ড. জাফর ইকবালকে নিয়ে বিতর্ক কতটা যৌক্তিক?

মাজহার মান্নান

মুক্তবুদ্ধির চর্চা বাংলাদেশে বহুবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। কিন্তু প্রতিবারই মুক্তবুদ্ধির আন্দোলন সেটা ওভারকাম করতে পেরেছে। বুদ্ধিমুক্তি আন্দোলনের অন্যতম অগ্রদূত কাজী আব্দুল ওদুদের সেই বিখ্যাত লাইনগুলো আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় মুক্তবুদ্ধির চর্চা ছাড়া একটি বিজ্ঞানমনোষ্ক জাতি কখনোই তৈরি হতে পারে না। তার উক্তিটি ছিল এমন– ” জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আরষ্ঠ, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।” সমগ্র বিশ্ব আজ শিক্ষা, সংস্কৃতি আর প্রযুক্তিতে এগিয়ে গেছে। আমাদেরও পিছিয়ে থাকার কোন সুযোগ নেই। ড. জাফর ইকবালকে নিয়ে যেসব বিষয়ে বিতর্ক হচ্ছে গত কয়েকদিনে খুব ভালোভাবে সেটা বুঝার চেষ্টা করলাম। তবে ঢালাওভাবে তার সম্পর্কে বিভিন্ন মাধ্যমে যে কথাবার্তা চলছে সেটা কাম্য নয়। গঠনমূলক সমালোচনা যে কারও সম্পর্কে হতে পারে। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু সমালোচনার মাঝে এক্সট্রিমিজম কাম্য হতে পারে না। সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের একটি অধ্যায়ে কপি করার অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগ উঠা অস্বাভাবিক কিছু নয়। প্রশ্ন হল ড. জাফর ইকবাল সেটা অস্বীকার করেছেন কিনা? না, তিনি তা করেন নি। তিনি সংশোধন করে দেয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন। ডক্টর জাফর ইকবালের পরিচয় দিয়ে এখানে কলেবর বৃদ্ধি করতে চাই না, কারণ তার সম্পর্কে সবার কম বেশি ধারণা আছে। তবে জোর গলায় এতটুকু বলতে চাই শিশু কিশোরদের বিজ্ঞান মনোস্ক করার ক্ষেত্রে তিনি যে অবদান রেখে চলেছেন তা বাংলাদেশের খুব কম ব্যক্তিই পেরেছেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার লেখনী তাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের যে বিষয়গুলি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে সেই বিষয়ে কিছুটা ব্যখ্যায় যাবো। আমার যতটুকু মনে হয়েছে দুটি বিষয় নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সেগুলির একটি হল প্লাজারিজম আর অন্যটি হল বিবর্তনবাদ।  এ দুটি বিষয়ে নানা ধরণের ব্যখ্যা দেয়া হচ্ছে। ব্যাখ্যা যে কেউ দিতে পারে এবং সেটাতে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু যে ব্যখ্যা ভ্রান্ত ধারণার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে সেই ব্যখ্যা গ্রহনযোগ্য হয় না।

