জি-২০ সম্মেলনে অতিথি তালিকায় কারা ? বাংলাদেশকে প্রাধান্য দিচ্ছে ভারত

// চলতি বছর জি-২০ সম্মেলনে ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ তথা ‘এক পৃথিবী-এক পরিবার-এক ভবিষ্যৎ’ লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে ভারত। বৈশ্বিক অন্তর্ভুক্তির ওপর ভিত্তি করে এটিকে এজেন্ডা বলে মনে করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব দৃঢ় করার লক্ষ্যে ভারতের সুদূরপ্রসারী উচ্চাকাঙ্ক্ষাও রয়েছে। আগামী ৯-১০ সেপ্টেম্বর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনকে ঘিরে বড় স্বপ্ন দেখেছে মোদি সরকার এবং মিশর, মরিশাস, নাইজেরিয়া ও ওমানসহ বেশ কয়েকটি নতুন দেশ বৈঠকে বসবে এই সম্মেলনে।

সেই সঙ্গে এবারের সম্মেলনে অতিরিক্ত অতিথি দেশ হিসেবে প্রথমবারের মতো অংশ নেবে বাংলাদেশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বহু বছর ধরে কৌশলগত ব্যাকওয়াটার হিসেবে বিবেচিত বাংলাদেশ এখন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভূ-নৈতিকভাবে বৈশ্বিক পরিবর্তনের একটি অংশ। ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অনন্য স্বাক্ষর রেখেছে বাংলাদেশ। বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি ও স্থিতিশীল জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারের কারণে ১৬০ মিলিয়ন জনসংখ্যার শতাব্দীর মধ্যভাগ নাগাদ এদেশ ২৩তম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে বলেও অনুমিত হচ্ছে।

এছাড়া, ভারতের জন্য বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক কেন্দ্র। যা স্থল ও সমুদ্র- উভয় দিক থেকেই পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার ও চীনকে সংযুক্ত করেছে। সেই কারণে আঞ্চলিক স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায় দিল্লি কর্তৃপক্ষ। এর মধ্য দিয়ে চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার একটি ভারসাম্য সৃষ্টি হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ এরই মধ্যে ভারতের পর্যটন শিল্পে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। চলতি বছর এপ্রিলে জাপান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি সংযোগকারী বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি একটি বাণিজ্যিক অ্যাক্সেস পয়েন্ট হিসেবেও দেখা যেতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে অভিন্ন পানির অধিকার ইস্যু বিতর্কিত হলেও ভারতের জ্বালানি খাতের লক্ষ্য বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্ত। গত মার্চে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ির একটি হাব থেকে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের পার্বতীপুর পর্যন্ত ডিজেল পরিবহনের জন্য ১৩০ কিলোমিটার পাইপলাইন উদ্বোধন করে দুই দেশ। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যুদ্ধ দমনেও ঢাকার প্রভাব ছিল অনেক।

এছাড়া, ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশকে তার ‘প্রতিবেশী প্রথমে’ নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা বোধগম্য।মায়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সীমান্ত রয়েছে, তা দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে অবস্থান করছে। বঙ্গোপসাগরে এর অবস্থান এটিকে ভারত মহাসাগরের একটি উপকূলীয় রাজ্যে পরিণত করে, যা ক্রমবর্ধমান পরিমাণে বৈশ্বিক বাণিজ্য বহন করে।

কিন্তু ভারতই একমাত্র দেশ নয়, যারা বাংলাদেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, বাংলাদেশে আরও অনেক দেশ প্রভাব বিস্তার করতে চায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চীন। বাংলাদেশকে তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে দেশটি। বিনিয়োগ, ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ও পরিবহন সংযোগ এবং রাজনৈতিক সারিবদ্ধটা, ভারত মহাসাগরে প্রভাব তৈরি ও মালাক্কা প্রণালীতে বিকল্প রুট তৈরির জন্য চীনের কৌশলের অংশ বলেও মনে করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র যখন বাংলাদেশের নির্বাচনী অগ্রগতি ও মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং কোয়াডের সঙ্গে সহযোগিতার আহ্বান জানানোরও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, তখন চীনের হস্তক্ষেপ হীন নীতি এবং বাংলাদেশের জোট নিরপেক্ষ নীতি তাদের সম্পর্ককে মসৃণ করতে সহায়তা করেছে।

বাংলাদেশ দল নির্বাচন না করার ব্যাপারে সতর্ক ছিল। দেশটি ইউক্রেনের যুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রধান শক্তিগুলির সঙ্গে তার সম্পর্ক বজায় রেখেছে।

পাশাপাশি বাংলাদেশের নিজস্ব অগ্রাধিকার রয়েছে। যেমন দেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী, স্থানীয় অবকাঠামোর প্রয়োজনীয়তা, দারিদ্র্য বিমোচন ও গ্লোবাল সাউথের অপরাপর সাবেক উপনিবেশের মতো, খেলায় হাতিয়ারের পরিবর্তে খেলোয়াড় হওয়া। ঢাকা জি-টুয়েন্টি মতো বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সতর্কতার সঙ্গে এগিয়ে যাবে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।