ছারছীনা দরবার শরীফের অবস্থান সর্বদাই শান্তি, নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় শৃংখলার পক্ষে ইতিবাচক : ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু

// ছারছীনা থেকে মোঃ আবদুর রহমান : আমীরে হিযবুল্লাহ মুজাদ্দিদে যামান ছারছীনা শরীফের পীর ছাহেব আলহাজ¦ হযরত মাওলানা শাহ্ মোহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ (মা. জি. আ.) বলেছেন- আখেরাতে মুক্তি পাওয়া একজন মুমিনের পরম আরাধ্য বিষয়। আর এটা তরীকা মশকের মাধ্যমে আমলী জিন্দেগী গঠন করার মধ্য দিয়ে সহজে লাভ করা সম্ভব। তরিকা মানুষকে আদববান হতে শেখায়, বেয়াদবী নয়। যে তরিকায় আদব নাই সেটা তরিকা নয়। ছারছীনা আদবের দরবার এখানে বেয়াদবের কোন স্থান নাই।

তিনি বলেন পীর-ভাইদের উদ্দেশ্য করে বলেন- বয়াত হতে হবে একমাত্র আল্লাহর জন্য। পীরকে পাওয়ার জন্য বয়াত হওয়া হারাম। যিনি বয়াত হবেন তিনিও বয়াত হবেন আল্লাহর জন্য এবং যিনি বয়াত করাবেন তিনিও আল্লাহর জন্য বয়াত করাবেন।

পীর ছাহেব কেবলা আরও বলেন- তরীকার মধ্যে কোন ধরণের বাড়াবাড়ি করবেন না। এখন বাড়াবাড়ির সময় নেই। দরকার সকল মুসলমানের ঐক্যের। তবে সেটা হতে হবে ইস্যু ভিত্তিক ঐক্য। ইস্যু শেষ ঐক্যও শেষ। আমরাও চাই সকল মুসলমানদের মধ্যে ইস্যু ভিত্তিক ঐক্য।

গতকাল ছারছীনা দরবার শরীফের মরহুম পীর ছাহেব কেবলাদ্বয়ের ইন্তেকাল বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ঈছালে ছওয়াব ও মাদ্রাসার বার্ষিক তিনদিনব্যাপী মাহফিলের আখেরী মুনাজাতের পূর্বে বিশাল জনসমূদ্রে হযরত পীর ছাহেব কেবলা একথা বলেন।

মাহফিলে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার এ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু (এমপি) বলেন- আমরা ছারছীনা দরবার শরীফের ভূমিকা সম্বন্ধে সম্মক অবহিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও জানেন তাই আমরা ছারছীনা দরবার শরীফে আসি। এই দরবার শরীফের অবস্থান সর্বদাই শান্তি, নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় শৃংখলার পক্ষে ইতিবাচক। আমি আশা করি ভবিষ্যতেও এটা আরও কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।

মাহফিলে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী এ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম (এমপি) বঙ্গবন্ধু সহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইসলামের পক্ষে রাখা ভূমিকাগুলির কথা উল্লেখ করে বলেন- বাংলাদেশে ইসলামের পক্ষে যতটুকু অবদান তার প্রায় সবটুকু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আমলেই হয়েছে। তাছাড়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে জঙ্গীবাদ থেকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছেন। আর এজন্য যারা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছেন তাদের মধ্যে ছারছীনা দরবার শরীফ অন্যতম। কেননা এখানে ইসলামের সঠিক শিক্ষা দেওয়া হয়। এখানের ছাত্র বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র বিভিন্ন পদে আসীন। যেমন- সচিব, জজ, ম্যাজিষ্ট্রেট, বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকও রয়েছেন। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে আপনাদের আশ^স্ত করতে চাই এই বাংলাদেশে ইসলাম বিরোধী কোন আইন বিগত দিনেও পাস হয়নি এবং ভবিষ্যতেও পাস হবেনা।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন- আমাদের এই বাংলাদেশ অলী আওলিয়াদের দেশ। বিশেষ করে আমাদের পূর্ব পুরুষগণ এই ছারছীনা দরবার শরীফের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং তাদের ধারাবাহিকতায় আমিও আসি। এ দরবারে আসলে অন্তরের খোরাক পাওয়া যায়। মানুষ আল্লাহ ওয়ালা হতে পারে। যার কারণে সময় পেলেই আমি এখানে এসে নিজেকে ধন্য মনে করি।

মাহফিলে আখেরী মুনাজাতের পূর্বে বালাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর সিনিয়র নায়েবে আমীর ও হযরত পীর ছাহেব কেবলার বড় ছাহেবজাদা আলহাজ¦ হযরত মাওলানা শাহ্ আবু নছর নেছারুদ্দীন আহমদ হুসাইন (মা. জি. আ.) বলেছেন- স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তকে অনৈসলামিক কর্মকান্ডের আমরা ইতোপূর্বে বিরোধিতা করেছিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবীর প্রতি সম্মান দেখিয়ে মারাত্মক ইসলাম বিরোধী দুইটি বই ইতোমধ্যে বাতিল করায় আমাদের অরাজনৈতিক সংগঠণের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি আমরা আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পুরো শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকগুলি পুনরায় রিভিউ করাইয়া সকল ইসলাম বিরোধী চক্রান্তকে বাতিল করে ভবিষ্যত প্রজন্মকে ধর্মীয় জ্ঞানে উজ্জিবীত নৈতিক গুণাবলি সম্পন্ন সুনাগরিক গঠণে ভূমিকা রাখবেন। এছাড়াও শিক্ষা বিষয়কে এসএসসি ও এইচএসসিতে কেন্দ্রীয় পরীক্ষার অন্তর্ভুক্ত করে সকলের জন্য ধর্মীয় জ্ঞান লাভের সুযোগ সৃষ্টির আহবান জানান। সর্বোপরি তিনি আহমদিয়া মুসলিম জামাত নামে কাদিয়ানীদেরকে রাষ্ট্রীয় ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবী জানিয়ে বলেন মুসলমান নাম নিয়ে নবীকে অবমাননা করা কুফরী সুতরাং তাদেরকে এই বাংলাদেশ থেকে অবাঞ্চিত করা হোক।

মাহফিলে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পিরোজপুর জেলা সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এ. কে. এম. এ. আউয়াল, পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এস. এম. শাহজাদা, পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান, পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান, নেছারাবাদ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুব উল্লাহ মজুমদার, থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস. এম. মুইদুল ইসলাম মুহিত, স্বরূপকাঠি পৌর মেয়র জি এম কবির প্রমূখ।

আখেরী মুনাজাতে প্রায় ৩ বর্গকিলোমিটার স্থান জুড়ে সমবেত প্রায় বিশ লক্ষাধিক লোকের বিগত জীবনের গোনাহ মাফ চেয়ে আমীন আমীন ধ্বনিতে ক্রন্দনের আওয়াজে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। হযরত পীর ছাহেব কেবলা সকলের নেক মকসুদ হাসিল, বিশ^ মুসলিমের কল্যাণ কামনা এবং রাষ্ট্রীয় শান্তি শৃংখলা ও সমৃদ্ধির জন্য মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করেন।