‘ক্বওমি শিক্ষা বাধা হয়নি মোস্তাকিম জনির আয়ের পথে’

নাটোর প্রতিনিধি
শুধু স্বপ্ন দেখা নয়। স্বপ্নের সফল বাস্তবায়নও যে করা যায়Ñতা প্রমাণ করেছেন মোস্তাকিম জনি। তিনি দেশসেরা ক্বওমি মাদরাসার ছাত্র। অথচ লেখা-পড়ার ব্যস্ততা ছাপিয়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ের আয়ে সমৃদ্ধ জীবন শুরু করেছেন। পড়ার খরচও মিটছে এই আয়েই।
মোস্তাকিম জনি জানালেন, ক্বওমি মাদসারার শিক্ষা তার আয়ের পথে বাধা হয়নি। বরং সহায়ক হয়েছে অনলাইনে হালাল আয়ের। অথচ ক্বওমি শিক্ষা নিয়ে নানা ধরণের প্রতিকূলতার কথা সমাজে প্রচলিত। ক্বওমি শিক্ষা নিয়ে বর্তমান সমাজের আড়মোড়া সব ভাবনা দূর করে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফলতা দেখেছেন তিনি।
মোস্তাকিম জনির মতে, সবমিলিয়ে এখন তিনি সফল ফ্রিল্যান্সার। ফ্রিল্যান্সিংয়ের পাশাপাশি স্মার্ট বাংলাদেশের পদযাত্রায় তিনিও ডিজিটাল উদ্যোক্তা তৈরির কাজ শুরু করছেন। এরইমধ্যে তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশকিছু ডিজিটাল উদ্যোক্তাও তৈরি করেছেন।
সফল ফ্রিল্যান্সার ও ডিজিটাল উদ্যোক্তা মোস্তাকিম জনির সাথে কথা হয় গুরুদাসপুর পৌর সদরের রোজী মোজাম্মেল মহিলা কলেজের শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবে। সেখানে তিনি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হওয়ার মন্ত্র দিচ্ছিলেন। ফ্রিল্যান্সার ও ডিজিটাল এই উদ্যোক্তার বাড়ি নাটোরের সিংড়া উপজেলার নাছিয়ারকান্দি গ্রামে। অজপাড়া গ্রামের মোস্তাকিম জনি নানুপুর ওবাইদিয়া মাদরাসা থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়ে এখন চট্টগ্রামের হাটহাজারি মাদরাসায় মিসকাত শেষ বর্ষে অধ্যায়ন করছেন। পড়ার পাশাপাশি সময় পেলেই তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে আইটি জগতের ওয়েব ডিজাইন-ডেভোলপমেন্ট, ভিডিও ইডিটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, মোস্তাকিম জনির অনলাইনে আয় শুরু করেন ২০১৭ সালে। শুরু থেকেই ফ্রিল্যান্সিং জগতের আয় তাকে অনুপ্রাণিত করে। এখন সংসারের চাহিদা পূরণ করে তিনি নিজের লেখাপড়ার খরচের যোগানও দেন এই আয় থেকেই। সরকারি সহায়তা পেলে এই ডিজিটাল উদ্যোক্তা ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য বড় ইনস্টিটিউট গড়তে চান।
মোস্তাকিম জনি বলেন, ‘ডিজিটাল এয়ার’ নামের একটি আইটি প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন। ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কিওয়ার্ড রিসার্চ, এসইও, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, গুগল অ্যানালাইটিকের মতো প্রোগ্রামের ওপর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। দেশকে এগিয়ে নিতে আইটি সেক্টর অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
মোস্তাকিম জনির পিতা লোকমান হোসেন জানান, তিন ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার। তিনি পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন। সীমিত আয়ে তিন ছেলের লেখা-পড়া এবং সংসারের খরচ বহন করা কষ্টসাধ্য ছিল। ফ্রিল্যান্সিংয়ের আয়ে এখন তারা স্বাবলম্বী।
গুরুদাসপুরের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক সহকারী প্রোগ্রামার মো. শাহিনুর ইসলাম জানান, তার অফিসের হিসাবমতে, গুরুদাসপুর উপজেলার প্রায় ১ হাজারের বেশি শিক্ষিত যুবক ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে ব্যাপক পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন। তবে সরকারিভাবেও এসব ফ্রিল্যান্সারদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ চলছে।