মাজহার মান্নান ,কবি, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এমন একজন কবি যাঁর লেখা বাংলা সাহিত্যের সকল শাখাকে সমৃদ্ধ করেছে এবং সৃজনশীলতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বাংলা সাহিত্যের এই মহান কবি ১৮৬১ সালের ৭ মে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, ছড়াকার, ঔপন্যাসিক, সুরকার, নাট্যকার, চিত্রশিল্পী, ছোট গল্পকার, প্রবন্ধকার, কণ্ঠশিল্পী, দার্শনিক এবং একজন সৃজনশীল মানবতাবাদী। তাঁর ৫২ টি কবিতার বই, ৩৮ টি নাটক, ১৩ টি উপন্যাস, ৯৫ টি ছোটগল্প, ৩৬ টি প্রবন্ধ এবং ১৯১৫ টি গান বাংলা সাহিত্যকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এই মহান কবি প্রায় ২০০০ টি ছবি এঁকেছেন। ১৯১৩ সালে তাঁর গীতাঞ্জলি গ্রন্থের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি কবিতা, ছোটগল্পের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে পরিপূর্ণ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর অনন্য সৃষ্টির মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত করেছেন। ১৯০১ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম। ১৯০৫ সালে তিনি বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯১৫ সালে, ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করে। কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি খেতাব ফিরিয়ে দেন। ১৯২১ সালে, তিনি গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য শ্রীনিকেতন নামে একটি সংস্থা স্থাপন করেন। তিনি তার তীক্ষ্ণ লেখনীর মাধ্যমে ভ্রাতৃত্বের বাণী প্রচার করেছেন। তাঁর সাহিত্যে মানবপ্রেম, দেশের প্রতি ভালোবাসা, প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা, বিশ্বজনীনতা ও সৌন্দর্যবোধ অত্যন্ত সুন্দর ও নিখুঁতভাবে বর্ণিত হয়েছে। সমাজকল্যাণের মাধ্যম হিসেবে তিনি গ্রামের দরিদ্র মানুষদের শিক্ষিত করার পরামর্শ দেন। তিনি তাঁর সাহিত্যে সামাজিক বৈষম্য, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও গোঁড়ামির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। তার গান মানবতাবাদ প্রচারে অনন্য ভূমিকা পালন করে চলেছে। তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু মানুষের হৃদয়ের দুঃখ, আনন্দ, মানবতার প্রেম। মানুষের ছোট ছোট কষ্টগুলিকে অনন্য কাব্যিকরূপে সাজাতে রবীন্দ্রনাথের কোন বিকল্প দেখা যায় না। তিনি লেখেন,” ছোট প্রাণ ছোট ব্যথা, ছোট ছোট দুঃখ কথা, নিতান্তই সহজ সরল, সহস্র বিস্মৃতি রাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি।”
তার গান মানবতাবাদ প্রচারে অনন্য ভূমিকা পালন করে চলেছে। তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু মানুষের হৃদয়ের দুঃখ, আনন্দ, মানবতার প্রেম। তার লেখনি তরুন মনে সাহস যুগায়, দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে যেতে ঝংকার তুলে তরুন হৃদয়ে। ” উদয়ের পথে শুনি কার বাণী ভয় নাই ওরে ভয় নাই, নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বলাকা’ (১৯১৬) ছিল মানবতাবাদের একটি মহান প্রকাশ যা প্রথম বিশ্বের প্রাদুর্ভাবের পরে রচিত হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বিভিন্ন কবিতায় নারীর সমসাময়িক বিভিন্ন সমস্যার কথা লিখেছেন এবং নিখুঁত কলমের আঁচরে তুলে ধরেছেন। তার পূরবী (১৯২৫ ) এবং মহুয়া (১৯২৯ ) কাব্যে মানবতাবাদ বাকপটুভাবে প্রকাশ করা