শেরপুরের গারো পাহাড়ে পাথর, বালু, লুটপাট , বন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ধরোছাড় বাণিজ্যের অভিযোগ

// শেরপুর প্রতিনিধি :  শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড় থেকে পাথর, বালু ও বৃক্ষ লুটপাটের মহোৎসব চলছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা গারো পাহাড়ের নদী, ঝর্না, ঝুড়া ও পাহাড় কেটে  পাথর- বালু লুটপাটের মহোৎসব চালিয়ে আসছে । শুধু তাই নয় গারো পাহাড়ে চলছে বৃক্ষ লুটপাট। সামাজিক বনের গাছ কেটে অবাধে ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে।  জেলা সদরের ইটভাটাগুলোতে  কয়লার পরিবর্তে জ্বালানী হিসেবে পুড়ানু হচ্ছে কাঠ। 

এসব জ্বালানী সংগ্রহ করা হচ্ছে গারো পাহাড়ের বনাঞ্চল থেকে। প্রতি ট্রলি জ্বালানী কাঠ থেকে ১হাজার টাকা দিতে হয় বন কর্মকর্তা মকরুল ইসলাম আকন্দকে। এসব ট্রলি থেকে টাকা আদায়ের জন্য স্থানীয় দুই জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।  এ অভিযোগ গারো পাহাড়ের কাঠ ব্যবসায়ীদের। 

জানা গেছে,  দিনের বেলায় গভীর অরণ্য থেকে পাহাড় কেটে পাথর ও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আর রাতের অন্ধকারে ট্রলি- মাহিন্দ্র ও ঘোড়ার গাড়ি  যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবাধে  পাচার করা হচ্ছে। 

এভাবে প্রতিরাতে লাখ লাখ টাকা মূল্যের পাথর ও বালু, ও বনের গাছ লুটপাট চালিয়ে আসছে প্রভাবশালীরা। 

জানা গেছে, গারো পাহাড়ের সৌন্দর্যকে ঘিরে ১৯৯৩ সালে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গড়ে তোলা হয়েছে একটি পিকনিক স্পট। 

মৌজার নামানুসারে এর নাম রাখা হয় গজনী অবকাশ বিনোদন কেন্দ্র। প্রতিবছর এ পিকনিক স্পট থেকে সরকারের ঘরে আসে বিপুল পরিমানের রাজস্ব্য। কিন্তু অবৈধভাবে পাহাড় কেটে পাথর ও বালু ও গাছ  লুটপাটের কারনে গারো পাহাড় হারাতে বসেছে তার সৌন্দর্য্য। অপদিকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমানের রাজস্ব্যের আয় থেকে। অপরদিকে অবৈধভাবে পাহাড় কেটে পাথর, বালু,, গাছ লুটপাটের কারনে  পরিবেশের ভারসাম্য মারাত্মক ভাবে হুমকির সম্মুখিন হয়ে পরেছে। 

অভিযোগ রয়েছে , মাঝে মধ্যে পাথর ও বালু ও কাঠ ভর্তি ট্রলি আটক ও  করা হচ্ছে।  কিন্তু পাথর উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। অভিযোগে প্রকাশ, আটককৃত আসামীদের  সারাদিন আটক রেখে রাতে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে  ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।

কোন কোন সময় আসামী ছেড়ে দিয়ে ট্রলিগাড়ি  পরিত্যক্ত দেখিয়ে ট্রলির নামে মামলা দেয়া হচ্ছে। এভাবে বন কর্মকর্তা ধরোছাড় বানিজ্য চালিয়ে আসছে।

জানা গেছে, গত ২৭ মার্চ পাথর উত্তোলনের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে বাকাকুড়া গ্রামের সবুজ নামে  এক যুবককে আটক করা হয়। কিন্তু সারাদিন আটক রেখে রাতে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেন বন কর্মকর্তা মকরুল ইসলাম আকন্দ।

 স্থানীয়রা জানান, বন কর্মকর্তা মকরুল ইসলাম আকন্দের এসব অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ কোন প্রতিবাদ পর্যন্ত করতে সাহস পায় না। আবর কেউ প্রতিবাদ করলে তার নামে দেয়া হয় বন মামলা। এ অভিযোগ গারো পাহাড়ের বাসিন্দাদের। 

২৯ মার্চ বাকাকুড়া গ্রামের আজিজ, দুলাল ও মোরাদকে আটক করা হয়। পরে সারাদিন আটক রেখে রাতে ছেড়ে দেয়া হয়। আসামী ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে   উপজেলার রাংটিয়া ফরেষ্ট বিট কর্মকর্তা মকরুল ইসলাম আকন্দকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে মামলা দেয়া হয়েছে। 

পাথর ও বালু লুটপাটের বিষয়ে বলেন, বনের জমি থেকে কোন পাথর, বালু ও গাছ লুটপাট হয় না। পাথর ও বালু উত্তোলন হয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের এলাকা থেকে। তাদের  জিজ্ঞাসা করুন। আর যতপারেন পত্রিকায় লেখুন। 

অপর দিকে এ বিষয়ে জানতে  শেরপুরের সহকারী বন সংরক্ষক আবু ইউসুফকে  ফোন দেয়া হলে তিনি ফোনে বলেন, আপনারা ঝিনাইগাতীর সাংবাদিক। আপনারা মরকুলের সাথে কথা বলুন। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আল মাসুদ বলেন, বন রক্ষার দায়িত্ব বন বিভাগের। এ বিষয়ে প্রতিমাসে উপজেলা আইন শৃংখলা কমিটির মাসিক সভায় আলোচনা হয়। পাথর ও বালু উত্তোলন বন্ধের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের বন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।