ইলিশের স্বাদ কেন নয় আগের মতো


১৯৩২ সালের কথা। সিরাজগঞ্জে নিখিলবঙ্গ মুসলিম যুব সম্মেলনে এসেছেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। খেতে বসে দেখতে না দেখতে বড় দুই টুকরো ইলিশ ভাজা সাবাড় করে ফেললেন তিনি। ঘটনাটি লক্ষ করে পরিবেশক এগিয়ে এসে তার থালায় আরও ভাজা ইলিশ দেওয়ার চেষ্টা চালালেন। বাধা দিয়ে কবি তাকে বললেন, ‘আরে, করছ কী? শেষকালে আমাকে বিড়ালে কামড়াবে যে!’ কিন্তু বিড়ালে কেন কামড়াবে? উৎসুক সবার এ প্রশ্নের উত্তরে কবি নজরুল জানালেন, ‘ও, বুঝতে পারছেন না! ইলশে মাছ-যে মাছের গন্ধ মুখে লালা ঝরায়, বিড়ালকে মাতাল করে তোলে। বেশি খেলে কি আর রক্ষে আছে!’

সেই ইলিশের স্বাদ এখন পাওয়া কঠিন। সময় বদলানোর কারণেই কি? নাকি এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে জলবায়ু পরিবর্তন ও আমাদের জলাশয় রক্ষা করতে না পারার ব্যর্থতা। তবে ইলিশের স্বাদ তার আহরণক্ষেত্র অনুযায়ী ভিন্ন হয়। বৈজ্ঞানিকভাবে যদি ব্যাখ্যা করতে হয়, ইলিশ মাছ যখন নোনা পানি থেকে মিষ্টি পানিতে আসে, তখন তার শরীরে অনেক ধরনের বদল হয়। নোনা পানিতে থাকার সময়ে তার কিডনি বিশেষ কায়দায় কাজ করে। কিন্তু মিষ্টি পানিতে ঢুকতেই কিডনির গঠন বদলাতে শুরু করে। ইলিশ যখন সমুদ্রে থাকে তখন তার শরীরে থাকে আয়োডিনসহ নানা উপাদান। মিষ্টি পানিতে ঢোকার পরেই মাছ সেগুলো শরীর থেকে বের করে দিতে শুরু করে। ফলে শরীরে চর্বির পরিমাণ বাড়তে থাকে। এরসঙ্গে নারী মাছের শরীরে ডিম আসে। এই বদলগুলোর কারণেই মাছের স্বাদ বাড়ে।

কিন্তু এখন নদীতে মাছ আসার আগেই সমুদ্রে ধরে ফেলা হয়। তাই ইলিশের বাহ্যিক পরিবর্তনের সময় পাওয়া যায় না। তবে নদীর ইলিশের স্বাদও যে অটুট রয়েছে তা বলা যাবে না। কারণ, নদী দখল-দূষণে ভারাক্রান্ত। নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও মাছের অভয়ারণ্য নষ্ট হওয়ায় ইলিশ যা খাচ্ছে তাও তার শরীরে প্রভাব ফেলছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎসবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান জানান, ‘ইলিশের অভয়ারণ্য ধ্বংসের পাশাপাশি নদীতে কলকারখানার বর্জ্য মিশে ইলিশের শরীরে প্রভাব ফেলছে। এখন ইলিশের পাকস্থলীতে ৩০ শতাংশ বালু পাওয়া যায়। তাছাড়া রাসায়নিক উপাদান নদীতে মেশায় ইলিশ খাবারের সঙ্গে তা শরীরে নিচ্ছে। ফলে ইলিশের স্বাদেও বদল আসছে।’

ইলিশের পরিচিত স্বাদ রক্ষার জন্য ইলিশকে সমুদ্র থেকে ৩০-৪০ কিলোমিটার ভেতরে অর্থাৎ নদীতে আসতে দিতে হবে। তাহলেই রক্ষা করা যাবে। শুধু ইলিশকে বিচরণের ক্ষেত্র দিলেই হবে না। ইলিশের অভয়ারণ্য নদীরক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।