এজন্য ব্যখ্যার দুটি ধরণ রয়েছে — ১. লৌকিক ব্যাখ্যা ২. বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। লৌকিক ব্যাখ্যা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার বিপরীত। এ ধরণের ব্যাখ্যায় কোন কার্যকারন সম্পর্ক থাকে না এবং এ ধরণের ব্যাখ্যা গড়ে উঠে অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার আর ভ্রান্ত ধারণার উপর ভিত্তি করে। অন্যদিকে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সর্বজনবিদিত হয় এবং এটি কার্যকারন নিয়মের উপর প্রতিষ্ঠিত। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার আবার তিনটি ধরণ আছে। ১. বিশ্লেষণ ২. শৃঙ্খলযোজন ৩. অন্তর্ভূক্তি। বিশ্লেষণে মিশ্র কার্যের কারণ গুলিকে পৃথকভাবে দেখানো হয়। শৃঙ্খলযোজনের মাধ্যমে কার্য ও তার দূরবর্তী কারণের মধ্যে যে ফ্যাক্টর গুলি থাকে সেগুলি আবিস্কার করা হয়। আর অন্তর্ভূক্তিতে কম ব্যাপক নিয়মকে বেশি ব্যাপক নিয়মের অধীনে এনে ব্যাখ্যা দেয়া হয়।  যাহোক প্লাজারিজম এবং বিবর্তনবাদ নিয়ে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার চেয়ে লৌকিক ব্যাখ্যাই বেশি দৃশ্যমান। মনে রাখতে হবে লৌকিক ব্যাখ্যায় বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ার সমুহ সম্ভাবনা থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে সেটা লৌকিক ব্যাখ্যার নেতিবাচক দিকটিই প্রকাশ পেয়েছে। যে জীবনে ডারউইনের নাম শোনেনি সেও ডারউইনের বিবর্তনবাদ নিয়ে মন্তব্য করছে। যে যা খুশি তাই করছে। কিন্তু বিজ্ঞ জনের ব্যাখ্যা অবশ্যই আমলে নিতে হবে। প্রশ্ন হল বাংলাদেশে বিজ্ঞ জনের শ্রেণিকরণ করাটাও কঠিন হয়ে পড়েছে। বুদ্ধিজীবিরা কোন সুনির্দিষ্ট দলের বা মতের হয়ে যখন কোন ব্যাখ্যা দেন তখন সেটা সমগ্রকে না বুঝিয়ে অংশকে নির্দেশ করে। সাধারণ মানুষ তাদের ব্যাখ্যায় দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। যাহোক প্লাজারিজম নিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করবো। প্লাজারিজম আসলে কোন কিছুকে নকল বা কপি করা বুঝায়। প্লাজারিজমের ইতিহাস উপমহাদেশে নতুন কিছু নয়। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার শিক্ষা প্রবন্ধে দুঃখ করে বলেছেন, উপমহাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বেশির ভাগই ধার করা। অর্থাৎ ধার করা জ্ঞানের উপর অধিক নির্ভরশীল হওয়াতে আমাদের শিক্ষায় দুর্বলতা বরাবরই ছিল। ধার করা দোষের কিছু নয়, কিন্তু সেটার সাথে নিজস্ব গবেষনার সংমিশ্রণ থাকতে হবে। সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইতে একটি অধ্যায়ে কিছু ডাটা ধার করা হয়েছে, কিন্তু নিজস্ব গবেষণাটুকু সেখানে ঠাঁই পায় নি। এক্ষেত্রে ডক্টর জাফর ইকবালের দায় এড়িয়ে যাওয়ার খুব একটা সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। নগন্য কোন লেখক প্লাজারিজমে অভিযুক্ত হলে এত হৈ চৈ হত না। জাফর ইকবাল বলে কথা। যাহোক পাঠ্য বই রচনায় দুর্বলতা আমাদের নতুন কিছু নয়। এর আগেও অনেক পাঠ্য বইতে বানান ভুল সহ নানা অসঙ্গতি দেখা গেছে। সেটা নিয়েও হৈ চৈ হয়েছে। ইতিহাস পাঠ্য বইতে ইতিহাসকে বিকৃত করার প্রচেষ্টাও দেখা গেছে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বল দিক গুলি নিয়ে তেমন হৈ চৈ শোনা না গেলেও ডক্টর জাফর ইকবালের বিষয়টি নিয়ে মাতামাতি চলছে। এর পিছনে যে কোন কারণ নেই সেটা বলা যাবে না। জাফর ইকবালের হাজারো ভাল কাজগুলিকে আমরা মুহূর্তে ভুলে গেলাম।  