// ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি-
পদ্মা,ভুবনেশ্বর সহ ফরিদপুর চরভদ্রাসনের সব নদ-নদী খালে চলছে চায়না জাল ও দুয়ারি দিয়ে মাছের বংশ নির্মূল চলছে। মৎস্য সম্পদ ধ্বংসের এ যজ্ঞে প্রকাশ্যে কাজ করছে নদী পাড়ের হাজারো মানুষ, যেন দেখার কেউ নেই।
চরভদ্রাসন উপজেলার চরাঞ্চলে মৎস্যজীবী মানুষের বেশির ভাগই এখন ব্যবহার করছে নিষিদ্ধ চায়নার জাল ও চায়না দুয়ারি। প্রকাশ্যেই তারা এসব উপকরণ দিয়ে ছোট-বড় সব ধরনের মাছ ধরে শেষ করে দিচ্ছে মৎস্য ভাণ্ডার। ফলে প্রতিবছরই কমে আসছে মাছের পরিমাণ।
এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আর এসব নদী থেকে মাছ আহরণ করতে পারবে না বলে শঙ্কা স্থানীয়দের। তাদের দাবি চায়না জাল ও দুয়ারী উৎপাদন যেন বন্ধ করা হয়, এসব উপকরণের সহজ লভ্যতার কারণেই জেলেরা উৎসাহিত হচ্ছে ব্যবহারে ধারণা তাদের।সরেজমিনে উপজেলার পদ্মা নদী বেষ্টিত চরাঞ্চল হরিরামপুর ইউনিয়নেরওচর ঝাউকান্দা ইউনিয়নের পদ্মা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পদ্মার সংযোগ খালগুলোতে চায়না দুয়ারি পেতে রাখা হয়েছে। ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত জালে আটকে থাকা মাছগুলো তুলছে জেলেরা। তবে দূর থেকে ট্রলার আসতে দেখে অনেক জেলে পালিয়ে যায়। গিয়ে পাওয়া যায় চার জেলেকে।
কথা হয় জেলেদের সঙ্গে। নিষিদ্ধ এসব উপকরণ দিয়ে মাছ শিকার আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ জেনেও জীবিকার অজুহাতে তারা এসব করছেন বলে স্বীকার করেন। তাদের দাবি, বর্ষা মৌসুমে তাদের জন্য বিকল্প পেশার ব্যবস্থা বা প্রণোদনার।
শেখ কুদ্দুস বলেন, নদী ভাঙনে আমার বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। কোনোরকমে টিনের ছাপড়া উঠিয়ে স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে রয়েছি। চরাঞ্চলে তেমন কোনো কাজও নেই। তাই মাছ ধরে বিক্রি করে যা পাই, তা দিয়েই কোনোরকমে সংসার চলছে।তিনি আরও বলেন, ‘এভাবে চায়না দুয়ারি দিয়ে মাছ ধরা অপরাধ জানি, কিন্তু কী করব পেটের দায়ে এগুলো করতে হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরা ছাড়া অন্য কোনো কাজ নেই, তাই মাছ মেরে জীবিকা নির্বাহ করি। ভয়ে ভয়ে থাকি কখন অভিযানে ধরা পড়ি, কিন্তু কি করবো, জীবনতো চলে না।’
সালাম শেখ বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে বর্ষা মৌসুমে আমাদের প্রণোদনা দিলে আমরা মাছ ধরব না। পেটের দায়ে এগুলো করি। চরে বসবাস করা কতটা কষ্টের আমরা ছাড়া কেউ বুঝবে না।’
চর কল্যাণপুরের এক বাসিন্দা রিয়াদ খলিফা বলেন, চায়না দুয়ারি দিয়ে মাছ শিকার করায় অনেক ক্ষতি হচ্ছে। এ জাল দিয়ে মাছ শিকার করলে সব ধরনের মাছ জালে আটকে পড়ে। ছোট বড় সব ধরনের মাছ আটকে যায়। ভবিষ্যতে দেশীয় মাছ আর পাওয়া যাবে না।
তিনি আরও বলেন, জেলেরা পেটের দায়ে এই জাল দিয়ে মাছ মারছে, কিন্তু দেশীয় মাছের সংকট দেখা দিবে। এই জাল যেখানে তৈরি ও বিক্রি করা হয় সেখানে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে। জাল না পেলে জেলেরাও মাছ শিকার করতে পারবে না। আগে যেভাবে অন্য জাল দিয়ে মাছ শিকার করতো, সেই জাল দিয়ে শিকার করলে এই ধরনের ক্ষতি হবে না।
এদিকে দুর্গম চরাঞ্চলে মাঝে মধ্যেই ভ্রাম্যমাণ আদালত ও মৎস্য অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করে জেল জরিমানা ও জাল পুড়িয়ে ধ্বংস করলেও থামছে না চায়না দুয়ারি দিয়ে মাছ শিকার।
চরভদ্রাসন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারি জাল ধ্বংস করতে চালানো হচ্ছে অভিযান। বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে একাধিক ব্যক্তিকে জেল জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া কয়েকশত চায়না দুয়ারি জাল জব্দ করে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, চরভদ্রাসন উপজেলায় যারা ‘চায়না দুয়ারি জাল যারা তৈরি এবং বিক্রি করছে তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালানো হবে। দুর্গম চরাঞ্চলে এ সব জাল দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে। ওই সকল এলাকায় অভিযান চালানোও কঠিন, তারপরও ঝুঁকি নিয়েই প্রতিনিয়ত আমরা অভিযান পরিচালনা করছি।’