// কামরুল হাসান,টাঙ্গাইল প্রতিনিধি t ঃ টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় ৬০ বছরে এক বৃদ্ধা মাকে জমি লিখে না দেওয়ায় কাঠের রোলার দিয়ে বেধরক পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছেন ছেলে। শুক্রবার( ২৭ জুলাই) দুপুরে উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের মাদারজানী ঘোষ পাড়ায় এ ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন ভুক্তভোগী মা।
স্থানীয়রা জানায়, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নে মাদারজানী ঘোষ পাড়ায় ৬০ বছরের বৃদ্ধা মাকে দিনের পর দিন মারধরসহ নানা অত্যাচার করত বড় ছেলে দুর্লভ ঘোষ (৩৮)। সর্বশেষ শুক্রবার দুপুরে পুনরায় জমি লিখে দিতে চাপ প্রয়োগ করে ছেলে। এতে মা মধু বালা ঘোষ রাজি না হওয়ায় দুর্লভ ক্ষিপ্ত হয়ে বৃদ্ধা মাকে কাঠের রোলার দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। পরে প্রতিবেশীরা আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায় সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মধু বালা ঘোষ কাঁদতে-কাঁদতে থানায় গিয়ে ছেলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
নির্যাতনের শিকার মধু বালা ঘোষ জানান, দুই ছেলে এক মেয়েকে রেখে তার স্বামী অনিল ঘোষ দীর্ঘদিন পুর্বে পরলোক গমন করেন। অনেক কষ্টে ছেলে-মেয়েদের বড় করে তোলেন তিনি। বাবার বাড়ি থেকে পাওয়া জমি বিক্রি করে মেয়েকে বিয়ে দেন এবং দুই ছেলের মধ্যে ছোট ছেলেকে সিঙ্গাপুর পাঠান। এছাড়া বড় ছেলে দুর্লভ ঘোষকে ব্যবসা করার জন্য ৫ লাখ টাকা পুঁজি দেন। কিছুদিন যেতে না যেতেই তার বাবার বাড়ি থেকে প্রাপ্য অবশিষ্ট জমি বড় ছেলের নামে লিখে দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ ও মানুষিকভাবে অত্যাচার করতে থাকে। একপর্যায়ে জমি লিখে না দেওয়ায় তাকে পিটিয়ে আহত করে ছেলে দুর্লভ। লোকলজ্জার ভয়ে এসব কথা প্রকাশ করেননি তিনি। শুক্রবার দুপুরে পুনরায় জমি লিখে দেওয়ার জন্য চাপ দেয় ছেলে দুর্লভ। এতে অপরাগতা প্রকাশ করলে কাঠের রোলার দিয়ে তাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে ছেলে। এ ঘটনায় তিনি ছেলে দুর্লভের নামে থানায় অভিযোগ দাখিল করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, স্থানীয় আদম ব্যবসায়ী তপন ঘোষের মদদে বড় ছেলে তাকে ভরণ-পোষণের খরচ দেয়না। পূবের্ও তাকে মারধর করে স্বামীর বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলো ওই ছেলে। সেই ঘটনার পর তিনি দীর্ঘদিন তার বাবার বাড়িতে ছিলেন। পরে তার দেবরের সহযোগীতায় স্বামীর বাড়ির এককোনে কোন রকমে ভাঙা একটি দোচালা ঘর ঠিকঠাক করে পুনরায় পৃথকভাবে বসবাস শুরু করেন তিনি।
মাদারজানী গ্রামের অধিবাসী ও সরকারি সাদ’ত কলেজের ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রতন মিয়া, সাবেক ছাত্র নেতা মো. সুজন মিয়া, সমীর ঘোষ, চন্দন ঘোষ জানায়, স্বামীর মৃত্যুর পর অনেক কষ্ট করে তিন সন্তানকে বড় করেন বিধবা মধু বালা। সংসারের প্রয়োজনে ইতোপুর্বেও তিনি বাবার বাড়ির জমি বিক্রি করে ছেলে-মেয়েকে সমান হারে টাকা বন্টন করে দেয়। তারপরেও বড় ছেলে দুর্লভ মাকে ভরণ-পোষণ না করে পুনরায় পৈত্রিক সুত্রে প্রাপ্ত অবশিষ্ট জমি লিখে দিতে বলে। জমি লিখে না দেওয়ায় ছেলে দুর্লভ শুক্রবার দুপুরে তার মাকে পিটিয়ে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম করে। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ঘটনা প্রসঙ্গে, করটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেকুজ্জামান চৌধুরী মজনু জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে,যতদ্রুত সম্ভব বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য।
টাঙ্গাইল মডেল থানার পুলিশের উপ-পরিদর্শক(এসআই) মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।