// নাটোর প্রতিনিধি.
গুরুদাসপুরে বঙ্গবন্ধু টেকটিক্যাল বিজ্ঞান তথ্য ও প্রযুক্তি এন্ড বিএম ইন্সটিটিউটে বোমা সাদৃশ্য বস্তু রাকার ঘটনায় এখনো জনমনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হচ্ছে। এ ঘটনায় কলেজটির দুই পক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করছে। সেদিন ছিল ১৭ জুন শনিবার। বন্ধের দিনে কলেজে পার্সেল করে সুটকেসে বোমা রেখে তাতে ৩০ কেজি আম, পাবেন অধ্যক্ষ বলে লেখা ছিল।
অনেকের প্রশ্ন ঘটনার দিন পৌনে ৯টায় অধ্যক্ষ দাবীদার সাইদুল ইসলাম সাঈদ কেন কলেজে গেলেন, আর কেনই বা বোম সন্দেহ করে গুরুদাসপুর থানা পুলিশকে ডাকলেন। এনিয়ে সারাদিন সারারাত চরম আতঙ্কের মাঝে ছিল এলাকাবাসী। বিশেষ করে প্রতিবেশিদের আতঙ্কে আরাম হারাম হয়ে গিয়েছিল। কারণ এর আগেও ২০২১ সালে নারিবাড়ী মোড়ে কয়েকটি ককটেল রাখা হয়েছিল। গত ১৭ ই জুন বঙ্গবন্ধু টেকনিক্যাল কলেজে পার্সেল করে রাখা ককটেল বোমা নিষ্ক্রিয় করে ঢাকা থেকে আসা বোম ডিস্পোজাল টিম। এসময় র্যাব-৫ ও গুরুদাসপুর থানা পুলিশ উপস্থিত ছিলেন। পরে বোঝা যায়, পার্সেলে আম নয় বোমা সাদৃশ্য বস্তু ছিল। তাহলে বোম সাদৃশ্য পার্সেল রেখে কে কাকে ভয় বা ফাঁসাতে চেয়েছিল এবং কেন এলাকায় এধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হলো তা এলাকাবাসী জানতে চায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৮ সালে কলেজটি উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড়গঙ্গারামপুর গ্রামে রাজ্জাক শাহর দান করা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি পাঠদানের অনুমোতি পায় ২০১০ সালে। ২০১৩ সালে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান সাইদুল ইসলাম সাঈদ। প্রতিপক্ষের অভিযোগ, কলেজটি সরকারিকরণ হতে পারে জেনে সাইদুল কতিপয় লোককে হাত করে কৌশলে ২০১৫ সালের দিকে উপজেলা সদরে নিয়ে যান। তখন থেকে সাবেক সভাপতি জালাল শাহসহ বেড়গঙ্গারামপুর এলাকাবাসীর সাথে সাঈদের বিরোধ সৃষ্টি হয়। আরেক অধ্যক্ষ দাবীদার বাবুল আখতার বলেন, পূর্বের নিয়োগকৃত শিক্ষক-কর্মচারীদের অনেককে বাদ দিয়ে নতুন স্থানে নতুন করে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেন অধ্যক্ষ সাঈদ। এসব কর্মকান্ড নিয়ে বিবাদমান দুই পক্ষের মাধ্যে মামলা মোকদ্দমা চলে।
