// নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীদের ওপর হামলাকারী আত্মস্বীকৃত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহবান জানিয়েছে বিএনপি। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় নাটোর জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এই আহবান জানান জেলা বিএনপির আহবায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গতকাল সোমবার ভোরে জনসমাবেশ কর্মসূচির প্রস্তুতি নিতে নিজ বাড়ি থেকে দলীয় কার্যালয়ে আসছিলেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রহিম নেওয়াজ। পথে তাঁকে রাস্তায় ফেলে হাতুড়ি ও লোহার পাইপ দিয়ে নির্মমভাবে পেটানো হয়। সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলামের নির্দেশে তাঁর চিহ্নিত সহচরেরা এ হামলা চালান। একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ও অসুস্থ ব্যক্তিকে বিনা কারণে আহত করে রাজনৈতিক রীতিনীতি ভঙ্গ করা হয়েছে। শুধু তা–ই নয়, এ ঘটনার পর সংসদ সদস্য নিজে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে এসে বিএনপি নেতা-কর্মীদের দেখামাত্র মারপিট করার হুকুম দিয়েছেন, যা নাটোরের রাজনীতিকে কলুষিত করেছে। আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম ও তাঁর প্রতিপক্ষ শরিফুল ইসলাম দুটি পক্ষ (গ্রুপ) গঠন করে সহিংসতার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। নাটোরকে রক্তাক্ত জনপদে পরিণত করেছে।
আওয়ামী লীগের নেতাদের সহিংস রাজনীতি পরিহার করে শান্তিপূর্ণ, অহিংস রাজনীতি করার আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ ও সহাবস্থানের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। তাই ধৈর্য ধরে আছি। কিন্তু ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেলে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের জন্য ভালো হবে না। আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।’
এ সময় তিনি বলেন, আজকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে মানুষকে রাস্তায় ফেলে পিটিয়ে তা মিডিয়ার কাছে স্বীকার করার পরও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় না পুলিশ। শহরে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘুরলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। এতে আইনের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে মানুষ বাঁচার তাগিদেই রুখে দাঁড়াবে, প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। তিনি বলেন, শুধু রহিম নেওয়াজ নয় আমাকেও তারা হত্যার জন্য আক্রমন করে তার দায় স্বীকার করেছিল তারপরও তখন কোন ব্যবস্থা হয়নি বলেই আজ রহিম নেওয়াজের উপরে এমন হামলা হলো। নাটোর আজ সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত হয়েছে অবিলম্বে এর অবসান হওয়া দরকার। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ শহর জুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী সদরের এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান সন্ত্রাস এবং রাহাজানীর প্রতিযোগীতায় নেমেছে। তারা বিএনপির নেতাকর্মীকে কে কতটা নির্যাতন করতে পারে সেটাই মনে হয় তাদের মনোনয়নের পূর্বশর্ত। এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণেই তার অনুসারী সন্ত্রাসীরা জেলা বিএনপির কার্যালয়ে হামলাসহ একের পর এক বিএনপি নেতাদের উপরে হামলা করছে।
সংসদ সদস্য শফিকুলকে হুঁশিয়ার করে শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বাড়াবাড়ি করবেন না। বাড়াবাড়ির ফল ভালো হবে না। পরিস্থিতি খারাপ হলে আপনি কানাডায় বেগমপাড়ায় চলে যাবেন। কিন্তু যাঁদের দিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করাচ্ছেন, তাঁদের কী হবে? ভুলে যাবেন না, আমরা একই শহরের বাসিন্দা। একজন পিতার বয়সী মানুষকে ছেলের বয়সী তরুণদের দিয়ে পিটিয়েছেন। এটা কোন রাজনীতি?’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে জেলা বিএনপির সদস্য ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহীন, বিএনপি নেতা বাবুল চৌধুরী, ফয়সাল আলম আবুল, জেলা যুবদল সভাপতি এ হাই তালুকদার ডালিম, সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম আফতাব, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ, ছাত্রদল সভাপতি কামরুল ইসলামসহ জেলা ও শহর বিএনপির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। নেতৃবৃন্দ জানান, আওয়ামী লীগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রহিম নেওয়াজের উপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল জেলার বিভিন্ন থানায় বিক্ষোভ করা হয়েছে। আজও বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর ও সিংড়াসহ বিভিন্ন উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ হয়েছে। সরকারের অপকর্মের প্রতিবাদে এই কর্মসূচী চলবে। বাচ্চু জানান, দুটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা অসুস্থ্য নেতা রহিম নেওয়াজ মারপিটের পর এখনো কথা বলতে পারছেন না, তিনি কিছুটা সুস্থ্য হলে তার মুখে ঘটনা শুনে মামলা করা হবে। এরপর কোন ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন ব্যর্থ হলে কঠোর প্রতিরোধ ও আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তখন কোন উদ্ভুত পরিস্থিতি তৈরি হলে তার দায়ও প্রশাসনকেই নিতে হবে। প্রসঙ্গত সোমবার দলীয় কর্মসূচীতে যোগ দিতে জেলা কার্যালয়ে যাওয়ার পথে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজকে রাস্তায় পিটিয়ে আহত করে রাস্তায় ফেলে যায় সন্ত্রাসীরা। পরে তাকে প্রথমে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও পরে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
বিএনপির সংবাদ সম্মেলন সম্পর্কে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কর্মীরা ভীত নন। হুমকি–ধমকি দিয়ে লাভ হবে না। কোন টোকাই কী বলল, তাতে আমার কিছু যায়–আসে না।’ বিএনপি কার্যালয়ের সামনে গিয়ে বিএনপির নেতাদের মারপিট করার হুকুম দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যারা করবে, আগুন–সন্ত্রাস যারা করবে, মানুষের ঘরবাড়ি যারা পোড়াবে, তাদের আমি হুঁশিয়ার করেছি। এও বলেছি যে ২০১৪ সালের মতো কেউ আগুন–সন্ত্রাস করলে তার বাড়ি সিলগালা করা হবে। বিএনপির নেতারা যদি এসব করে, তাহলে তাই করা হবে।’