পুড়েছে পাওয়ার ট্রান্সফরমার: দফায় দফায় লোডসেডিংয়ে বিপর্যস্ত  ঈশ্বরদীর জনজীবন


// ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতাঃ
ঈশ্বরদীতে চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যেই পুড়ে গেছে জয়নগর গ্রীডের একটি পাওয়ার ট্রান্সফরমার। যেকারণে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। দিনে এবং রাতে সমান তালে ৩-৪ ঘন্টা পর পর এক ঘন্টা করে দেওয়া হচ্ছে লোডসেডিং। এরসাথে রয়েছে স্ক্যাডা সিস্টেমের লোডসেডিং। গরমের তীব্রতার মধ্যে বিদ্যুৎ না পেয়ে বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে স্থানীয় জনজীবন। পিজিসিবি’র উর্দ্ধতনরা বলছেন পাওয়ার ট্রান্সফরমার পুড়ে যাওয়ার কারণে নয়, দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন কমে যাওয়ায় অন্যান্য স্থানেও একইভাবে লোডসেডিং হচ্ছে। তবে  অন্যান্যরা বলছেন দেশের অন্যান্য স্থানে লোডসেডিং হচ্ছে, তবে ঈশ্বরদীর মতো দফায় দফায় নয়।  

ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিস মাসাধিক সময় ধরে ঈশ্বরদীর তাপমাত্রা ৩৮-৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে বলে জানিয়েছে। অনেক এলাকায় ৩০ মিনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে একদিকে গরমে পুড়ছে মানুষ, অন্যদিকে বিদ্যুৎ না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে জমিতে সেচকাজ।

পিজিসিবি সূত্র জানায়, জয়নগর গ্রীডে ঈশ্বরদীর বিদ্যুতের চাহিদা ৮০ মেগাওয়াট। চাহিদা পূরণের জন্য ৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি পাওয়ার ট্রান্সফরমারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়ে থাকে। প্রতিটি ৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও বাস্তবে একেকটির সক্ষমতা প্রায় ৫০-৬৫ মেগাওয়াটে ওঠানামা করে।

চলতি মাসের প্রথম দিকে ১টি অক্সিলারী ট্রান্সফরমারের ভেতরে সাপ ঢুকে পড়ায় বিদ্যুৎ বন্ধ হলে জনজীবনে নেমে আসে অন্ধকার। এরপরই গত ৭ই মে ১টি পাওয়ার ট্রান্সফরমারটি পুড়ে যায়। বর্তমানে ১টি পাওয়ার ট্রান্সফরমার দিয়ে চরম ঝুঁকির মধ্যে লোডসেডিং করে বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে। একটির  সাহায্যে প্রতিদিন মাত্র ৪০-৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে। ঈশ্বরদীতে চাহিদার মাত্র অর্ধেক সরবরাহের কারণে দফায় দফায় লোডসেডিং হলেও কর্তৃপক্ষ তা স্বীকার করেন না। পার্শ্ববর্তী নাটোর, রাজশাহী ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে লোডসেডিং হলেও দিনে-রাতে ঈশ্বরদীর মতো ৩-৪ ঘন্টা পর পর হয় না।

সূত্র জানায়, নেসকোর অধীনে শুধূ ঈশ্বরদীতে বিদ্যুতের চাহিদা ৩৭ মেগাওয়াট হলেও বাস্তবে জেনারেশন হচ্ছে অনেক কম। রূপপুর পারমাণবিকের আবাসন ‘গ্রীণসিটি’ ও ইপিজেডকে লোডসেডিং এর আওতামুক্ত রেখে ৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। শহরের অধিক গুরুত্বপূর্ণ পাতিলাখালি সাব-ষ্টেশনে বিদ্যুতের চাহিদা ৮ মেগাওয়াট, স্কুলপাড়ায় ৬ মেগাওয়াট এবং জয়নগর সাব-ষ্টেশনের চাহিদা ১২-১৩ মেগাওয়াট। অধিক জনগুরুত্বপূর্ণ পাতিলাখালি সাব-ষ্টেশনকে স্ক্যাডা সিস্টেমের (supervisory control and data acquisition) আওতায় আনা হয়েছে। সিস্টেমটি জাতীয় পাওয়ার গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত থাকায় অটোমেশন পদ্ধতিতে দিনে-রাতে দফায় দফায় বন্ধ হচ্ছে। পাশাপাশি ট্রান্সফরমার বিকলের কারণেও লোডসেডিং করা হচ্ছে।
 পাতিলাখালি সাব-ষ্টেশনের আওতাধীন এলাকায় ঈশ্বরদী বাজারসহ বিপুল সংখ্যক রাশিয়ান ভাড়া বাড়িতে বসবাস করে। ঈশ্বরদীর জন্য আরও ৫-৬ মেগাওয়াট লোড বৃদ্ধির সাথে সাথে পাতিলাখালি সাব-ষ্টেশনকে স্ক্যাডার আওতামুক্ত এবং অকেজো পাওয়ার ট্রান্সফরমার সরিয়ে নতুন সংস্থাপন করা জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজন।

পিজিসিবি’র জয়নগর এইচভিডিসি সার্কেলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম জানান, গত ৭ মে পুড়ে যাওয়া পাওয়ার ট্রান্সফরমার বিপ্লেসমেন্টের জন্য ১৪ মে অনলাইনে টেন্ডার পাবলিশ হয়েছে। সাভার হতে এটি আনা হচ্ছে। পরিবহন, সংস্থাপন ও কমিশনিং করতে আরও ১৫-২০ দিন সময় লাগতে পারে। ৭৫ মেগাওয়াটের যে পাওয়ার ট্রান্সফরমার চালু রয়েছে এটির বাস্তবে সক্ষমতা ৬০-৬৫ মেগাওয়াট। একটি ট্রান্সফরমার দিয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছি। আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করিনা ট্রান্সমিশন করি জানিয়ে তিনি বলেন, পাওয়ার ট্রান্সফরমার পুড়ে যাওয়ার কারণে নয়, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সাময়িক ঘাটতির কারণে ঘন ঘন লোডসেডিং হচ্ছে।

নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশরী আব্দুন নূরের সাথে লোডসেডিং প্রসংগে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের রাজশাহীর মানবসম্পদ বিভাগের অনুমতি ছাড়া কথা বলতে পারব না।  

ঈশ্বরদী শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি শাফিকুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, একে তো তীব্র গরম, অন্যদিকে বিদ্যুৎ থাকছে না। পরিবেশের সঙ্গে মানুষেরও মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারছেন না। এতে বেচাকেনায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে। দ্রæত সমস্যার সমাধান না হলে দোকানদাররা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করবে।