মানুষের রক্তে ভিজছে যশোরেহ সড়ক, ৪ মাসে নিহত ৫৩

// ইয়ানূর রহমান :  মানুষের রক্তে ভিজছে যশোরের মহাসড়ক সড়ক। কিছুতেই থামানাে যাচ্ছে না মৃত্যুর মিছিল। দুর্ঘটনায় নিভছে অসংখ্য প্রাণ প্রদীপ। অতি দ্রুত গতি ও ওভারটেকিংয়ের প্রতিযোগিতায় ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা। শেষ হয়ে যাচ্ছে দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের স্বপ্ন। সম্প্রতি যশোর সদরের লেবুতলায় বাসের চাপায় একটি ইজিবাইকের ৮ আরোহী নিহত হন।  হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ মাসে যশোরের বিভিন্ন রাস্তায় ৫৩ জন নিহত হয়েছেন।

ফিটনেসবিহীন যানবাহন, সড়কের পাশে অবৈধ স্থাপনা, অদক্ষ ও লাইসেন্সহীন চালকদের কারণে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনায় আহতদের অনেকে পরিবারের বোঝা হয়ে বেঁচে থাকছেন। নিরাপদ সড়ক চাই যশোর জেলা কমিটির উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আবু মুরাদ জানান, সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে হলে সবাইকে সচেতন হতে
হবে।

জানা গেছে, যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়ক,  খুলনা-কুষ্টিয়া, যশোর-মাগুরা মহাসড়ক, যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক ও যশোর-সাতক্ষীরা অতিরিক্ত যানবাহনের চাপের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়া অতিরিক্ত গতি, ওভারটেকিং, অপ্রশস্ত রাস্তা,ওভার লোডিং,আইন অমান্য,প্রযুক্তির ব্যবহার,জনসংখ্যার চাপ ও অপ্রতুল পরিবহন
ব্যবস্থা, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, অদক্ষ ও লাইসেন্স বিহীন চালক, সড়কের ওপর অবৈধ হাটবাজার, অবৈধ স্থাপনা, যখন-তখন রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, রাস্তার মধ্যে প্রয়োজনীয় ডিভাইডার না থাকা, মাদক
গ্রহণ, অসুস্থ প্রতিযোগীতাসহ প্রভৃতি কারণে দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে।

বাঘারপাড়া উপজেলার যাদবপুর গ্রামের হেলাল উদ্দিন মুন্সীর ছোট মেয়ে খাদিজা (৭) খাতুন টনসিলে আক্রান্ত হয়। টনসিল অপারেশনের জন্য গত ৭ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যায় খাদিজাকে  নিয়ে  ইজিবাইকযোগে যশোর শহরের একটি
ক্লিনিকের উদ্দেশ্যে আসছিলেন মা নানী খালাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা।
পথিমধ্যে যশোর-মাগুরা সড়কের সদর উপজেলার লেবুতলার তেঁতুলতলায় ইজিবাইকটি পৌঁছালে সামনে থেকে রয়েল পরববহনের একটি বাসের চাপা দেয়। আঘাতে ইজিবাইকটি ভেঙে চুরে সড়কে মিশে যায়। দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৫ জনসহ মোট ৭ জনের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলো বাঘারপাড়া উপজেলার জোহরপুর ইউনিয়নের যাদবপুর গ্রামের হেলাল মুন্সীর দুই ছেলে হাসান ও হোসাইন (২), তার শাশুড়ি মাহিমা বেগম (৪৮), খালা শাশুড়ি রাহিমা খাতুন (৩৫),  রাহিমার মেয়ে জেবা খাতুন (৮), মথুরাপুর গ্রামের ওবায়দুর রহমানের ছেলে ইজিবাইক চালক মুসা (২৭), সদর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে ইমরান হোসেন (২৭) ও
তালবাড়িয়া গ্রামের নুর আলীর ছেলে মারুফ হোসেন মুন্না (২৬)। একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যুতে হেলাল মুন্সীর সংসার তছনছ হয়ে গেছে।

জময দুই ছেলেসহ সন্তান হারানোর বেদনায় এখনো চোখের পানি ফেলছেন তিনি ও তার অসুস্থ স্ত্রী সোনিয়া খাতুন।  ২৩ জুন শংকরপুর সন্যাসী দিঘীরপাড়ে কাভার্ডভ্যানের চাপায় নিভে যায় ৬ বছরের শিশু সাহাবীর প্রাণ।  দুর্ঘটনায়
গুরুতর জখম হয় শয্যাশায়ী তার পিতা বিল্লাল হোসেন।  ২২ জুন সদর উপজেলার রুপদিয়ার বটতলা মোড় ও বাঘারপাড়া উপজেলার পার্বতীপুর এলাকার ইট ভাটার কাছে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা শহরের আব্দুল হাকিম তালুকদারের ছেলে পিকআপ চালক রাজীব তালুকদার (৩০) ও বাঘারপাড়ার পুকুরিয়া
গ্রামের আলতাফ হোসেনের ছেলে আশরাফুল ইসলাম (৪২)। ১৩ জুন সদর উপজেলার চাঁচড়া বাবলাতলায় উল্টে যাওয়া ট্রাক চাপায় নাজির আহমেদ (৪০) মারা যান।
তিনি চাঁচড়ার নুরুল ইসলামের ছেলে। এভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় ধরে যাচ্ছে একের পর এক প্রাণ। নিভে যাচ্ছে অনেক পরিবারের স্বপ্ন।

হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ মাসে যশোরের বিভিন্ন রাস্তায় ৫৩ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবি, নববধূ, মেধাবী শিক্ষার্থী পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি রয়েছেন। এছাড়া দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন দুই শতাধিক।

নিরাপদ সড়ক চাই যশোর জেলা কমিটির উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আবু মুরাদ জানান, সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে। ইচ্ছামতো সড়ক ব্যবহার করা হচ্ছে। সড়কের গা ঘেষেই টোং দোকান, সবজির বাজার বসানো, সড়কের পাশে কাঠের গুড়ি ফেলা রাখা, রাস্তার উপরে যানবাহন দাঁড় করিয়ে রাখা, ফিটনেসবিহীন
গাড়ি, চালকের অদক্ষতা, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। মানুষের রক্তে ভিজে যাচ্ছে সড়ক।  তিনি বলেন সড়ক দুর্ঘটনা রোধে শুধু আইন করলেই হবেনা। পাশাপাশি সেই আইন প্রয়োগ করতে হবে।

বাংলাদেশ রোড ট্যান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) যশোর সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) এস এম মাহফুজুর রহমান জানান, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৯শ’ পেশাদার চালককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আরো ১ শ’ চালককে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। তিনি বলেন, মহাসড়কে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে নিয়মিত।
যানবাহন চালককে মামলা দিয়ে জরিমানার টাকা আদায় করা হচ্ছে। এরপরেও চালকদের নিয়মের মধ্যে রাখা যাচ্ছে না। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে  যানবাহনের চালক ও পথচারীদের উভয়কে সচেতন হতে হবে।#