাড়িতে যাত্রা বৈচিত্র্য।

আউলা ঘর বাউবি বাতাস দূরে ডাঙার ব্রীজ জুংগি পাখিগুলো উড়ে যায় মধুর চিত্র।

কখনো সে পরাণ প্রিয়ারে খুঁজে বেড়ায় ভোরের আলোতে দিওয়ানা নয়ন।

কলেজ ক্যাম্পাস বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস রাজপথে মিছিল শ্লোগান অধিকার জীবন।

বায়ান্ন ঊনসত্তর ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ রক্তপাত স্বাধীনতার সূর্যোদয়।

নব্বইয়ের গণ আন্দোলন পুলিশের লাঠিচার্জ মামলা বন্দী জেলখানায়।

কতো হত্যা কতো ধ্বংস কতো গুম খুন চলমান রাজনীতির উত্থান পতন বিবাদ।

কঠিন দুর্দিন ও কঠিন আঁধার ভেঙে নতুন সংস্কার সূর্য সকালে চাষাবাদ।

ইচ্ছে করে জন্মভূমির কাছে আবার ফিরে আসি বার বার ফিরে আসি নব নব তরুণ তরুণী!

ইচ্ছে করে মাতৃভূমির সাথে মিলিত হই অতীন্দ্রিয় অভিজ্ঞতায় তৃতীয় নয়ন!

কি বিস্ময় অলৌকিক আজ রাতে ধ্যান তপস্যার সাধনায়!

আর অতীন্দ্রিয় খোয়াবে সবার সাথে দেখা হলো পুনর্মিলন আলিঙ্গন পরিচয়!

সময়ের প্রয়োজনে আমি আবার রাতের আঁধার ভেঙে ফিরে আসবো নতুন সংসার!

যদি কোন দিন আমি আর ফিরে না আসি বেদনা ব্যথায় ক্লান্ত অসহায়,

তবে ভেবে নিও আমি ঘুমিয়ে পড়েছি আমি ঘুমিয়ে পড়েছি ওপারের দীর্ঘ বেদনায়।

এভাবেই হাঁটতে হাঁটতে ভাগ্যক্রমে যৌবন একদিন ক্লান্ত হবে বার্ধক্য সনাতন!

জগত তাঁর নিয়ম কাননেই চলে চক্রকারে ঘুরে ফিরে দিকে দিকে অনাগত বিজন!

মাঝে স্ত্রী সন্তান ও স্বজনরা অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে উঠে প্রেমময় সর্বজন।

অনেক সূর্যের দিন অনেক চন্দ্রের রাত হৃদয়ে দোলা দেই নিঃসঙ্গ প্রিয়জন!

স্মৃতি যেন সব সময়ই মনের গভীরে বেদনার ক্ষত সৃষ্টি করে বিচ্ছেদ মলিন,

পৃথিবীর গুহা ভেদ করে কতো যুগ কতো শতাব্দী হারিয়ে গেছে অজানার বাসনা।

পথের সাথে পথের হয় দেখা তারপরও কতো পথ অচেনাই থেকে কতো জীবন।

সময় যেন বৃত্তের গভীরে মহাকালের দীর্ঘ ইতিহাস অক্ষয় ভূবন!

ইতিহাস যারা ভুলে যায় দুঃখ তাদের কাছে ফিরে আসে বার বার বেদনা।

মনে পড়ে যুদ্ধ বিজয় স্বাধীনতা রাখার রাজার মহা-দেশপ্রেম সাম্য চেতনা।

আধুনিক গতিশীল বিজ্ঞানের গবেষণা রাজনীতির কৌশল সুফির সাধনা।

কর্মজীবন শেষের দিকে ছাত্র ছাত্রী শিক্ষক কর্মচারী নবীন বরণ বিদায় সান্তনা।

অন্ধকে রাস্তা পারাপার কর্মকৌশল ও কর্মপ্রচেষ্টায় দূর বহুদূর জীবন-

ধর্মের বিধানে হেদায়েত সফর শায়খের সাথে দ্বীনের তরিকা প্রচার,

তপস্যায় তপস্যায় মহান রবের সাথে মহামিলন ফানায় একাকার!

সাধনায় এক ফোঁটা পানি সাগরে মিশে বলে আমি মহা-সমুদ্র দীপ্তকর!

কিন্তু মিলনের পূর্বেও সে ছিল এক ফোঁটা জল তৃষ্ণার বিরহ ক্রন্দন!

প্রতিটি নূরই যেন মহা-নূরের দিকে ধাবিত অনাদি অনন্ত প্রবাহমান-

প্রতিটি আত্মাই যেন মহাত্মার দিকে ধাবিত চিরন্তন গতিশীল চলমান-

মক্কায় শরিয়া কাবা হৃদয়ের গভীরে নূর নূর-মুহাম্মদ সাঃ এর মহানূর,

যেখানেই উদ্ভাসিত সেখানেই আমার জীবন্ত কাবা পবিত্র অন্তর!

ধ্যানে মহাত্মার সাথে মহামিলনে সাধক উপলব্ধি করে শ্বাশত চিরন্তন প্রেক্ষাপট।

এটাই মহা-বিশ্বচৈতন্যের মহা-সামদ্রিক অনুভূতি ও উপলব্ধির বিশাল তট।

পুরোটা জগতই যেন জীবন্ত আদম মুহাম্মদ সাঃ অবয়ব সুরতে মহামানব!

গোধূলির মৃত্যু হলে রাত্রির আগমনে আমিও ফিরে যাবো মহান রবের গৌরব।

অনির্বাণ শিখায় মহামিলনের বাসনা মহাআলিঙ্গন হবে মহা-পুনর্মিলন ফানায়!

প্রিয়তম পৃথিবী প্রিয়তম জন্মভূমি প্রিয়তম মহাবিশ্ব যদি আর কোন দিন আমি ফিরে না আসি মানব!

তবে এটাই হয়তো তোমাদের সাথে আমার শেষ দেখা ভালোবাসার দীর্ঘ ইতিহাস সৌবভ।

তবে এটাই হয়তো তোমাদের সাথে আমার শেষ আলিঙ্গন পুনর্মিলন জীবন বিশ্বাস!

এই শেষ বয়সে আমি যদি আর কোন দিন তোমাদের কাছে ফিরে না আসি নিঃশেষ,

তবে বুঝে নিও আমি একেবার ঘুমিয়ে পড়েছি বিদায় বিদায় অবশেষ।