// আব্দুল জব্বার , পাবনা:
আলোচিত-সমালোচিত পাবনা সদর উপজেলার দোগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে বদলি আদেশের পরও দায়িত্ব না ছাড়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও নতুন ম্যানেজিং কমিটিকে গ্রহণ না করা এবং নানা স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নানা অনিয়মের কারণে দোগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম আমিনুল ইসলামকে পাবনা সদর উপজেলার চর তারাপুরের ভাদুরী ডাঙ্গী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়েছে। কিন্তু বদলি আদেশের বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হলেও নতুন কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে দোগাছি বিদ্যালয়েই দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও গত দুই মাস আগে নতুন ম্যানেজিং কমিটি অনুমোদন হলেও সেটি তিনি মেনে নিচ্ছেন না। নতুক ম্যানেজিং কমিটিকে দায়িত্বগ্রহণে বাধা দিচ্ছেন।
স্থানীয় ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১০ সালের দিকে দোগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনি যোগদান করেন। যোগদান করার পর থেকেই বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন বাদ দিয়ে তিনি অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয় পড়েন। শিক্ষা অফিস থেকে প্রতি বছর স্লিপের টাকা আসলেও সেটা দিয়ে বিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কাজ না করে নিজে আত্মসাত করে আসছেন। শিক্ষার্থীদের থেকে অতিরিক্ত পরীক্ষার ফি নেওয়া হয়। বিদ্যুৎ বিল থেকে শুরু করে রুম ঝাড়ু দেওয়ার আসবাবপত্র শিক্ষার্থীদের থেকে টাকা উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন সময় রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের জন্য ৩০ টাকা করে নেওয়া হলেও শিক্ষার্থীদের রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করেনি। চাকুরী করার জন্য বা অন্য কোন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রশংসাপত্র নিতে গেলে তাদের থেকে ৫০০ করে টাকা দাবি করেন প্রধান শিক্ষক। এমনকি সার্টিফিকেট আনতে গেলেও তাদের থেকে টাকা আদায় করা হয়।
তারা আরও অভিযোগ করেন, সপ্তাহে দুই-তিন দিন বিদ্যালয়ে এসে হাজিরা খাতায় সাক্ষর করে স্কুল থেকে বেড়িয়ে যান। ৬০০শ শিক্ষার্থীদের জন্য ১৫ জন শিক্ষক হলেও শিক্ষকরা নিয়মিত স্কুলে না এসে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে টাকা দিয় ম্যানেজ করে হাজিরা খাতায় সাক্ষর নেন। এক সময়ে এই স্কুলের সুনাম ছড়িয়ে পড়লেও বর্তমান প্রধান শিক্ষকের গাফিলতিতে বিদ্যালয়ের পরিবেশ হযবরল অবস্থা। গত মাসের ১৭ তারিখে সদরের চরতারাপুর ইউনিয়নের ভাদুরী ডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বদলীর আদেশ হলেও সেখানে না গিয়ে তিনি দোগাছি স্কুলে গিয়ে সাক্ষর করে অফিস করেন। গত ১৫ আগষ্টে জাতীয় শোক দিবসে সারাদেশের স্কুলগুলোতে বিবসটি পালনের নির্দেশনা থাকলেও ওই বিদ্যালয় সেটি তালাবদ্ধ অবস্থায় ছিল।
পাবনা সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোশাররফ হোসেন সাক্ষরিত একটি কমিটি গত দুই মাস আগে অনুমোদন করা হলেও তিনি বর্তমান কমিটিকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। তার মনপুত লোককে সভাপতি করতে তিনি নতুন কমিটিকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে গড়িমসি করছেন।
বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী শাওন হোসেন ও আরমান বলেন, আমি জাতীয় পরিচয়পত্র করার জন্য স্কুলে একটি প্রশংসাপত্র আনতে গেলে প্রধান শিক্ষক আমার থেকে ৫০০ টাকা দাবি করেন। কেন টাকা দেব? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন তাহলে তোমাকে প্রশংসাপত্র দেওয়া হবে না। সার্টিফিকেট আনতে গেলেও টাকা ছাড়া দেন না। আমরা স্কুলে আসলে তাকে পাইনা। মাঝেমধ্যে আসলেও ঘন্টা খানেক থেকে সে চলে যায়। আশপাশের স্কুলগুলোতে ভালো লেখাপড়া হলেও এখানকর শিক্ষার্থীরা ঠিকমত রিডিং পড়তে পারে না। আমাদের ছোট ভাইবোন এখানে পড়াশুনা করলেও স্কুলের কোন শিক্ষক তাদের খবর নেয় না।
বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি শফিউদ্দিন খান বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় আছে। এলাকার কিছু চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের ছত্রছায়ায় তিনি আধিপত্য বিস্তার করে চলেন। তাকে দ্রুত এখান থেকে অপসারণ করা হোক। তাকে আমরা আর এক মিনিটও চাইনা।
সদ্যবিদায়ী সভাপতি আসলাম হোসেন বলেন, আমি তার সঙ্গে তিন বছর থেকেছি কিন্তু তাকে মানুষ করতে পারলাম না। স্কুলে তো উনি ঠিকমত আসেনই না দুএকদিন এসে সাক্ষর করে বিদ্যালয় থেকে বেড়িয়ে যান। অনিয়ম-দুর্নীতির ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে তিনি স্কুল পরিচালনা করে আসছেন। আমি নিজে তাকে একটি ফটোকপির মেশিন কিনে দিয়েছিলাম। কিন্তু সেটি তিনি বাড়িতে নিয়ে গেছেন। অফিস রুমে বা শ্রেণিকক্ষে নতুন ফ্যান লাগানো হলে তিনি সেটি খুলে বাড়িতে নিয়ে যান। সম্প্রতি তার বদলির আদেশ হলেও এখানে অফিস করেন। আসলে এখানে কি এতো মধু আছে যে বদলির পরেও থাকতে হবে?। তার মনপুত না হওয়ায় বর্তমান নতুন কমিটিকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। উন্নয়নমূলক কাজের জন্য উপজেলা থেকে টাকা বরাদ্দ দিলেও সেগুলো তিনি আত্মসাত করেন। সব কিছুর তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক একেএম আমিনুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে আর কি করা। বর্তমানে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছি। আগামী সপ্তাহে এখান থেকে ভাদুরী ডাঙ্গী স্কুলে চলে যাবো। অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি ফোন কেটে দেন।
পাবনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, আমি মাত্র কয়েকদিন এখানে যোগদান করেছি। আমি শুনেছি যে তার বদলির আদেশ হয়েছে। তবে নতুন আসাতে তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে তেমন জানি না। ম্যানেজিং কমিটিকে কেন দায়িত্ব বুঝিয়ে দিচ্ছেন না সে বিষয়ে উপজেলা অফিসে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।