(পুর্র্ব প্রকাশের পর)
এবাদত আলী
(সর্ব কালের সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে সদ্য স্বাধীন বাংলার মাটিতে ফিরে আসার পর ১৯৭২ সালের ১৮ জানুয়ারি বিদেশী সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন‘‘ যে মানুষ মরতে রাজি, তাকে কেউ মারতে পারেনা। আপনি একজন মানুষকে হত্যা করতে পারেন। সেটাতো তার দেহ। কিন্তু তার আত্মাকে কি আপনি হত্যা করতে পারেন? না তা কেউ পারেনা। এটাঁই আমার বিশ্বাস। )
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দেশের কল্যানে নতুন নতুন আইনের প্রবর্তন করেন। তিনি “ লালঘোড়া দাবড়ায়ে দেবো ”বলে বজ্রকন্ঠের ভাষণে হুসিয়ারি উচ্চারণ করেন। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে। এহেন নাজুক পরিস্থিতি এড়াবার লক্ষে সুখি ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলে সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য শাসনতন্ত্র পরিবর্তন করে পার্লামেন্টারী পদ্ধতির বদলে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি চালু করা হয়। দ্বিতীয় বিপ্লব ঘোষণা করা হয়। রাজনৈতিক দলের নামকরন করা হয় ‘ বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ’ বা “বাকশাল”।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাঙালির সন্তান। বাংলার কৃষক শ্রমিক মেহেনতি মানুষদের নিয়ে তিনি সারাজীবন স্বপ্ন দেখেছেন। তাদের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য সংগ্রাম করেছেন। যৌবনের অধিকাংশ রোমাঞ্চকর বছরগুলো তিনি কারগারের নিভৃত প্রকষ্ঠে নিঃসঙ্গ কাটিয়ে দিয়েছেন।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় জড়িয়ে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠি তাঁকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলাতে চেয়েছিল , কিন্তু বাংলার জনগণ ব্যাপক আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁকে মুক্ত করেছিল।
বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য তিনি ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রমনা রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দিতে গিয়ে বজ্রকন্ঠে উচ্চারণ করেন “ আমাদের সংগ্রাম-মুক্তির সংগ্রাম। আমাদের সংগ্রাম- স্বাধীনতার সংগ্রাম। তিনি দ্ব্যার্থহীন কন্ঠে বলেছিলেন, রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেবো, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআললাহ।”
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠি এই বলিষ্ঠ কন্ঠস্বরকে চিরদিনের তরে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে তাঁকে আটক করে পাকিস্তানে নিয়ে যায়। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। দীর্ঘ নয়মাস কারাগারে বন্দি অবস্থায় তাঁর উপর প্রতিমূহুর্তে চালানো হয় অকথ্য নির্যাতন। কিন্তু বাংলার মানুষের ন্যায্য দাবি প্রতিষ্ঠার লক্ষে তিনি সকল অত্যাচার বরণ করে নিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে সেখানে কবর পর্যন্ত খনন করা হয়েছিল। সে সময়ও তিনি অবিচলভাবে বলেছিলেন, “ তোমরা আমাকে হত্যা করো তাতে আমার আপত্তি নেই: কিন্তু তোমাদের কাছে আমার শেষ অনুরোধ আমার লাশটি বাংলার মাটিতে পৌঁছে দিও।”মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যে ব্যক্তি বাংলার মানুষকে ভুলতে পারেননি সেই ব্যক্তির এহেন বিষাদময় শেষ পরিণতি সত্যিই ভাবতে অবাক লাগে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশকে সুখি ও সমৃদ্ধশালী একটি দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। এই বাংলাকে তিনি “সোনার বাংলা” হিসাবে গড়ে তুলে এ দেশের মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে সাধ তার অপুর্ণই থেকে যায়। ঘাতকেরা তা হতে দেয়নি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট সুবেহ সাদেকের সময় তাঁর এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের বুক বুলেটে বুলেটে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল। ফলে চিরতরে স্তব্ধ হয়ে যায় বজ্রকন্ঠের হুঙ্কার। (চলবে) (লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।
এবাদত আলী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট