শীত মানেই নানা পিঠেপুলির আয়োজন। আর সেই পিঠেপুলির মধ্যে গুড় একটি জরুরি অনুষঙ্গ। অনেকেই হয়তো জানেন না, গুড় স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। সাধারণত যে কোনো রোগ থেকে সুরক্ষা করতে গুড় শরীরকে শক্তি যোগায়। গুড় আসলে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়াম এবং ফসফরাস সমৃদ্ধ। এমনকি জিংক, তামা, থায়ামিন, রাইবোফ্লাভিন এবং নিয়াসিনের ট্রেস রয়েছে। এছাড়াও গুড়ে ভিটামিন বি, উদ্ভিদ প্রোটিন, ফাইটোকেমিক্যালস এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। বিশেষত শীতের সময় গুড় বিভিন্ন খাবারে ও পিঠায় ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ স্বাস্থ্যের উপকারিতায় গুড়ের রয়েছে আলাদা আবেদন। কিন্তু কেন খাবেন গুড়? শীতে গুড় খাওয়ার উপকারিতা জানাতেই আজকের এই আয়োজন:
সর্দি-কাশি দূর করতে
শীতে নিয়মিত গুড় খাওয়ার ফলে সর্দি-কাশি সেরে যায়। সর্দি হলে একটু গুড় খেয়ে দেখুন। স্বস্তি পাবেন। এছাড়া খেজুরের গুড় শুষ্ক কাশি ও ঠাণ্ডা দূর করতে সহায়তা করে, মিউকাস পরিষ্কার করে। এটা হাঁপানির মতো শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভোগা লোকদের জন্য ভালো ঘরোয়া প্রতিকার। এমনিতে শীতের শুষ্ক ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে, শরীর রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। এ কারণে এ সময় নিয়মিত গুড় খেলে পাকস্থলী, অন্ত্র, ফুসফুস এবং খাদ্যনালী সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। শীতের সময় কফ, গলাব্যথা, গলা ফোলা বা খুসখুসে কাশি হলে গুড় খেলে উপকার পাবেন। এ ছাড়া শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা যেমন- কফ, বুকে কফ জমাট বাঁধা, রক্ত প্রবাহে সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এই সময় গুড় খেলে আরও অনেক উপকার পাওয়া যায়।
রক্ত পরিষ্কার
গুড় শরীরের লিভার থেকে টক্সিন বের করে দেয়। যার ফলে রক্ত পরিষ্কার থাকে। শুধু তাই নয়, খেজুরের গুড়ে থাকা পুষ্টি উপাদান শরীরের কার্যক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালিত করতে সাহায্য করে। যা শীতকালের জন্য বিশেষ উপকারী। এতে থাকা খনিজ উপাদান লৌহ ও ম্যাগনেসিয়াম রক্ত উৎপাদনে ও স্নায়ুক্রিয়া সক্রিয় রাখতে ভূমিকা রাখে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
গুড় খাওয়ার ফলে রক্ত পরিষ্কার থাকে এবং কোষ্ঠ সাফ থাকে। এজন্য শরীরে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও গুড় খাওয়ার ফলে কফ, গলাব্যথা, ফোলা বা খুসখুস দূর হয়। শীতকালে ক্লান্তি দেখা দিলে বা শরীর দুর্বল লাগলে গুড় খাওয়া উপকারী। এর কার্বোহাইড্রেইট যৌগ যা সাধারণ চিনির তুলনায় খাবার দ্রুত হজম হতে সহায়তা করে। নিয়মিত এক টুকরা গুড় খাওয়া শক্তি বাড়ায় ও অনেকক্ষণ পেট ভরা রাখে। এতে শরীরের জন্য উপকারী প্রচুর পরিমাণে খনিজ, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, সেলেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও জিঙ্ক পাওয়া যায়। আয়ুর্বেদের মতে, গুড় নানারকম পেটের অসুখ সারাতেও ভূমিকা রাখে।
পিরিয়ডের ব্যথা কমায়
খেজুরের গুড় প্রাকৃতিক উপায়ে পিরিয়ডের ব্যথা কমায়। এটা দেহে এন্ডোরফিন্স নিঃসরণ করে যা শরীর ভালো রাখে ও পেটের ব্যথা কমায়।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে
গুড়ে সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম রয়েছে। এসব উপাদান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে কাজ করে। তাই গুড় খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। চিনির স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসাবে গুড়কে নেওয়া হয় এবং শীতে তা প্রচুর উপকারী। শীতে গুড় খাওয়ার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো- শরীরে উত্তাপ সৃষ্টি করে, যা দেহের তাপমাত্রা বজায় রাখে। গুড়ে আয়রন এবং ফসফরাস জাতীয় খনিজ রয়েছে। যা দেহে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সহায়তা করে।
ক্লান্তি নিরোধক
গুড় রক্ত পরিষ্কার করে, শ্বাসকষ্ট কমিয়ে, মেদ গলিয়ে শরীরকে ঝরঝরে রাখে। ফলে, কর্মক্ষমতা যেমন বাড়ে, তেমনই ক্লান্তিও কমে। শীতকালীন অসুস্থতা ও মসলাদার খাবারের কারণে নানা রকমের পেটের সমস্যা দেখা দেয়। খেজুরের গুড় হজমে সাহায্য করে ও পেটের ব্যথা কমায়। এটা হজম রস সক্রিয় করে এবং পেট পরিষ্কার রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। শরীর খুব ক্লান্ত হয়ে গেলে গরম দুধে গুড় মিশিয়ে খান। দুধ না খেতে চাইলে জলও নিতে পারেন। জল খেতে গুড় ছাড়াও পাতিলেবুর রস এবং বিট নুন মিশিয়ে নিতে পারেন। সমস্ত ক্লান্তি চলে যাবে। পেটে গ্যাসের সমস্যা দূরের জন্যও গুড় খাওয়া যায়। এক গ্লাস জল কিংবা দুধে প্রতিদিন গুড় মিশিয়ে খান। পেট ঠান্ডা থাকবে। গ্যাস দূর হবে।
শ্বাসকষ্ট কমায়
গুড় যেহেতু শরীর ঠাণ্ডা রাখে, সেহেতু আপনা থেকেই শ্বাসকষ্টে স্বস্তি মেলে। অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিসের মতো অসুখে রোজ গুড় খেলে উপকার পাওয়া যায়।
হজমশক্তি বাড়াতে
গুড় হজমশক্তি বাড়ায়। কারণ এটি পাকস্থলী উদ্দীপিত করে এবং হজম এনজাইমগুলোর মুক্তিতে সহায়তা করে। কোষ্ঠকাঠিন্য বা অন্য হজমজনিত সমস্যায় গুড় খুবই উপকারী।