সব কিছুর দায় শুধু তার উপরে কেন দেয়া হচ্ছে? তিনি কি একাই সব? নতুন শিক্ষাক্রম হল। নতুন পাঠ্য বই রচিত হচ্ছে। প্রথমেই শতভাগ বিশুদ্ধ বই রচনা করা যাবে এমনটি ভাবা কি ঠিক? তবে তো বই ইডিট করার প্রচলন থাকতো না। আমরাদের বড় সমস্যা হল আমরা সব কিছুতে অস্থির হয়ে উঠি। কোন কিছুর বিচার বিশ্লেষণ না করেই চিলের পিছনে দৌড়াতে থাকি। হুজুগে বাঙালি কথাটির প্রচলনতো আছেই। আমাদের সবার মাঝে আরেকটি ধারণা আছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মানে তারা জ্ঞানী, পন্ডিত এবং তাদের দ্বারাই পুস্তক রচনা করলে সেটা শ্রেষ্ট হবে। আমিও সেটা বিশ্বাস করতে চাই। কিন্তু সেই মানের অধ্যাপক দেশে কয়জন আছেন? দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরাও এখন লেজুরবৃত্তি করে। পদ পদবীর জন্য তারা মরিয়া। বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকদের যে মানের গবেষণা থাকার কথা সেটা কোথায়। এ বিষয়ে কেন তুমুল বিতর্ক হয় না। তরকারি কুটায় দোষ থাকলে সেটাতো আর রান্নায় সারবে না। যাহোক প্লাজারিজম বন্ধে দেশের যে প্রচলিত আইন আছে এবং আদালতের নির্দেশনা আছে সেটা অবশ্যই মেনে চলতে হবে। একটি পাঠ্য বই প্রকাশের পূর্বে সেটাকে কয়েকটি ধাপে যাচাই বাছাই করতে হয়। বারবার যাচাই বাছাইয়ের ফলে অসঙ্গতি ধরা পড়ে। আর যারা বইয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকেন তাদের দায়তো অনেক বেশি। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি বড় দুর্বলতা হল ঘন ঘন সিলেবাস ও পাঠ্য পুস্তক পরিবর্তন করা। একটি মানসম্মত স্থায়ী কারিকুলাম খুব বেশি প্রয়োজন। কাজেই ডক্টর জাফর ইকবালকে এককভাবে দায়ী না করে পুরো সিস্টেমটির সংশোধন প্রয়োজন। দ্বিতীয় বিতর্কটি তৈরি হয়েছে বিবর্তনবাদ নিয়ে। বিবর্তনবাদ একটি জটিল প্রকৃতিবাদ মতবাদ। এ বিষয়ে কিছু বলার চেষ্টা করবো। কিন্তু তার আগে কিছু বিষয় পরিস্কার করা দরকার।

ধর্ম ও বিজ্ঞান জ্ঞানের দুটি বৃহৎ শাখা। ধর্ম নিয়ে যেমন ব্যাপক গবেষণার সুযোগ আছে,  তেমনি বিজ্ঞান নিয়েও প্রচুর গবেষণার দরকার আছে। ইসলাম ধর্ম ও বিজ্ঞান কখনোই একটি অন্যটির বিপরীত নয়। ইসলাম ধর্ম বিজ্ঞান চর্চাকে অনুমোদন করে। আমাদের রাসুল নিজে বলেছেন জ্ঞান অর্জনের জন্য সুদুর চীনেও যেতে হবে। বিজ্ঞানের উচ্চতর সকল আবিস্কার আজ একটি সুন্দর পৃথিবী আমাদের উপহার দিয়েছে। তাই বিজ্ঞানকে ইগনোর করার কোন সুযোগ নেই। বিবর্তনবাদ বিজ্ঞানের একটি অন্যতম মতবাদ। আর এই মতবাদটি নতুন কিছুই নয়। বিবর্তনবাদ নিয়ে অধ্যয়ন করার সুযোগ আমার হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনশাস্ত্রে অধ্যয়ন করার সময় ডারউইনের ” অরিজিন অব স্পিস’ মূল বইটি পড়ার সুযোগ হয়েছে। খুব দরদ দিয়ে বইটি পড়েছি এবং তত্বটি