// নাটোর প্রতিনিধি
ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলায় নাটোর শহরের বে-সরকারি (বিসমিল্লাহ হাসপাতাল) এর কথিত পরিচালক উজ্জল হোসেন (৩২) কে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। তার বিরুদ্ধে ওই হাসতালের এক নারী কর্মি গোসলের ভিডিও ধারণ করে ভয়-ভীতির মাধ্যমে টানা দুই বছর ধর্ষণ এবং তার গর্ভের চার মাসের সন্তানকে নষ্ট করে উজ্জল । এ অভিযোগে দুইজনকে অভিযুক্ত করে গত ১২-৬-২৩ নাটোর থানায় মামলা দায়ের করেন ওই ভুক্তভোগী নারী। অভিযুক্ত উজ্জল নলডাঙ্গা উপজেলার পূর্ব মাধনগর গ্রামের আক্তার হোসেনের ছেলে। ভুক্তভোগী নারী নলডাঙ্গা উপজেলার বাসিন্দা। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবী , উজ্জল এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক নয়। বন্ধুত্বের সুত্রে হাসপাতালে তার উঠা-বসা, রুগীরপ্রতি কমিশন ভিত্তিক ছিল তার কাজ।
এদিকে বৃহষ্পতিবার (১০ আগষ্ট) বিকেলে নাটোর সদর আমলি আদালতের বিচারক মো. রওশন আলমের আদালতে আতœসমর্পণ করলে উজ্জলকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। অপর আসামি সোহাগ (২৪) উচ্চ-আদালত থেকে জামিন নিয়ে তিনি ওই হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন।
ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালে ওই নলডাঙ্গা পৌর শহরের বিসমিল্লাহ হাসপাতালে কর্মকালিন সময়ে অভিযুক্ত উজ্জলের নজরে পরেন ভুক্তভোগী। ওই হাসপাতাল বন্ধ হওয়ার পর, নাটোর শহরের বিসমিল্লাহ হাসপাতাল শুরুর সময় ভিকটিম মাঠ কর্মি হিসাবে কাজ করেন। পরে অন্য হাসপাতালে ভুক্তভোগী নাসের্র চাকুরী নিলেও এর মধ্যে এক রোগীকে ওই ক্লিনিকে চিকিৎসা দিতে আনার সূত্র ধরে উজ্জলের সাথে তার যোগাযোগ হয়। তখন উজ্জল নির্দিষ্ট কমিশন প্রদানের শর্তে ভুক্তভোগী নারীকে ওই ক্লিনিকে রোগী পাঠাতে বলেন।
এভাবে ধীরে ধীরে উজ্জলের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে ভুক্তভোগী নারীর। এক পর্যায়ে উজ্জল ওই নারীকে ক্লিনিকের মাঠকর্মী হিসেবে কাজের প্রস্তাব দিলে তিনি রাজি হন। তখন থেকে হাসপাতালে চাকরির পাশাপাশি রোগী বেশি থাকলে বা কোনো রোগীর রাতে অপারেশন হলে ভুক্তভোগী নারী রাতে হাসপাতালে অবস্থান করতেন।
গোসলের ভিডিও এবং তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক এ কাজে বিসমিল্লাহ হাসপাতালের অন্যরা জড়িত আছেন।তাদের সহযোগিতায় সে আমাকে দুই বছর ধরে ধর্ষণ করেছে। তার মোবাইল,ল্যাপটপ ও অন্য ডিভাইসে এসব ছবি ও ভিডিওর প্রমাণ পাওয়া যাবে। আমি এ ঘটনায় বিচার চাই।