হয়েছে এবং প্রেম এখানে নিখুঁতভাবে বর্ণিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের প্রথম সফল ছোটগল্পকার এবং তাঁর ছোটগল্পে যেভাবে মানবতাবাদকে তুলে ধরেছেন তা অন্য কোনো লেখকের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তিনি তাঁর ছোটগল্পে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্লেষণকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। রবীন্দ্র সাহিত্য ভাববাদী চেতনা পাঠকদেরকে এক কাল্পিক রাজ্যে নিয়ে যায়। ” নয়ন সম্মুখে তুমি নাই, নয়নের মাঝে নিয়েছো যে ঠাঁই।” তাঁর উপন্যাস, চোখের বালি, সমসাময়িক সময়ে বিধবাদের জীবনের সমস্যাগুলি অন্বেষণ করে এবং তাদের সমাধান করার চেষ্টা করে। উইলিয়াম শেকসপিয়ার মানুষের জটিল চরিত্রকে দারুনভাবে নাটকে ফুটিয়ে তুলেছেন। শেকসপিয়ার দেখাতে চেয়েছেন যে মানুষ সুযোগ পেলে যে কোন সময় কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠতে পারে। মানুষের মাঝে বিশেষ ধরণের ইগো/ অহম কাজ করে যেটা মানুষকে স্বরুপ বদলাতে তাড়িত করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যেও এই অহংবাদটি দারুনভাবে চিত্রিত হয়েছে। তিনি লেখেন, ” রথযাত্রা লোকারন্য মহা ধুমধাম, ভক্তরা লুটায়ে করিছে প্রণাম, পথ ভাবে আমি দেব, রথ ভাবে আমি, মূর্তি ভাবে আমি দেব, হাসে অর্ন্তযামী।”
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নৌকডুবি উপন্যাসে জটিল পারিবারিক দ্বন্দ্ব বা সমস্যাকে তুলে ধরেছেন এবং সেগুলোকে একটি নান্দনিক রূপ দিয়েছেন। তাঁর গোরা উপন্যাসে তিনি হিন্দু ও ব্রাহ্মসমাজের মধ্যকার দ্বন্দ্ব, সামাজিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং অন্যান্য বিষয়গুলিকে এমনভাবে মোকাবেলা করেছেন যা অন্য কোনো কবি-সাহিত্যিকের পক্ষে সম্ভব হয়নি এবং একই সঙ্গে তিনি বিশ্ব মানবতাবাদকে তুলে ধরেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘ঘোর-বাইরে’ ও ‘যোগাযোগ’ উপন্যাসে নারী-পুরুষের সম্পর্কের জটিল প্রকৃতিকে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন এবং দেখিয়েছেন কীভাবে প্রকৃত মানবতাবাদ প্রতিষ্ঠা করা যায়। তিনি তার ‘জাতীয়তাবাদ’ (১৯১৭) গ্রন্থে চরমপন্থী জাতীয়তাবাদের তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং বলেছেন, উগ্র জাতীয়তাবাদী চেতনা দিয়ে সত্যিকারের মানবতাবাদ প্রতিষ্ঠা করা কখনই সম্ভব নয়। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে তিনি দর্শনের উপর যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন, মানব ধর্ম (১৯৩৫) হিসাবে সংকলিত, তা সত্যিই মানবতাবাদের একটি দুর্দান্ত উদাহরণ। রবীন্দ্রনাথের লেখার মূল উপাদান মানব, মানবতা ও মানবতাবাদ।’ কাবুলিওয়ালা’ রবীন্দ্রনাথের জাগতিক মানবিক চেতনাকে প্রতিফলিত করে এবং বিশ্বমানবতার সুর প্রতিধ্বনিত করে। তিনি তাঁর সাহিত্যে মানবপ্রেম ও ভালোবাসার একটি শৈল্পিক ও সার্বজনীন রূপ দিয়েছেন এবং প্রমাণ করেছেন যে মানবতাবাদের ক্ষেত্র জাত, ধর্ম, বর্ণ, দেশ ইত্যাদির ঊর্ধ্বে। তিনি তাঁর ছোটগল্প দেনা-পাওনা-এ যৌতুকের ভয়াবহ চিত্র এঁকেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হৈমন্তীর জীবনে যৌতুকের করুণ পরিণতি অত্যন্ত শৈল্পিকভাবে চিত্রিত করেছেন এবং একটি কলুষিত সমাজের ভঙ্গুরতা দেখিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর অপরাজিতা গ্রন্থে লোভী মানুষের অমানবিক আচরণ এবং তাদের কুৎসিত চেহারার একটি করুণ চিত্র এঁকেছেন। মানবতার অবমাননার বেদনা মূর্ত হয়েছে রাকানাইর নিবুদ্ধতার গল্পে। