// আজিম উল্যাহ হানিফ //
১৯৬৫ সালে কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার জোড্ডা পূর্ব ইউনিয়নের আটঘরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবিএম সোলায়মান মজুমদার। এলাকায় পরিচিত ‘সোলাইমান বিএসসি’ নামে। পিতা- হাজী মাঈন উদ্দিন মজুমদার, তিনি মাকু খলিফা নামে পরিচিত। মাতা-তাহেরা খাতুন। ৬ ভাই ১ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। ১৯৮২ সালে নাঙ্গলকোট এ আর হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন। ১৯৮৪ সালে এইচএসসি পাশ করেন লাকসাম নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ থেকে। লাকসাম সরকারি কলেজ থেকেই বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্ররাজনীতির হাতে খড়ি ঘটে নাঙ্গলকোট এ আর হাইস্কুলে পড়াকালীন সময়ে। শিক্ষক ছিলেন গফুর বিএসসি স্যারের শাসনই তার জীবনে মোড় ঘুরিয়ে দেয়। স্বপ্ন জাগে-স্যারের মত নিজের নামের সাথেও একদিন বিএসসি শব্দটি যোগ হবে। ১৯৮০ সালের দিকে নাঙ্গলকোট উপজেলা সৃস্টির জন্য তুখোড় আন্দোলন সংগ্রাম শুরু হয়। এআর হাইস্কুল মাঠে আসেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। কুমিল্লা-১৬ আসনের সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীন ভূইয়া, ওমর আহমেদ মজুমদার, ভিপি সাদেক হোসেন চেয়ারম্যান,ভিপি হুমায়ুন কবির, মোখলেছ চেয়ারম্যান, সচিব আবদুল করিম মজুমদার, প্রিন্সিপাল আবদুস সাত্তার, প্রিন্সিপাল আবদুল মন্নান, হাজী যৌবন আলী, কাজী আবদুল হক, কবি এস এম আবুল বাশারসহ সিনিয়রদের সাথে যে কয়জন ছাত্রনেতা ও ছাত্র উপস্থিত ছিলো, তার মধ্যে সোলাইমান বিএসসি একজন। ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন লাকসাম নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজে। কলেজের ছাত্রসংসদের ভিপি তখন হুমায়ুন কবির, তিনি ভিপি ছিলেন ১৯৭৮ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত। সেখানে ভর্তি হয়ে ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে তুখোড় ছাত্রনেতায় বনে যান তিনি। দায়িত্ব পান ছাত্র (হোস্টেলের) হলের সভাপতি হিসেবে। সেখানে থেকে দায়িত্ব আসে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে। ১৯৮৩-৮৯ কলেজের ছাত্রত্ব সময়ে নামডাক পড়ে যায় ‘নেতা’ হিসেবে। এরশাদ বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে লাকসামবাসী ‘নেতা’ নামেই সোলাইমান বিএসসিকে চিনতো ও জানতো। তবে নাম নেতা হলেও মানুষ হিসেবে ছিলেন নরম ও শান্ত স্বভাবের একজন ছাত্রনেতা। ১৯৮৭-৮৮ সালে কলেজ ছাত্রসংসদের নির্বাচনে ভিপি পদে নির্বাচন না করে বন্ধু অধ্যক্ষ মতিনকে ফ্লোর ছেড়ে দেন। কতটা সেক্রিফাইসের মনমানসিকতা থাকলে এমন কাজ করতে পারে একজন ছাত্রনেতা। বর্তমানে মতিন স্যার হেসাখাল নঈম নিজাম ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ছাত্রত্ব ও কলেজ সভাপতি হিসেবে নিজ এলাকার শ্রীহাস্য-মৌড়ে বাজার উদ্বোধন করেন তিনি। চাকরি জীবন কেটেছে- ব্যাংকে, বটতলী এম এ মতিন হাইস্কুল, জোড্ডা মাদ্রাসা, কাশিপুর মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করে। ১৯৯০ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দাম্পত্য জীবনে ২ ছেলে, ২ মেয়ে কন্যা সন্তানের জনক তিনি। বড় সন্তান চাটিতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পরিবারের সবাই আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত। নিজে দলের প্রয়োজনে দায়িত্ব পালন করেছেন ইউনিয়ন ও গ্রাম-ওয়ার্ড লেভেলের সকল ধরণের কেন্দ্র কমিটিতে। ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক ও সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সায়েম মাহবুব স্মৃতি সংসদের সদস্য, ভিপি হুমায়ুন কবির স্মৃতি সংসদের সদস্য, ভিপি সাদেক হোসেন চেয়ারম্যান স্মৃতি সংসদের সদস্য হিসেবে ও দায়িত্ব পালন করেছেন। সপরিবারে হজ¦ব্রত পালন করার নিয়ত ছিলো। সহপাঠী হিসেবে সম-সাময়িক হিসেবে পেয়েছেন সামছুদ্দিন কালু, নঈম নিজাম, সায়েম মাহবুব, আবদুল করিম মজুমদার, রফিকুল হায়দার মজুমদার, ভিপি অধ্যক্ষ আবদুল মতিন, মেসবাহ উদ্দিন মিশু, এএফএম শোয়ায়েব, সাংবাদিক এইচ এম আবুল খায়ের প্রমুখ। ১৯৯৭ সালে একমাত্র বোন ছালেহা বেগম, ২০১৬ সালের জানুয়ারী মা তাহেরা খাতুন, একই সালের নভেম্বরে বাবা মাইন উদ্দিন মজুমদারের পর ২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সোলাইমান বিএসসিও চলে গেলেন। আল্লাহ ওনাকে জান্নাত নসীব দান করুন, আমিন।
লেখক: আজিম উল্যাহ হানিফ,কবিও কলামিস্ট। ০১৮৩৪-৩৮৯৮৭১