কনকনে শীতের তীব্রতাই নষ্ট হচ্ছে বোরো বীজতলা

ইয়ানূর রহমান : তিন দিন ধরে যশোরে চলছে কনকনে শীত ও ঘন কুয়াশা।
বৃহস্পতিবার সূর্য উঁকি দিলেও সারাদেশের মধ্যে যশোরে সর্বনিম্ন
তাপমাত্রার (৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) রেকর্ড করা হয়েছে। শুক্রবার তাপমাত্রা
(১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) রেকর্ড করা হয়েছে। বৈরি আবহাওয়া কারণে ইরি-বোরো
ধানের বীজতলা নিয়ে চাষিরা দুশ্চিন্তায় পড়েছে। শৈত্যপ্রবাহে অনেক বোরো
ধানের চারায় হলুদ রঙ দেখা দিচ্ছে। অনেক চারা মারা গেছে। এই অবস্থায়
স্বপ্নের বোরো বীজতলা রক্ষায় সাদা পলিথিন এখন চাষিদের ভরসা হয়ে
দাঁড়িয়েছে। তারা পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঠান্ডাজনিত রোগ থেকে বোরো বীজতলা রক্ষায়
চাষিদের নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার যশোর জেলায় ইরি-বোরোর
বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৮ হাজার ২শ’হেক্টর জমিতে। কিন্তু বীজতলা
তৈরিতে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু বীজতলা ভরা মৌসুমে বৈরি আবহাওয়ার
কারণে চারা নষ্ট হওয়ায় চাষিরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।

বর্তমান আবহাওয়া ইরি-বোরো বীজতলার উপযোগী সময়। ফলে বীজতলা তৈরিতে চাষিদের
অনেক ব্যস্ততা বেড়েছে। তবে দাম সামান্য বেশি হলেও চাষিরা ভালো মানের বীজ
বপন করেছেন।  যেসব চাষি এখনো  বীজ কেনেননি তারা বীজের দোকান গুলোতে ভিড়
করছেন।

সদর উপজেলার চান্দুটিয়া গ্রামের চাষি শফিয়ার রহমান ওরফে শফি জানান,
উপযোগী সময়ে তিনি ৪ শতক জমিতে ইরি-বোরো বীজতলা দিয়েছেন। চারাও ভালো
হয়েছিলো। কিন্তু টানা কয়েকদিনের কনকনে ঠান্ডা ও কুয়াশার কারণে বীজতলা
আংশিক নষ্ট হচ্ছে। যে কারণে বীজতলা রক্ষার জন্য পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে
দেয়া হয়েছে। এতে শুকনো বীজতলা তৈরি করা সম্ভব হবে।

চৌগাছা উপজেলার হাকিমপুর গ্রামের আব্দুল আলিম জানান, রোপা আমন ধান কাটার
কিছু দিন পরই তিনি ইরি-বোরো ধানের বীজ বপন করেছিলেন। কিন্তু বৈরি
আবহাওয়ায় শুকনো বীজতলা তৈরি করতে পলিথিন দেয়া হয়েছে। যাতে করে কুয়াশার
আক্রমণ থেকে বীজ তলা রক্ষা করা সম্ভব হয়।

বাঘারপাড়া উপজেলার দরাজহাট গ্রামের মতিয়ার রহমান জানান, বৃষ্টির পানি না
থাকায় তিনি সেচের পানি ব্যবহার করে বীজতলা তৈরি করেছেন। স্বপ্নের বোরো
চারা বাঁচানোর জন্য তার মতো অনেক চাষি বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন।
এছাড়াও কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ মতো বীজতলা পরিচর্যা করা হচ্ছে।

চাষি গোলাম ছরোয়ার জানান, তার বোরো বীজতলা অনেকটা হলুদ হয়ে গেছে। এসব
চারা রোপনের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কিছু চারা ভালো আছে। সেগুলো রক্ষা করার
চেষ্টা করছেন। চারা কম হলে কিনে রোপন করতে হবে।

আরও কয়েকজন চাষি জানান, শুকনা বীজতলা তৈরিতে সাদা পলিথিনের বিকল্প কিছু
নেই। তাই  সাদা পলিথিন বিছিয়ে শীত ও কুয়াশা থেকে বোরো চারা রক্ষার
চেষ্টায় তারা ব্যস্ত রয়েছেন।

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক মঞ্জুরুল হক জানান,
শৈত্যপ্রবাহের কারণে বীজতলা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। চাষিদের পরামর্শে
তিনি বলেন ঠান্ডা ও কুয়াশা থেকে রক্ষার জন্য বীজতলা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে
ঢেকে দিতে হবে। সন্ধ্যার পর তা সরিয়ে দিতে হবে। সকাল ও দুপুরে পানি
ছিটিয়ে দিতে হবে। বিশেষ করে রাতের বেলা বীজতলায় ৩-৫ সেন্টিমিটার সেচ দিয়ে
খুব ভোরে পানি সরিয়ে দিলে চারার বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। শীতের কারণে  বোরো
ধানের বীজতলায় থ্রিপসের আক্রমণ দেখা দিলে পরিমান মতো পানিতে ম্যালাথিয়ন
মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।#