অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে :
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় তৃণমূলে শক্তিশালী আওয়ামীলীগ থাকলেও আন্দোলনের মাঠে নেই বিএনপি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ নেতা ও জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি নিজ নির্বাচনী এলাকা বরিশাল-১ আসনে তার নির্দেশনায় আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে আওয়ামীলীগের ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড, যুবলীগের ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও মহিলা আওয়ালীগ থেকে ইউনিয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ ও শ্রমিকলীগের উপজেলা কমিটি গঠন করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আগামী মে মাসে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে গঠনের জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই সম্মেলনে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি নিজে উপস্থিত থাকবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন করার প্রক্রিয়া থাকায় প্রতিদিনই উপজেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে দলীয় নেতা-কর্মীরা ভীর করছেন।
অন্যদিকে বিএনপি রাজপথে আওয়ামীলীগকে মোকাবেলা করার চেয়ে নিজের মধ্যে গ্রুপিং ও লবিং এ ব্যস্ত সময় পার করছে। বিএনপি’র কেন্দ্র ঘোষিত কোন কমসূচীই আগৈলঝাড়ায় কখনো পালিত হচ্ছেনা। বিএনপি চেয়ারর্পাসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০দফা কর্মসূচী পদযাত্রা, অনশন, বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচী কোথাও পালিত হয়নি। চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারী কবির হোসেন তালুকদারকে আহবায়ক, মোল্লা বশির আহাম্মেদ পান্নাকে সদস্য সচিব করে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বরিশাল (উত্তর) বিএনপি ঘোষণা করলে তোলপাড় শুরু হয়। এই কমিটিতে স্থান পাওয়া বেশীর ভাগ নেতাকর্মীরা হলেন সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপনের অনুসারী। এ নিয়ে ত্যাগী নেতারা বরিশাল বিএনপি কার্যালয়ে ঝাড়–মিছিলসহ একাধিবার প্রতিবাদ সভা করেছেন। পদ না পেয়ে বরিশালে আন্দোলন করছেন কেন্দ্রীয় বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান, আকন কুদ্দুসুর রহমান ও এ্যাড. কামরুল ইমলাম সজল অনুসারী নেতাকর্মীরা। এই উপজেলায় বিএনপি বর্তমানে চতুর্থধারায় বিভক্ত হয়ে পরেছে। ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম আফজাল হোসেন বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতাদের অর্থ দিয়ে কমিটি গঠনের অভিযোগ করেছেন। এবিষয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপি যুগ্ন-মহাসচিব হাবিব উন নবী সোহেলকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। চলতি মাসের ৪ তারিক বরিশাল জেলা বিএনপি’র কার্যালয়ে বসে অভিযোগ কারীদের সাক্ষাতকার গ্রহণ করেছেন তদন্তকারী কমিটি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-১ আসনে আওয়ামীলীগের একক প্রার্থী মন্ত্রী পদমর্যাদায় পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটির আহবায়ক ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি থাকলেও বিএনপি’র একাধিক প্রার্থী রয়েছে। আন্দোলন সংগ্রামে বিএনপি নেতাকর্মীদের রাস্তায় পাওয়া দূরের কথা, উপজেলা সদরে নেই বিএনপি’র কোন অফিস।
একাধিক আওয়ামীলীগ নেতা সাংবাদিকদের বলেন, ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ সরকার গঠনের পরে স্থানীয় এমপি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র দিক নির্দেশে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হয়েছে। এই সরকার ১০টাকা কেজিকে দরিদ্রদের চালসহ বিভিন্ন ভাতা দিচ্ছে। যা অন্য কোন সরকারের সময় ছিলনা। আওয়ামীলীগ সরকার জনগণের মৌলিক অধিকারগুলো সম্পূর্ণ বাস্তবায়নসহ এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। একারণে আগামী নির্বাচনে জনগণ অবশ্যই আওয়ামীলীগকে বিজয়ী করবে। বর্তমানে আওয়ামীলীগ পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি সুসংগঠিত। বিরোধী দলের কোন কর্মসূচী আগৈলঝাড়া উপজেলার কোথায়ও নেই।
বিএনপি নেতা আ. মান্নান আকন বলেন, বিভিন্ন দলের নেতাকর্মী নিয়ে বিএনপি গঠন করা হয়েছে। আমাদের আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপি আহ্বায়ক কবির হোসেন তালুকদার অসুস্থ, ১নং যুগ্ন আহবায়ক শিকদার হাফিজের বাড়ি গৌরনদী উপজেলায় আর সদস্য সচিব মোল্লা বশির আহাম্মেদ পান্না থাকেন ঢাকায়, এখর কাকে নিয়ে আমরা আন্দোলন করবো। সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান, আকন কুদ্দুসুর রহমান ও এ্যাড. গাজী কামরুল ইসলাম সজল এই চারজনে মিলে স্বাক্ষর দিয়ে কমিটি গঠন করলে আগৈলঝাড়ায় কেন্দ্র ঘোষিত আন্দোলন সংগ্রাম করা যেত।
উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মমতাজ বেগম বলেন, আগৈলঝাড়া উপজেলায় মহিলা আওয়ামীলীগ আগের চেয়ে সুসংগঠিত রয়েছে। আমরা সার্বক্ষণিক নির্বাচনী মাঠে থেকে নৌকাকে বিজয়ী করতে দলের জন্য কাজ করে যাব।
উপজেলা বিএনপি আহ্বায়ক কবির হোসেন তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, আগৈলঝাড়ায় কেন্দ্র ঘোষিত কোন কর্মসূচী পালন করতে কোন স্থানে আমরা দাঁড়াতেই পারিনা। আমাদের নেতাকর্মীরা হামলা-মামলার শিকার হচ্ছে। তাই আমরা আগৈলঝাড়ায় কোন কর্মসূচী পালন করতে না পেরে জেলায় পালন করছি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই কাজ করব।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ মো. লিটন সেরনিয়াবাত সাংবাদিকদের বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের রূপকার আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি’র দিক নির্দেশনায় উপজেলা আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের অধিকাংশ কমিটি ইতোমধ্যে গঠন করা হয়েছে। বাকি কমিটি শীঘ্রই গঠনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। একারণে আগৈলঝাড়ায় আওয়ামীলীগ পূর্বের অন্যান্য সময়ের চেয়ে বর্তমানে শক্তিশালী রয়েছে। এই সরকারের সময় আগৈলঝাড়ায় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মন্দির, মসজিদসহ রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। ২০০১সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময়ে তখনকার এমপি জহির উদ্দিন স্বপনের মদদে এই অঞ্চলের আওয়ামীলীগ সমর্থক পরিবারের উপর যে নির্যাতন হয়েছিল তা মানুষ ভুলে যায়নি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানুষ ভোটের মাধ্যমে তাদের যোগ্য জবাব দেবে।