// নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরের লালপুরে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে পাক হানাদার বাহিনীর বুলেটে ৪১ জন শহীদ মুক্তিকামী বাঙালি কর্মকর্তা ও কর্মচারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আজও স্বীকৃতি মেলেনি। এছাড়া গোপলপুর বাজার এলাকা হানাদার বাহিনীর বুলেটে ৭ জন মুক্তিকামী শহীদ হন বলে জানা গেছে। তাদেরও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি মেলেনি। তবে এসব শহীদদের মধ্যে তৎকালানী মিলের প্রশাসক লে. আনোয়ারুল আজিম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও মুক্তিকামী ৪১ জন শহীদ কর্মকর্তা ও কর্মচারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি না পাওয়ায় তাদের পরিবারের সদস্যদের হতাশায় দিন কাটাতে হচ্ছে। জানা যায়,১৯৭১ সালে ৩১ মার্চ ভোর ৬ টার দিকে মশারি ও শাড়ী পরে পালিয়ে যাওয়ার সময় মেজর জেনারেল আসলাম হোসেন রাজা খান,হায়দার খান,সুবেদার গুলজার খান সহ আরো চারজনকে মুক্তিকামী বাঙালিরা ও নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের তৎকালীন নিরাপত্তা পরির্দশক হামিদুল হক চৌধুরী বাবু তাদেরকে ধরে মিলে নিয়ে আসে।পরে মিলের তৎকালীন প্রশাসক লে. আনোয়ারুল আজমের বাংলোতে তাদেরকে আটকে রাখে। ওই দিন ১৯৭১ সালের ৩১ মার্চ মিলের জিপে করে লালপুর শ্রী সুন্দরী স্কুল মাঠে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে হাজার জনতার মধ্যে মিলের তৎকালীন নিরাপত্তা পরির্দশক হামিদুল হক চৌধুরী বাবু গুলি করে মেজর জেনারেল আসলাম হোসেন রাজা খান,হায়দার খান,সুবেদার গুলজার খানকে সহ তাদের সহকারীদের হত্যা করে বলে জানা গেছে। পরে পাক হানাদার বাহিনী প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ১৯৭১ সালের ৫ মে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে অতর্কিত হামলা চালায়। এবং মিলের সবগুলো প্রবেশ পথের দরজা বন্ধ করে তালা ঝুলিয়ে দেয় তারা। মিলের তৎকালীন প্রশাসক লে. আনোয়ারুল আজম সহ বাঙালি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ধরে নিয়ে গোপাল পুকুরের পাড়ে (বর্তমান শহীদ সাগর) সামনে চোখ বেঁধে সারি করে দাঁড় করানো হয়। এসময় হানাদার বাহিনীর সদস্যরা মিলের তৎকালীন প্রশাসক লে. আনোয়ারুল আজিমকে ধুমক দিয়ে বলেন মেজর জেনারেল আসলাম হোসেন রাজা খান সহ তার সহযোগীদের কারা হত্যা করেছে। ওই সময় মিলের প্রশাসক লে. আনোয়ারুল আজম বলেন তোমরা আমাকে গুলি করে হত্যা করো। মিলের কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে হত্যা করো না। হানাদার বাহিনীর সদস্যরা তার কথা শুনেনি। পরে ওই পুকুর পাড়ে মিলের প্রশাসক লে. আনোয়ারুল আজম সহ ৪১ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতার পর ৪২ শহীদের স্মরণে ওই পুকুরটি ’শহীদ সাগর’ নামকরণ করা হয় । এবং সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। এছাড়া স্মৃতিস্তম্ভের সামনে একটি জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে। আর হানাদার বাহিনীর বুলেটের চিহ্ন পুকুরটির সিঁড়িতে কালের স্বাক্ষী হয়ে আজও আছে। এছাড়া শহীদ সাগরে অবস্থিত স্মৃতিস্তম্ভে মিলের তৎকালীন প্রশাসক লে.আনোয়ারুল আজিম সহ ৪২ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নামের তালিকা কালের স্বাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে। আর গোপালপুর ঐতাহিসক কড়াইতলা শহীদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। স্মৃতিস্তম্ভে আরো ৭ জন শহীদের নামের তালিকা রয়েছে। আগামী বিজয় দিবসের আগেই ৪৮ জন শহীদদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের সু-ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। মতামত, ন,বে,সু,মি শহীদ পরিবার ফোরাম এর সভাপতি ফরাদুজ্জামান রুবেল জানান,শহীদের স্বীকৃতি পাওয়ার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করা হয়েছে। বর্তমান আবেদনটি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) তে আছে। এবং গোপালপুর ডিগ্রি পাস অনার্স কলেজের অধ্যক্ষ বাবুল আকতার জানান,পাক হানাদার বাহিনী আমার বাবাকে গুলি করে হত্যা করেছে। সেই থেকে আমরা এতিম হয়ে গেছি। তিনি আরো জানান,বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধের চেতনার সরকার। শহীদদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এবিষয়ে গোপালপুর পৌরসভার মেয়র রোকসানা মোর্ত্তজা লেলি বলেন, ১৯৭১ সালে আমি ছোট ছিলাম। কিন্তু মিলে যে দিন হানাদার বাহিনীর গুলি বর্ষন করে,সেই শব্দ কানে শুনতে পেয়ে আমি খুব ভয় পেছিলাম। তিনি আরো বলেন, শহীদদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের সু-ব্যবস্থা নিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এবিষয়ে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুল আজম বলেন,শহীদদের স্বীকৃতির জন্য মিলের পক্ষ থেকে কোন সহযোগীতা লাগলে আমি করবো।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা সুলতানা বলেন,শুনেছি ইতি মধ্যে শহীদদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে যোগযোগ করে জোর তদারক করবো। যেন শহীদগণ খুব শীঘ্রয় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বাকৃতি পান।
এবিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, শহীদের স্বীকৃতির জন্য আমার পক্ষ থেকে সব সময় সহযোগিতা থাকবে।