// ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতাঃ
ঈশ্বরদীর বহরপুর আশ্রায়ন প্রকল্পে নির্মিত মসজিদ ও মন্দির ভূমিহীনদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতির বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। হিন্দু-মুসলমান মিলে মিশে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে যার যার ধর্ম নির্বিঘ্নে পালন করছেন। নিম্নআয়ের এ মানুষগুলোর মধ্যে নেই গোঁড়ামি বা উগ্র সাম্প্রদায়িকতা। বিপদে-আপদে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি সুখ-দুঃখ ভাগাভাগির অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। আগের মসজিদ সংস্কারের সাথে সাথে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য নির্মাণ হয়েছে মন্দির। প্রকল্পে ঘর নির্মাণের বরাদ্দ থাকলেও ছিলো না মসজিদ সংস্কার এবং মন্দির নির্মাণের অর্থ বরাদ্দ। ঈশ্বরদী উপজেলা প্রশাসনের প্রচেষ্টায় মসজিদ সংস্কার এবং মন্দির নির্মাণ হয়েছে ।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঈশ্বরদী-পাবনা সড়কের পাশে মুলাডুলি ইউনিয়নের বহরপুর আশ্রায়ণ প্রকল্পে মোট ৩১৬টি ভূমিহীন পরিবারের বসবাস করছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের ২৫টি পরিবার রয়েছে। জানা যায়, মোট দুই সহস্রাধিক মানুষের বসবাস। আগের ছিলো ৯৬টি বাড়ি। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক গৃহহীন ও ভুমিহীনদের জন্য আশ্রায়ন প্রকল্পে এবারে ১৯৬টি বাড়ির বরাদ্দ থাকলেও উপজেলা প্রশাসনের প্রচেষ্টায় নির্মাণ হয়েছে ২২০টি বাড়ি। মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে এসব বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পুরাতন মসজিদটি সংস্কারের সাথে সাথে মন্দির নির্মাণ করায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ এখানে নিয়মিত পূজা-অর্চনা পালন করতে পারছেন।
বাবলু চৌধুরী (৫৮) বলেন, পূজার জন্য এখন ৭-৮ মাইল দূরে ঈশ্বরদী শহরে বা দাশুড়িয়ায় মন্দিরে যেতে হয় না। হাসিনা সরকারের ইউএনও মন্দির করে দেওয়ায় সুখে-শান্তিতে আছি।
চামেলি রানী (৫৫) বলেন, মন্দির পূজা করে শান্তি লাগে। নিয়মিত সন্ধ্যা বাতি দেই। তবে মন্দিরের জন্য ভোগঘর, গ্রীল, বাথরূম, জলের ব্যবস্থাসহ সৌর বিদ্যুতের আলোর প্রয়োজন।
দিলিপ দাস বলেন, ইউএনও সাহেব মন্দির বানিয়েছেন। হিন্দু-মুসলমান মিলেমিশে আছি।
প্রকল্পের ভুমিহীন সভাপতি ফারুক হোসেন বলেন, আত্মিয়ের মতো আমরা একে অপরের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে বাস করছি। আমাদের ঈদ, শবেবরাত, মিলাদে এবং হিন্দুরের পূজা সকলে উপভোগ করি। ইউএনও সপ্তাহে ২ বার এসে খোঁজখবর নেন। কোন সমস্যা হলে তাৎক্ষনিক সমাধান করেন।
সাধারণ সম্পাদক বকুল হোসেন জানান, প্রকল্পের আগেকার টিনের ঘর দিয়ে জল পড়ে। রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ জরুরী। গোরস্তানের জন্য জমি বরাদ্দ হলেও কাজ হয়নি। একটি ঈদগাহ প্রয়াজন, পাশাপাশি মন্দিরের কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার পিএম ইমরুল কায়েস বলেন, ঈশ্বরদীতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রকৃত ভূমি ও গৃহহীনদের ঘর বরাদ্দ দিয়েছি। মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি মসজিদ আগে থেকেই ছিলো, সেটি সংস্কারের সাথে সাথে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা ভেবে মন্দির নির্মাণ করেছি। মন্দির নির্মাণে টিআর প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থে মন্দিরের অর্ধেক কাজও হয়নি। আশ্রায়ণ প্রকল্পের বেঁচে যাওয়া ইট, সিমেন্ট, টিন ও বালু ব্যবহার করে মন্দির নির্মাণ হয়েছে। মন্দিরের অসম্পূর্ণ কাজ ধাপে ধাপে করা হবে বলে জানান তিনি। পুরাতন টিনের ঘরে বসবাসকারীদের অসুবিধা প্রসংগে তিনি বলেন, অন্যান্য যেসব সমস্যা রয়েছে এগুলো সংস্কার ও সমাধানের জন্য এস্টিমেট করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।