বুঝার চেষ্টা করেছি। বিবর্তনবাদ মতবাদটি একটি জটিল মতবাদ এবং এটিকে পড়ানোর জন্য একটি লেবেল মেইনটেন করতে হয়। আমি অনার্স থার্ড ইয়ারে বিবর্তনবাদ পড়েছি। সপ্তম শ্রেণিতে বিবর্তনবাদ মতবাদটি কতটুকু উপযুক্ত সেটা ভাবনার বিষয়। তাছাড়া যারা পড়াবেন তাদের বিবর্তনবাদ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। প্রায়ই শোনা যায় ডারউইন বলেছেন, বানর থেকে মানুষের সৃষ্টি। আর এই কথা শোনার পর আমরা যারা ইসলাম ধর্মের অনুসারী আমাদের আঁতে ঘা লাগে। কিন্তু ডারউইনের তত্বটির ব্যাখায় ভ্রান্তি দৃশ্যমান। তিনি কোথাও এক লাইনে বলেন নি যে বানর থেকে মানুষের সৃষ্টি। অন্তত আমি তার মূল বইটি পড়ে তা পাই নি। তাছাড়া বিবর্তনবাদ তত্বটির উদ্ভাবক ডারউইন নন। আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে এ্যারিস্টটল জীব দেহের জীনগত পরিবর্তনের কথা বলেছিলেন। তিনি অবশ্য বিবর্তন কথাটি উল্লেখ করেন নি। পরবর্তীতে হার্বাট স্পেন্সার বিবর্তন শব্দটি ব্যবহার করেন। ডারউইন এই মতবাদটিকে আরো পূর্ণতা দেন। এই মতবাদটির মূল কথা হচ্ছে “” যোগ্যতমের বেঁচে / টিকে থাকার অধিকার”। প্রাণী জগতের ক্রমবিকাশ এক জটিল প্রক্রিয়া আর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। এই জটিল প্রক্রিয়ায় প্রাণীর জিনগত পরিবর্তন হয়ে থাকে। আর এটি গবেষণার মাধ্যমে প্রমানিত। তবে এই জীনগত পরিবর্তন তৎক্ষনাত কোন বিষয় নয়। শত শত বছরের একটি বিষয়। জীবের জীনগত এই পরিবর্তন স্রষ্টার এক রহস্যময় সৃষ্টি। এর সাথে ধর্মের বিরোধ খোঁজার সুযোগ দেখি না। বিবর্তনবাদ নিয়ে মুসলিম চিন্তাবিদদের বক্তব্যও পাওয়া যায়। ডারউইন তার অরিজিন অব স্পিসিশ বইটি লিখেন ১৮৫৯ সালে। এরও অনেক আগে ইরাকের একজন মুসলিম চিন্তাবিদ আল জাহিজ প্রাকৃতিক নির্বাচনের কথা বলেছিলেন। ধর্ম, বিজ্ঞান, দর্শন আর ভুগোল নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। বাসরা শহরে এ বিতর্ক বেশি চলতো। আল জাহিজ বলেন, টিকে থাকার জন্য প্রাণীদের লড়াই করতে হয়। লড়াই করতে হয় তাদের খাদ্যের জন্য। লড়াই করতে হয় তাদের প্রজননের জন্য। নিজেদের বেঁচে থাকা নিশ্চিত করতে গিয়ে পরিবেশের নানা প্রক্রিয়ায় প্রাণীরা নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য ধারণ করে এবং এভাবেই তাদের জীনগত পরিবর্তন হয়। আর জীনগত এই পরিবর্তন চলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে। বিজ্ঞানের বহু বড় আবিস্কার বাধার সম্মুখীন হয়েছে। অনেক বিজ্ঞানীর প্রানও হারাতে হয়েছে। গ্যালিলিওকে তার মতবাদের জন্য মৃতদন্ড ঘোষনা করা হয়েছিলো। সৌভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। কিন্ত পরবর্তীতে গ্যালিলিওর মতবাদ সঠিক বলে প্রমেনিত হয়েছে। ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের কোন বিরোধ নেই।  তবে ধর্মীয় গোড়ামীর সাথে বিজ্ঞানের বিরোধ দৃশ্যমান। যাহোক, আমরা ইসলাম ধর্ম অনুসরন করি। ধর্মীয় অনুশাসন আমাদের জীবনকে সুন্দর করে। আবার বিজ্ঞানের নব নব আবিস্কার আমাদের সৃষ্টি রহস্যকে জানতে ও বুঝতে সহায়তা করে। ডক্টর জাফর ইকবালকে নিয়ে যে ডামাডোল চলছে তা মোটেও কাম্য নয়।