এদিকে বোমা রাখার ঘটনায় ওই দিন সাঈদ বলেন, বোমা রাখার কিছুদিন আগে জালাল শাহ ও বাবুল আখতার তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন এবং এজন্য তারাই বোমা রেখেছিল বলে দাবী তার। জালাল শাহ ও বাবুল আখতার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি (সাঈদ) এখন কলেজের অধ্যক্ষ নেই, জজ কোর্টের মামলায় হেরে গেছেন। উনি হাইকোর্টে রীট করেছেন, সেক্ষেত্রেও সাঈদের অধ্যক্ষ পদ থাকবেনা ইনশাল্লাহ। তাছাড়া কলেজটি পূর্বের জায়গা বেড়গঙ্গারামপুরে স্থানান্তরের জন্য কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আকবর আলী খান জেলা প্রশাসক নাটোরকে অনুরোধ জানিয়েছেন। তারা আরো বলেন, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যাপক মো. আব্দুল কুদ্দুম এমপি ওমরা হজে¦ যাওয়ার সুযোগে সাইদুল কলেজের হারানো পদ ও কলেজ ধরে রাখার জন্য নিজেই চক্রান্ত করে বোমা নাটক করেছেন।
কারিগরি বোর্ডের বিভিন্ন কাগজপত্র ও অন্যান্যদের অভিযোগপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, সাইদুল ইসলাম ২০১৩ সালে বঙ্গবন্ধু টেকটিক্যাল কলেজে অধ্যক্ষ পদে চাকুরী করলেও সরদার কাজিমুদ্দিন টেকনিক্যাল এন্ড বিএম ইন্সটিটিউটে প্রভাষক পদে চাকরি করে জানুয়ারি ২০২০ সাল পর্যন্ত বেতন উত্তোলন করেছেন। আবার তিনি (সাঈদ) ৩১/০৭/২০১৯ সালে পুনরায় ওই কলেজে অধ্যক্ষ পদের জন্য আবেদন করেন। আবেদনে অভিজ্ঞতা হিসেবে লেখা ছিল, সরদার কাজিমুদ্দিন টেকনিক্যাল এন্ড বিএম ইন্সটিটিউটে ২০০৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সেক্রেটারিয়াল সায়েন্স পদে কর্মরত আছেন। প্রতিপক্ষের ধারণা ২০১৩ ও ২০১৯ সালে একই ব্যক্তি অধ্যক্ষ পদে দুইবার আবেদন করেন কিভাবে তা তদন্ত করলেই রহস্য বের হবে। তাদের ধারণা অধ্যক্ষ পদ রক্ষা এবং কলেজটি যাতে স্থানান্তরিত না হয় সেজন্য চক্রান্ত করে সাইদুল নিজেই বোমা রাখার নাটক করেছেন। সাইদুল এ প্রসঙ্গে বলেন, আমার কলেজে আমি কেন বোমা রাখব। এটা প্রতিপক্ষের কাজ হতে পারে। তিনি অন্য প্রতিষ্ঠানে বেতন উত্তোলনের কথা স্বীকার করেন। কিন্তু কেন একই প্রতিষ্ঠানে সাত বছরের ব্যাবধানে দুইবার অধ্যক্ষ পদে দরখাস্ত করলেন, তার সঠিক জবাব বা প্রমাণাদি দেননি।
এব্যাপারে গুরুদাসপুর থানার ওসি মোহা. মোনোয়ারুজ্জামান বলেন, বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনে থানায় পুলিশ বাদী মামলা হয়েছে। কাউকে নির্দিষ্ট করে আসামী করা হয়নি। তবে ল্যাবে পরীক্ষাসহ তদন্ত করে কেউ দোষী হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া কলেজটির বিবাদমান দুই পক্ষের বিষয়টিও তদন্তের স্বার্থে খতিয়ে দেখা হবে।
বর্তমানে কলেজটির অধ্যক্ষ সাইদুল ইসলাম নাকি বাবুল আখতার তা কোর্টে মামলা থাকায় নিষ্পত্তি হয়নি। তাছাড়া কলেজটিতে সাংগঠনিক বা পরিচালনা কমিটিও নেই। আবার সাবেক সভাপতি জালাল শাহ বলেন, সাইদুলের স্ত্রীসহ অনেকেই ওই প্রতিষ্ঠানে জাল সনদে চাকরি করছেন। বোমা রাখার ঘটনার সাথে সাথে এসবেরও তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।