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার গল্পে গল্পে সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। যে সমাজে পুরুষরা নারীর মর্যাদাকে অপমান করে আবার বিচারকের ভূমিকা পালন করে, সেই সমাজের নিন্দা করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি সর্বদা নীতিহীন সমাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন এবং মানবতার স্বার্থে কথা বলেছেন। তিনি ছিলেন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী এবং তার মেঘ ও রদ্রুর গল্পে ব্রিটিশ আমলাতন্ত্রের বর্বরতার নিন্দা করেছেন। তিনি তাঁর সাহিত্যে শাসক, বিচারক ও জমিদারদের অত্যাচারের প্রতিবাদ করেছেন। তিনি জাতি-বর্ণ বৈষম্য ও সামাজিক অসাম্যের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে লিখেছেন। বর্ণবাদ এবং বর্ণবাদ কীভাবে একটি সমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারে তার ‘ল্যাবরেটরি’ গল্পে তিনি সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। এই গল্পে তিনি জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এবং তার তীক্ষ্ণ লেখনী দিয়ে সেটা ফুটিয়ে তুলেছেন। বৃটিশ শাসনামলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রবর্তনের ফলে কীভাবে দরিদ্র মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং মানবতা বিনষ্ট হয়েছিল তার চিত্র তিনি তাঁর ‘মুসলমানী’ গল্পে এঁকেছেন।তিনি তাঁর সাহিত্যে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সর্বজনীনতার দর্শন প্রচার করেছেন যা ছিল একটি মানবতাবাদের চালিকা শক্তি। মানবতাবাদী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নারীর মর্যাদা রক্ষায় লিখেছেন এবং নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লেখালেখি চালিয়ে গেছেন। তিনি যৌতুক, সহমৃত্যু, বিধবাত্ব, বহুবিবাহ এবং সমাজে নারীর মর্যাদাকে কলঙ্কিত করে এমন অন্যান্য ক্ষতিকর বিষয়ের তীব্র বিরোধিতা করেন। তাঁর ছোটগল্পের মূল বিষয় ছিল নারীমুক্তি। তাঁর গল্পে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কাদম্বিনীকে এমনভাবে চিত্রিত করেছেন যা সত্যিকার অর্থে পুরুষ শাসিত সমাজের নেতিবাচক দিকগুলিকে চিত্রিত করে। তিনি তার ‘খাতা’ ও ‘স্ত্রীর চিঠি’ গ্রন্থে নারীমুক্তির কথা বলেছেন।
তাঁর মতে মানবতাবাদই সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সনাতন জমিদারদের মতো ছিলেন না। তিনি একজন সমাজ সংস্কারক ছিলেন এবং তিনি মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন এবং তাকে মানবতাবাদের প্রকৃত প্রবক্তা বলা হয়। মানবতাবাদ এবং মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসাই রবীন্দ্র দর্শন ও সাহিত্যের প্রধান বিষয়। মানব মনের ব্যকুল ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ রবীন্দ্র কাব্যে সমুজ্বল। ” ফিরবে না তা জানি, তা জানি, আহা তবুও তোমার পথ চেয়ে জ্বলুক প্রদীপখানি, কোথায় তুমি পথভোলা, তবু থাক না আমার দোয়ার খোলা।”