একজন সৃষ্টিশীল মানুষকে এভাবে বিতর্কিত করলে সে আর নব উদ্যোমে কাজ করার অনুপ্রেরণা পাবেন না। তাকে নিয়ে বিতর্কের অবসান হওয়া উচিত। কোথাও গলদ থাকলে সেটা সারাতে হবে। একটি কথা মনে রাখতে হবে ডক্টর জাফর ইকবাল আমাদের সম্পদ, তিনি আমাদের গর্ব। তার ভুল থাকতে পারে। কিন্তু সেই ভুলকে রংচং দিয়ে রাজনীতিকীকরন মোটেও কাম্য নয়। তার মেধা আমাদের প্রয়োজন। তার সৃজনক্ষমতা আমাদের দরকার। স্টিফেন হকিং এর মেধাকে কাজে লাগানোর জন্য ইস এস সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে বছরের পর বছর ধরে। আমাদের দেশে সেই ধরণের পৃষ্ঠপোষকতার এখনও চরম ঘাটতি রয়েছে। আমরা সব কিছুর মাঝে রাজনীতি খুঁজি আর এটা আমাদের একটি বড় সংকট। ডক্টর জাফর ইকবালের বড় ভাই হুমায়ন আহমেদ দেশের বড় সম্পদ ছিলেন। সাহিত্যের এক নবমাত্রিক ধারা তিনি চালু করেছিলেন। তিনি ছিলেন চরিত্রায়নের জাদুকর। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে তার সাহিত্য কর্মকে সেভাবে মূল্যায়ন করার তেমন নজীর চোখে পড়ে না।একজন  হুমায়ন আহমেদ,  একজন জাফর ইকবাল কালে ভদ্রে জন্মে। গুজব ছড়ানোর কালচার আমাদের পুরোনো একটি বিষয়। আমরা গুজবে কান দিতে খুব স্বস্তি অনুভব করি। কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখি যে এসব গুজবের পিছনে থাকে বিশেষ কোন হীন স্বার্থ। যাহোক ডক্টর জাফর ইকবালকে যতই সমালোচনা করা হোক না কেন তিনি অনেকটাই অবিচল আছেন। তিনি জানেন যে কাজ করতে গেলে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। তাই সমালোচনাকে খুব একটা আমলে তিনি নেন না। ডক্টর জাফর ইকবাল আপাদমস্তক একজন শিক্ষক এবং গবেষক। শিক্ষা সংস্কারে তার বহুমাত্রিক অবদান রয়েছে সেগুলি আমরা ভুলে গেলাম কি করে! বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার থেকেছেন সব সময়। শিক্ষার্থীদের অধিকারকে তিনি সব সময় অগ্রাধিকার দিয়েছেন এবং সব সময় তাদের পাশে থেকেছেন। ডক্টর জাফর ইকবাল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। তার দেশপ্রেম তাকে সবার মাঝে জনপ্রিয় করেছে। কিশোর কিশোরীদের তিনি নব নব স্বপ্ন বুনতে শিখিয়েছেন। বিজ্ঞানের জটিল বিষয় গুলিকে শিশু কিশোরদের কাছে সহজ ও সাবলীলভাবে উপস্থাপন করেছেন। তবে অনেক ভাল কাজ করেছেন বলে যে তাকে নিয়ে বিতর্ক করা যাবে না এমনটি নয়। তাকে নিয়েও বিতর্ক হতে পারে। তবে সে বিতর্ক হতে হবে যৌক্তিক ও গঠনমূলক। ডক্টর জাফর ইকবাল কোন রাজনৈতিক দল করেন না। মনে মনে কোন আদর্শের প্রতি বিশ্বাস থাকতে পারে। সেটা মোটেও অন্যায় নয়। কিন্তু তাকে নিয়ে খামাখা বিতর্কের ধুম্রজাল সৃষ্টি করে কোন মহল ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন। 

মাজহার মান্নান , কবি ও কলামিস্ট