// সন্তান ছেলে কিংবা মেয়ে, ছোট বা বড় যাই হোক না কেন ইসলাম তাদের মাঝে সমতা রক্ষার জোর নির্দেশ দিয়েছে। মা-বাবার আচার-আচরণ, স্নেহ-মমতা, দান-অনুদান, শাসন-অনুশাসন সব কিছুতেই সব সন্তানের প্রাপ্য সমান। এ বিষয়টির প্রতি মা-বাবার বিশেষভাবে নজর দেওয়া উচিত।
সন্তানদের মাঝে সমতা ও ইনসাফের কথা বলেছে ইসলাম। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, হে নবী আপনি বলুন, আমার প্রভু আমাকে ন্যায়বিচার করতে নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা যখন বিচার করো, ন্যায়বিচার করবে, তোমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করার জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি। (সূরা শুয়ারা-১৫)
সন্তানদের কোনো কিছু দেওয়ার ক্ষেত্রে সমতা বিধান করতে হবে। নুমান ইবনে বশির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমার বাবা আমাকে নিয়ে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে গেলেন এবং বললেন, আমি আমার এ ছেলেকে একটি গোলাম (চাকর) দিয়েছি। হজরত মুহাম্মদ (সা.) আমার বাবাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি তোমার সব সন্তানকেই এমন দিয়েছ? আমার বাবা জবাব দিলেন, না। হজরত মুহাম্মদ (সা.) বললেন, তাহলে এ গোলাম ফেরত নিয়ে নাও। (বুখারি: ২৫৮৬)
হজরত আমের (রহ.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি নুমান ইবনে বশীরকে (রা.) মিম্বরের ওপর বলতে শুনেছি যে, আমার বাবা আমাকে কিছু দান করেছিলেন। তখন আমার মা আমরা বিনতে রাওয়াহা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহকে (সা.) সাক্ষী রাখা ব্যতীত আমি এতে সম্মত নই। তখন আমার মা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট গেলেন এবং বললেন, আমি আমার গর্ভজাত ছেলেকে কিছু দান করেছি। হে আল্লাহর রাসুল (সা.) আপনাকে সাক্ষী রাখার জন্য সে আমাকে বলেছে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার সব ছেলেকেই কি এ রকম দিয়েছ? আমার মা বললেন, না। তখন হজরত মুহাম্মদ (সা.) বললেন, তবে এ বিষয়ে আল্লাহকে ভয় করো এবং আপন সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা করো। নুমান (রা.) বলেন, অতঃপর তিনি ফিরে এসে সেই দানটি ফিরিয়ে নিলেন। (বুখারি : হাদিস নং ২৪৪৭, মুসলিম : হাদিস নং ৪২৬৯)
অন্য একটি হাদিসে এসেছে, একজন আনসারি সাহাবিকে হজরত মুহাম্মদ (সা.) ডাকলেন। এমন সময় ওই সাহাবির এক ছেলে সন্তান কাছে এলো। তিনি তাকে চুমু খেয়ে বুকে জড়িয়ে নিলেন এবং কোলে বসালেন। এর কিছুক্ষণ পর তার এক মেয়ে সন্তানও সেখানে উপস্থিত হলো। তিনি তার হাত ধরে নিজের কাছে বসালেন। এটি দেখে হজরত মুহাম্মদ (সা.) বললেন, উভয় সন্তানের প্রতি তোমার আচরণ অভিন্ন হওয়া উচিত ছিল। তোমরা নিজেদের সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা করো। এমনকি চুমু দেওয়ার ক্ষেত্রেও। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক : হাদিস ১৬৫০১)
সন্তানদেরকে আদর্শ মানুষ গড়ার পাশাপাশি তাদের জন্য কিছু সঞ্চয় করাও ইসলামের শিক্ষা। সন্তানদের কারো মুখাপেক্ষী রেখে যাওয়া হজরত মুহাম্মদ (সা.) পছন্দ করেননি। তিনি বলেন, তোমার উত্তরাধিকারীদের মানুষের করুণার মুখাপেক্ষী রেখে যাওয়ার চেয়ে তাদের সচ্ছল অবস্থায় রেখে যাওয়াই উত্তম। (বুখারি: ৪৩৫, মুসলিম: ১২৫১)
অনেক বাবা-মা মৃত্যুর সময় সন্তানদের জন্য কিছু অসিয়ত করেন। কিন্তু এ অসিয়তে যদি কোনো উত্তরাধিকারীকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয় তবে সেই অসিয়ত ইসলামে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, যদি অসিয়ত কারো জন্য ক্ষতিকর না হয় তবে তা ঋণ পরিশোধের পর আদায় করা কার্যকর হবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও অশেষ সহনশীল। (সুরা নিসা: ১২)
হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, কোনো কোনো ব্যক্তি ৭০ বছর যাবত নেক আমল করে। কিন্তু অসিয়ত করার সময় জুলুম করে। তখন একটি খারাপ কাজের মাধ্যমে তার জীবনের সমাপ্তি ঘটে। ফলে সে জাহান্নামে যায়। আর কোনো কোনো ব্যক্তি ৭০ বছর যাবত খারাপ কাজ করে। কিন্তু অসিয়ত করার সময় সে ইনসাফ করে। এই একটি ভালো কাজের মাধ্যমে তার জীবনের সমাপ্তি ঘটে। ফলে সে জান্নাতে যায়। (আবু দাউদ: ২৮৬৭, তিরমিজি: ২১১৭)
আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি বাবা-মাকে সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষার তাওফিক দান করুন। আমিন।