// পাবনা প্রতিনিধি:
পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার চাঁদভায় মানসিক প্রতিবন্ধী এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ধর্ষকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বারের বিরুদ্ধে। ধর্ষিতার বাবা মারা গেছেন এবং মা একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও ভিক্ষুক হওয়ায় থানায় লিখিত অভিযোগ না দেয়ায় কোনো আইনি ব্যবস্থাও নেয়নি পুলিশ।
উপজেলার চাঁদভা ইউনিয়নের কোদালিয়া গ্রামে এঘটনা ঘটে। এর আগে ঈদুল আজহারের আগে এঘটনা ঘটলেও টাকার বিনিময়ে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ায় আলোচনা-সমালোচনা ঝড় উঠেছে।
অভিযুক্ত ধর্ষক আব্দুল লতিফ ওরফে গাছী লতিফ কোদালিয়ার পাশের গ্রাম মিয়াপাড়ার বাসিন্দা এবং পাবনার সদর উপজেলার মালিগাছা ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের ইউসুফ হোসেনের ছেলে। মিয়াপাড়ার শামসুল প্রামাণিকের জামাই। আরেক অভিযুক্ত সানোয়ার হোসেন সানু চাঁদভা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল আজহার কয়েকদিন আগে জমি কেনার বিষয়ে কথাবার্তা বলতে কোদালিয়া গ্রামে যান আব্দুল লতিফ। সেখান থেকে ফেরার পথে শ্যামলী (ছদ্মনাম) নামের মানসিক প্রতিবন্ধীকে পাটক্ষেতে নিয়ে ধর্ষণ করে ৫০টাকা দিয়ে ফেরত পাঠান। পরে বাসায় ফিরে ৫০ টাকা পাওয়ার কারণ জানতে চান নানী। এসময় ঘটনা খুলে বলেন ধর্ষিতা। পরে ধর্ষিতাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে চাইলে ভেস্তে দেন স্থানীয় মেম্বর সানু। এঘটনা জানাজানি হলে মেম্বার সানু ধর্ষিতার নানীকে তাদের গ্রামে ডেকে নিয়ে আপোষ করেন। নানীকে নামেমাত্র কিছু টাকা দিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দিলেও মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন মেম্বার সানোয়ার হোসেন সানু। ঈদের পর টাকা লেনদেন এবং ঘটনা ধামাচাপা দেয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে এলাকায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, ঈদের পর বিচার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ধর্ষিতাও মানসিক প্রতিবন্ধী এবং তার মাও মানসিক প্রতিবন্ধী। কয়েক বছর আগে ভ্যানচালক বাবা মারা যাওয়ায় ভিক্ষাবৃত্তি করে তাদের সংসার চলে। তাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তার নানী লোভ দেখিয়ে এবং ফুসলিয়ে এমন একটা ঘটনা ধামাচাপা দিল। মেম্বাররা এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ধর্ষক আব্দুল লতিফের বাসায় গিয়ে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও দেখা বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত মেম্বার সানোয়ার হোসেন সানু। তিনি বলেন, আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখেছি ধর্ষণের অভিযোগটি গুজব। আমার শোনার আগে দুইপক্ষ সামাজিক কায়দায় একটা সমাধান হয়েছিল। এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করার জন্য আমি আলোচনা করার আগেই তারা সমাধান হয়েছিল। কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। কোনো টাকা-পয়সা লেনদেন হয়নি। এইসব ঘটনায় চেয়ারম্যান-মেম্বরদের নামে টাকা খাওয়ার গুজব ওঠা স্বাভাবিক বিষয়।
এ ব্যাপারে চাঁদভা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল ইসলাম কামাল বলেন, লোকমুখে জেনে আমিও বিষয়টি নিয়ে খােঁজখবর নিয়েছি। আমরা প্রাথমিকভাবে ঘটনা র সত্যতাও পেয়েছি। আমরা চেয়ারম্যান-মেম্বাররা তো ধর্ষণের মতো ঘটনার বিচার-শালিস করার ক্ষমতা রাখি না। তবে আইনি সহায়তা দিতে পারবো। কিন্তু ধর্ষনের মতো ঘটনা যদি এভাবে সমঝোতা করি তাহলে ব্যাপারটা খুবই দুঃখজনক। তারপরও ভুক্তভোগীরা একেবারে অসহায়।
ঘটনার সত্যতা মিললেও থানায় লিখিত অভিযোগ না দেয়ায় কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন আটঘরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে যা যা পেয়েছি লিপিবদ্ধ করে রেখেছি। এখন যে কেউ অভিযোগ দিলে মামলা নিবো। কেউ যদি অভিযোগ না দেয়া আমরা তাহলে তো মামলা নিতে পারি না। বিশেষ করে নারী-শিশু আইনে মামলা নিতে ইয়ে আছে, কাউকে অভিযোগ দিতে হবে।