নাটোর থানায় গত ১২জুন (নারী-শিশু নির্যাতন দমন আইন) মামলা নং ২৭/২৩ এর এজাহার সুত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের মাঝামাঝি রোগীর চাপের কারনে এদিন ভুক্তভোগী নারী হাসপাতালে অবস্থান করেন।ওইদিন বাথরুমে গোসলের সময় উজ্জল হোসেন সোহাগের সহায়তায় গোপনে ভিডিও ধারণ করেন। এক পর্যায়ে শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেন উজ্জল। তাতে রাজি না হওয়ায় গোপনে ধারন করা গোসলের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবার হুমকি দেন।ওই নারী ঘটনাটি পুলিশকে জানানোর উদ্যোগ নিয়ে উজ্জ্বল তাকে হাসপাতালের কাজে যোগ দিতে বলেন ও তার সামনে ফোন থেকে গোসলের ভিডিওটি ডিলিট করার আশ্বাস দেন। উজ্জলকে বিশ্বাস করে ওই নারী বিকেলে হাসপাতালে কাজে যোগ দিতে গেলে হাসপাতালের ৬তলায় উজ্জলের শোবার ঘরে ডেকে নিয়ে যান ও রাতভর তাকে ধর্ষণ করেন।এই ধর্ষণের ভিডিও গোপন ক্যামেরায় ধারণ করেন উজ্জল।এবার এই ভিডিও ছড়িয়ে দেবার হুমকি দিয়ে টানা দুই বছর উজ্জল তার শোবার ঘরে নিয়ে ওই নারীকে ধর্ষণ করেন।এই সময়ের মধ্যে ওই নারী গর্ভধারণ করলে উজ্জল জোরপূর্বক গর্ভপাত ঘটাতে বাধ্য করেন। সর্বশেষ গত ২রা জুন উজ্জল আবারো ওই নারীকে হাসপাতালে তার কক্ষে আটকে ধর্ষণ করে।অবশেষে সইতে না পেরে ওইদিন সে নাটোর থানায় মামলা দায়ের করে।
এব্যপারে হাসপাতালের শেয়ারে থাকা রিপন হোসেন বলেন, হাসপাতালটি ২য় তলা থেকে ৪র্থ তলা ভারা নেয়া। অভিযুক্ত উজ্জল এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক নয়।এই ভবনের ৬ষ্ঠ তলা ভারা থাকেন। বন্ধুত্বের কারনে তার হাসপাতালে উঠা-বসা। রুগীর এনে কমিশন ভিত্তিক ছিল তার কাজ। এর বাইরে সে যদি কাউকে প্রতিষ্ঠানের মালিক বা পরিচালক পরিচয় দেয় তা হবে প্রতারনা।
এব্যাপারে অভিযুক্ত ্ধসঢ়;উজ্জলের বড় ভাই গ্রাম্য ডাক্তার আশরাফুল জানান, বিডিআর বিদ্রোহ পর চাকুরি চলে গেলে তার ছোট ভাই বেকার না থেকে ক্লিনিক ও হাসপাতালে চাকুরী শুরু করেন।
পূর্ণ বয়সে বিয়ে না করা ও নারী কেলেঙ্কারি বিষয়ে তিনি বলেন, বাবা মা অসুস্থ্য এবং বাড়িতে ঘড় দুয়ার না থাকায় বিয়ে করছে তার ভাই। এছারা আগে এধরনের কোন অভিযোত পায়নি পাননি তার ব্যপারে।
নাটোর শহরের এক ক্লিনিক মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কিছু প্রতিষ্ঠান আছে তারা স্বাস্থ্য সেবার আড়ালে নারী ঘঠিত কর্ম-কান্ডে জরিয়ে পরছে। এতে বেশ কজন ক্লিনিক ও হাসপাতালের নারী কর্মি খুন হইছে। এগুলো ব্যপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে সে-সরকারি এ স্বাস্থ্য সেবার উপর প্রভাব পরবে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম আহমেদ বলেন, ধর্ষণের অভিযোগ ভুক্তভোগী নারী থানায় মামলা দায়ের করে। পুলিশ গুরুত্বের সাথে মামলাটি নিয়েছে।বর্তমানে আদালতের নির্দেশে উজ্জল কারাগারে রয়েছে।
নাটোর জেলা পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম পিপিএম জানান, হাসপাতালে ভেতরে একজন নারীকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করার ঘটনাটি পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।অভিযুক্ত পরিচালকের মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ বা অন্য কোনো ডিভাইসে আরো অন্য নারীদের ব্লাকমেইলের কোনো ছবি বা ভিডিও রয়েছে কি না তা অনুসন্ধান করবে পুলিশ।অপরাধ করে কেউ পার পাবে না।