তিনি বাংলা সাহিত্যের সকল শাখায় সমান অবদান রেখেছেন এবং একই সাথে সর্বজনীন মানবতাবাদ প্রচার করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন মানুষের হৃদয়ে। সমাজে সুবিধাবঞ্চিত মানুষ কীভাবে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে সে বিষয়ে তিনি তাঁর সাহিত্যে নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি তার পাঠকদের শিখিয়েছেন কীভাবে প্রতিবাদ করতে হয় এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হয় এবং তার পাঠকদের সর্বদা মানবতার জন্য গান গাইতে অনুপ্রাণিত করেছেন। রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদ শুধু মানবের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। অন্যান্য প্রাণীর প্রতিও তার মমত্ববোধ দৃশ্যমান। তিনি তার “পরিচয়’ কবিতায় সেটা দেখিয়েছেন। ” এক কক্ষে ভাই লয়ে অন্য কক্ষে ছাগ, দুজনেরে বাটি দিল সমান সোহাগ, ছাগ শিশু নর শিশু দিদি মাঝে পড়ে, দোহারে বাঁধিয়া দিল পরিচয় ডোরে।” লালনের মানবতাবাদী এবং ভাববাদী দর্শন দ্বারা রবীন্দ্রনাথ ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। তবে সমালোচকরা দাবি করেন রবীন্দ্র সাহিত্যে ভাববাদী যাত্রার প্রকটতা থাকলেও অবশেষে তিনি বস্তুবাদী দার্শনিকে পরিনত হয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের ভাববাদী লেখনী এক জটিল বস্তুবাদী সমীকরণে পরিনতি লাভ করে। ” নাচে পাপ সিন্ধুতে তুঙ্গ তরঙ্গ, মৃত্যুর মহানিশা রুদ্র উলঙ্গ।” তবে রবীন্দ্রনাথ পশ্চিমা ভাববাদীদের মত ছিলেন না। তিনি ভাববাদ ও বস্তুবাদকে সমন্বয়ের চেষ্টা করেছেন। একদিকে তার ভাববাদী মন বিশ্ব সত্তার সন্ধান করে, অন্যদিকে তার বস্তুবাদী মন সমাজের প্রচলিত কুসংস্কারকে বিজ্ঞানের আলোকে ব্যাখ্যা করে। ” আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে আমি পাইনি, বাহির পানে চোখ মেলেছি হৃদয় পানে চাই নি।” রবীন্দ্রনাথ যখন বলেন, তৃষ্ণার জল যখন আশার অতীত হয়, মরিচিকা তখন সহজে ভুলায়” — তখন তার মাঝে ভাববাদ ও বস্তুবাদের সমন্বয় লক্ষ্য করি। রবীন্দ্র সাহিত্যে মানবতাবাদ এবং ভাববাদ যেন মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্টের মত এক অতিন্দ্রিয় ভাববাদ রবীন্দ্রে সাহিত্যে খুঁজে পাওয়া যায়। ”সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর, আমার মাঝে তোমার প্রকাশ তাই এত মধুর।” মানব চরিত্রের জটিল বিশ্লেষণ রবীন্দ্রনাথের মত অন্য কেউ করতে পারেন নি। রূপক শব্দে সাজানো পংক্তিমালা যেন মানব চরিত্রে মূর্ত হয়ে উঠে। রবীন্দ্রনাথ যতই কল্পলোকে বিচরন করুক না কেন তিনি বাস্তবতার নিরিখে লেখে গেছেন। তিনি তাইতো ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন, গাধাকে পিটিয়ে ঘোড়া বানানো যায় না, কিন্তু ঘোড়াকে পিটিয়ে গাধা বানানো যায়। ক্ষণস্থায়ী জীবনে মানুষের অসীম চাওয়াকে বিশ্বকবি মানব মনের দৈন্যকেই ইঙ্গিত করেছেন। যতটুকু জীবন মানুষ পায় ততটুকু সে লোভ লালসায় মত্ত থাকতে চায়। কিন্তু নিষ্ঠুর ভব তাকে সে সুযোগ বেশিক্ষণ দেয় না। ” উদয় হতে অস্তাচলে পথিক চলে দলে দলে, এই ধরণীর ধুলা জুড়ে, ধুলার সাথে যায় যে উড়ে।” রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদ বিশ্বপ্রেমে রূপ নেয়। তিনি বলেছেন আনন্দকে ভাগ করলে দুটি জিনিস পাওয়া যায়– প্রেম ও জ্ঞান। প্রেমকে তিনি উচ্চ পর্যায়ের ভালোবাসার যৌক্তিক রূপে নিতে চান। তিনি তার প্রেম দর্শনকে ব্যাক্তি পর্যায়ে আটকে না রেখে বিশ্বপ্রেম তথা ঈশ্বর প্রেমে নিয়ে যেতে চান। ” কান্ডারী গো এবার যদি পৌঁছে থাকি কূলে, হাল ছেড়ে দাও, এখন আমার হাত ধরে লও তুলে।” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মানবতাবাদের শিক্ষা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে এবং বাঙালি জাতি তাকে চিরকাল মনে রাখবে।